এইমাত্র পাওয়া

শিক্ষিত গভর্নিং বডি চায় শিক্ষা বোর্ড?

হাম্মদ হযরত আলী।।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জন্য শিক্ষিত ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি চায় শিক্ষা বোর্ড। স¤প্রতি একাধিক সংবাদ পত্রে আলোচিত এ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া গত কিছুদিন যাবৎ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে বিভিন্ন ফোরামে জোড়ালো আলোচনাও চলছে, এরই ধারাবাহিকতায় “শিক্ষা বোর্ড শিক্ষিত ম্যানজিং কমিটি’র চাহিদা প্রকাশ করেছে। মহান জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি এবং মাননীয় মন্ত্রীদের বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনায় স্থান পেয়েছে। জন প্রতিনিধি বা এমপি/মন্ত্রীগণ যে কোন বিষয়ে আলোচনা করতেই পারেন, তাতে দোষের কিছু নেই, কেননা তাদের আলোচনার দার সর্বাবস্থায় উম্মুক্ত, তারা আলোচনা পর্যালোচনা এবং স্টেক হোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতেই বিভিন্ন বিষয়ে পলিসি নির্ধারণ করেন। কিন্তু শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা তো জনপ্রতিনিধি নন, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, তাদের কাজ হলো নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকারের পলিসি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নাগরিকের সেবা প্রদান। তারা শিক্ষিত গভর্নিং বডি চাইবেন, এধরণের উদ্ভট দাবী, প্রস্তাব বা সুপারিশ কোনটাই প্রত্যাশিত নয়।

কেননা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির অধিকাংশ সদস্য গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই নির্বাচিত হয়ে থাকেন। কমিটি গঠন ১৯৭৭ বা ২০০৯ উভয় নীতিমালাতেই একই ধরনের বিধি রয়েছে, এতে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন শর্ত উল্লেখ নেই। ভবিষ্যতে নতুন বিধান করা হলে সেখানেও গনতান্ত্রিক পথে সদস্য নির্বাচনের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে এবং বর্তমান বিধানের অধিকাংশ ধারা বহাল থাকবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে মহান জাতীয় সংসদের সদস্য পদে নির্বাচনের জন্য যে,সমস্ত যোগ্যতার বর্ণনা করা আছে তাতে কোথাও কোন প্রকার শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা উল্লেখ নেই। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সিটিকর্পোরেশনের নির্বাচন সহ কোন ক্ষেত্রেই নির্বাচনের জন্য প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন শর্ত নাই। তাহলে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য শিক্ষিত পরিচালনা কমিটির দাবিটি কি আদৌ যুক্তি সংগত?

বোর্ড কর্মকর্তাদের দাবী হলো অশিক্ষিত লোকেরা কমিটিতে এসে শিক্ষকদের অসম্মান করেন ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কাজকর্মের ব্যঘাত ঘটে। বোর্ড কর্মকর্তাদের এ দাবিটি আমরা যথার্থ মনে করিনা, কারন আমাদের জানামতে এযাবৎ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান বোর্ডের কাছে এধরনের কোন নালিশ বা অভিযোগ দিয়েছেন বলে আমরা শুনিনাই।

মোট কথা হলো পরিচালনা কমিটির অনৈতিক দাবী, পেশীশক্তির দাপট, সামাজিক প্রতিহিংসা, রাজনৈতিক কূটকৌশল ও আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় অনেক অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সাধারন শিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে অনাহুত, অনাকাংখিত চাপের মুখে অহরহ জ্বালা, যন্ত্রণা এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। যার প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা শিক্ষা বোর্ডের হাতে নেই। বর্নিত ঘটনাবলীর সাথে সম্পৃক্ত পরিচালনা কমিটির সদস্য বা সভাপতি গন অধিকাংশই শিক্ষিত এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ফলে শিক্ষিত কমিটি হলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ভাল হয়ে যাবে এধরণের আশাকরা দুরাশারই নামান্তর মাত্র।
আমি ইতিপুর্বে “বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির পদ্ধতি পরিবর্তন প্রয়োজন” শিরোনামে একটি মতামত লিখে ছিলাম, যা একাধিক অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডিতেও লেখাটি আপলোড করা আছে। সেখানে আমি যা বলতে চেয়েছি তা হলো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল, কলেক ও মাদরাসা) কর্মচারীদের এমপিও’র বরাদ্দ সহ প্রতিষ্ঠানের সকল ধরনের উন্নয়ন মঞ্জুরী প্রদান, এনটিআরসির সুপারিশের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা, তাদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাসহ সামগ্রিক বিষয়ে দেখভাল করেন, শিক্ষা অধিদপ্তর, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও প্রশাসনিক কাজে পদে পদে জবাবদিহি করতে করতে শিক্ষকদের নাকাল অবস্থা কিন্তু একাডেমিক বিষয়ে চলছে রাম রাজত্ব এখানে দেখার কেউ নেই। কোচিং, প্রাইভেট, শিক্ষকদের রাজনীতি আরো কত কি, যা সকলেরই জানা আছে, তাই এখানে আলোচনার প্রয়োজনবোধ করছি না।

তাই বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষিত কমিটির চাহিদা পেশ না করে একাডেমিক স্বীকৃতি প্রদান কারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে গুনগত মান সম্পন্ন শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিজস্ব বলয়ে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কার্যক্রম পরিদর্শন, পর্যবেক্ষণ, পরিবিক্ষন ও মূল্যায়নের কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ণ এবং বাস্তবায়নের সামগ্রিক দায় দায়িত্ব কিভাবে শিক্ষা বোর্ডের হাতে নেয়া যায় তার সুচিন্তিত মতামত ও সুপারিশ সরকারের নিকট পেশ করতে পারেন। এ প্রস্তাব গৃহীত হলে কাংক্ষিত সময়ের পুর্বেই বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ঈর্ষান্নিত সফলতার আশা করা যায়। আর্থিক ও প্রশাসনিক কর্তৃত্বহীন শিক্ষা বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত পরিচালনা কমিটি,বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার থাকবে এর কোন নৈতিক ভিত্তি নেই।তাই পরিচালনা কমিটির নিতিমালা সংশোধনের আগে কমিটি অনুমোদনের দায়িত্বটি বোর্ড বা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিবর্তে শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে ন্যস্তকরা জরুরি বলে আমরা মনেকরি।

যেহেতু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্ত আর্থিক দায়ভার এখন সরকার বহন করছেন, সেহেতু শুধুমাত্র বেসরকারি নামের অভিশাপের কারণে গভর্নিং বডি বা ম্যানেজিং কমিটির অধীনে রাম রাজত্বের ন্যায় বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা চলতে পারে না। শিক্ষা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রেখে শুধুমাত্র একাডেমিক বিষয়াদি দেখভাল ও সামাজিক সহযোগিতার জন্য প্রয়োজনে মনোনয়নের ভিত্তিতে শিক্ষিত ব্যক্তিদের নিয়ে পরিচালনা কমিটি গঠনের বিধিমালা প্রনয়ণ করা যেতে পারে, এবিষয়ে সার্বিক দায়, দায়িত্ব পালন করবেন শিক্ষা অধিদপ্তর।

যেহেতু বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য শিক্ষা বোর্ডের আর্থিক ও প্রশাসনিক কর্তৃত্ব নেই, সেহেতু শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত পরিচালনা কমিটির হাতে এ ক্ষমতা থাকার কোন যৌক্তিক কারণ বিদ্যমান নেই।
অতএব শিক্ষা বোর্ডের চাহিদা মোতাবেক শিক্ষিত পরিচালনা কমিটি নয় বরং সরাসরি শিক্ষা অধিদপ্তরের তত্ত¡াবধানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য বিকল্প পদ্ধতির ম্যানেজিং কমিটি/ গভর্নিং বডি বিধিমালা প্রনয়ণ করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০১৯ এর জেলা, উপজেলা শিক্ষা কমিটি গঠনের প্রস্তাব বা সুপারিশ বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। তবে এ প্রস্তাবের বেলায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত কমিটি গঠনের নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

লেখক:
শিক্ষক ও কলামিস্ট
মুহাম্মাদ হযরত আলী
নকলা শেরপুর


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.