অধ্যাপক মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ।।
বিশাল এ পৃথিবীতে আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিনের বিপুল অনুগ্রহ ভান্ডার শুধুই মানুষের কল্যাণের জন্য। তবে মাঝে-মধ্যে মহান আল্লাহ্র পরীক্ষা হিসেবে প্রকৃতিতে নেমে আসে বহুমুখী বিপর্যয়। সাম্প্রতিককালের ‘ডেঙ্গু’ নামের ব্যধি ও বন্যা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে মহান আল্লাহর বাণীর নিত্যতা। সুরা বাকারা ১৫৫ নম্বর আয়াতে আছে “আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো ভয়, ক্ষুধা, সম্পদহানী, প্রাণহানী, শস্যহানী দ্বারা…”।
সত্য বলতে কী! মহান আল্লাহর শ্রেষ্টতম সৃষ্টি মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে যায়, বেপরোয়া হয়ে ওঠে তখনই আল্লাহর গজব নেমে আসে শান্তির পৃথিবীতে, পবিত্র কুরআনের ভাষায়Ñ
“ভূমিতে ও পানিতে সব জায়গায়, লোকজন কুকাজে অশান্তি ছড়ায়
যেরূপ কাজ ওরা থাকে করিতে, আল্লাহ্ চান তার শাস্তি দিতে…….” (ক্যাানুবাদ, রূম: ৪১)।
বর্তমানে বর্ষার প্রভাবে দেশে চলছে বন্যার ন্যায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়। দেশব্যাপী বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক। বিরতিহীন বৃষ্টি ও উজানের পানি লাখ লাখ মানুষকে করেছে ‘পানিবন্দি’। বন্যার্ত মানুষজন এখন দিশেহারা ও অসহায়। এমন প্রাকৃতিক বিরূপতায় অনেক মানুষের সহনমাত্রা ছাড়িয়ে দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়া, পেটেরপীড়া, চর্মরোগ, জ্বর, সর্দি-কাশি, হাপানিসহ নানান জটিল রোগশোক। অন্যদিকে ঢাকায় বন্যা না থাকলেও জনজীবনে প্রভাব ফেলেছে ‘ডেঙ্গু’।
ডেঙ্গু ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। মশার বংশবৃদ্ধি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক নানান বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ মানুষের অপকর্ম। তাই মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর কিছু নিদর্শন দেখান, যেন মানুষের বোধোদয় ঘটে। তিনি বলেন “আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আযাবের) নিদর্শনসমূহ পাঠাই” (বনি ইসরাইল: ৫৯)।
এগুলোর পথধরেই মানুষ কিয়ামতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এপ্রসঙ্গে সতর্ক করে প্রিয়নবী (স.) বলেন “……..সে সময় তোমরা অপেক্ষা করো: রক্তিম বর্ণের ঝড়ের (এসিড বৃষ্টি) ভূ-কম্পনের, ভূমিধ্বসের, রূপ বিকৃতির (লিঙ্গ পরিবর্তন) পাথর বৃষ্টির এবং সূতোছেড়া (তাসবিহ্) দানার ন্যায় একটির পর একটি নিদর্শনসমূহের জন্য” (তিরমিযি)।
ডেঙ্গু বা কোনো রোগেই মু’মিন বান্দার হতাশ হওয়া উচিত নয়। কেননা, প্রিয়নবী (স.) বলেন “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ রোগ ও চিকিৎসা দু’ই পাঠিয়ে দেন….. সুতরাং চিকিৎসা গ্রহণ কর” (আবু দাউদ)। ইবনু আব্বাস (রা.) বর্ণিত ‘একদা ইব্রাহিম (আ.) জিজ্ঞেস করলেন: হে আমার প্রতিপালক রোগ কার পক্ষ থেকে? আল্লাহ্ বলেন “আমার পক্ষ থেকে”! জানতে চাইলেন ঔষধ কার পক্ষ থেকে? জবাব এলো “আমার পক্ষ থেকে” আবার জানতে চাইলেন তবে চিকিৎসক? জবাব এলো “চিকিৎসকের মাধ্যমে ঔষধ পাঠানো হয়….”।
আমাদেরকে বুঝতে হবে, আমাদের এই শরীর আমাদের নয়, এটা আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে কিছুদিনের জন্য। তাই ডেঙ্গুর ব্যাপারে হতাশার কারণ নেই, বরং মনে রাখতে হবে পবিত্র কুরআনের অভয়বাণী “আল্লাহ্র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না” (ইউসুফ: ৮৭)। মহান আল্লাহ্ কষ্ট দেওয়ার জন্য বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করবার জন্য মানুষকে সৃষ্টি করেননি। বরং রোগ-শোকের মাধ্যমে মু’মিন বান্দাকে পরীক্ষা করা হয়, এতে তার ঈমানিশক্তি বৃদ্ধি পায়। হাদিসে তো এ জন্যই জ্বরের মধ্যেও কল্যাণের বার্তা পাওয়া যায়। যেমন:
ক্স একদা প্রিয়নবী (স.) হযরত আবু হুরাইরাকে (রা.) সঙ্গে নিয়ে জ্বরের রোগী দেখতে যান। তিনি (স.) বলেন “সুসংবাদ গ্রহণ করো। আল্লাহ্ বলেন, ‘আমার আগুন দুনিয়াতে আমি আমার মু’মিন বান্দার ওপর প্রবল করি, যেন তা আখিরাতের আগুনের বিনিময় হয়ে যায়’” (তিরমিযি)।
ক্স ইবনু উমর (রা.) বর্ণিত অন্য এক হাদিসে আছে, প্রিয়নবী (স.) বলেন “জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে হয়। কাজেই তাকে পানি দিয়ে নিভাও”।
ক্স আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলতেন ‘রাসুল (স.) আমাদের নির্দেশ করতেন, আমরা যেন পানির সাহায্যে জ্বরকে ঠান্ডা করি’ (মুসলিম শরিফ)।
ডেঙ্গুর উৎপত্তি ও ডেঙ্গু সম্পৃক্ত কিছু তথ্য
“ “পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্রজাতির মশার মধ্যে এডিস এজিপ্টি ভয়ঙ্কর। পরিষ্কার পানিতে জন্ম নেয়া স্বল্পায়ুর এই ’অভিজাত’ এডিস মশা ডেঙ্গু ছাড়াও জিকা ও চিকনগুনিয়ার বাহক। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার প্রাদুর্ভাব বাড়ে। দুই দশক আগেও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই ভয়ংকর ’আবাসিক’ অতিক্ষুদ্র প্রাণীর নাম শোনেনি। কোথা থেকে এলো এই এডিস মশা? রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিটিউট এর (আইইডিসিআর)
প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায়, ডেঙ্গু জ্বর রোগটি প্রথম ১৯৫২ সালে আফ্রিকাতে দেখা যায়। পরবর্তীতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন- ভারত,শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার এবং ইন্দোনেশিয়াতে এটি বিস্তার লাভ করে। বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম এডিসবাহিত ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। এ দেশের চিকিত্সকদের কাছে অপরিচিত এ রোগের চিকিৎসা দিতে সেবার হিমশিম অবস্থা হয়েছিল। সে বছর মৃতের সংখ্যাও প্রায় শত ছুঁয়েছিল। পরের বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও সংখ্যা অনেক কমে আসে। ২০১৫ সালের পর ডেঙ্গু আবার বাড়তে থাকে। সে বছর আক্রান্ত হন ২৬৭৭ জন। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বাড়ে। ইতিহাসে ডেঙ্গু মহামারীর প্রথম তথ্য জানা যায় চীনে। খ্রিস্টপূর্ব ২৬৫-৪২০ অব্দে জিন সাম্রাজ্যের সময় এ রোগের প্রাদুর্ভাবের কথা জানা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও ডেঙ্গু বিভিন্ন দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। স্প্যানিশ ডেঙ্গু শব্দ এ রোগের নামকরণ হয়। যার অর্থ হাড়ভাঙা জ্বর। তবে স্পেনে শব্দটি এসেছে পূর্ব আফ্রিকার সোহাইলি আদিবাসীদের কাছ থেকে। তাদের বিশ্বাস ছিল ‘খারাপ আত্মার সংস্পর্শে হাড়গোড় ভাঙার ব্যথাঅলা’ এ জ্বর হয়।
জানা যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের গোলামদের যদি ডেঙ্গু জ্বর হতো তখন তাদের হাটার ভঙ্গিমা ডান্ডি নৌকার মত দেখা যেত, তা থেকে ডান্ডি জ্বর বলা হত, ধীরে ধীরে ডেঙ্গু নাম ধারণ করেছে। মশা নিয়ে একটি গবেষনাগ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯৭৯-৮০ সালে এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকা ডেঙ্গু মহামারিতে পতিত হয় তখন থেকেই বিষয়টি আলোচনায় আসে।
এনসাইক্লোপেডিয়া বলছে, ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনকারীরা আফ্রিকা থেকে মশার এই জাতকে সমুদ্র পার করে আমেরিকা ও এশিয়ায় নিয়ে আসেন বলে গবেষকদের ধারণা। বহুদিন ধরেই ‘পীত জ্বরের’ বাহক হিসেবে পরিচিত এই এডিস মশা। ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইউরিয়েল কির্টন ডেঙ্গু ও জিকার প্রাদুর্ভাবের জন্য নগরায়নের ধরনকেও দায়ী করেছেন।
তার মতে, গত সাত দশকে নগরায়নের হার ২০ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশ হওয়াও এডিস এজিপ্টির বিস্তার বাড়ার অন্যতম কারণ। বংশবৃদ্ধির জন্য এ মশা ফুলের টবের মতো ছোট ও বদ্ধ পাত্রে সহজেই ডিম পাড়তে পারে। ১৯৬২ সালে আমেরিকা মহাদেশের ১৮টি দেশ থেকে এডিস এজিপ্টিকে ‘নির্মূল’ করা হয়েছিল।
ডেঙ্গু মহামারীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য প্রথম বিবরণ পাওয়া যায় ১৭৭৯ ও ১৭৮০তে, যখন এক মহামারীর কবলে পড়েছিল এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকা। ১৯০৬ সালে এডিস মশার পরিবাহিতা সম্পর্কে সবাই নিশ্চিত হন, এবং ১৯০৭ সালে ভাইরাস ঘটিত রোগের মধ্যে ডেঙ্গু হয়ে ওঠে দ্বিতীয়। এই জ্বরের এই চরম রূপের বিবরণ ১৯৫৩ সালে প্রথম ফিলিপাইনে পাওয়া যায়; ১৯৭০-এ এটি শিশু মৃত্যুর এক প্রধান কারণ হয়ে ওঠে এবং আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর আমেরিকার ১০০টি দেশের প্রায় ২৫০ কোটি মানুষ ডেঙ্গুঝুঁকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তন, ভাইরাসের বিবর্তন, অপরিকল্পিত ও অত্যাধিক জনসংখ্যার নগরায়ন, অপর্যাপ্ত ও অস্বাস্থ্যকর বর্জ্য ও পানি ব্যবস্থাপনার কারণে ডেঙ্গু জ্বর বেড়েই চলেছে।
সংস্থাটির মতে, বছরে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে মৃত্যু হচ্ছে সাড়ে ১২ হাজার মানুষের। তবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার, এ তথ্য যতটা পরিসংখ্যাননির্ভর তার চেয়ে বেশি অনুমিতিনির্ভর। এদিকে পুরো দক্ষিণপূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অংশবিশেষে এ বছর ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গু জ্বরের কারণ অনুসন্ধান করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ক্ষেত্রে তাদের দু’টি মত রয়েছে। একটি মত মনে করছে, ডেঙ্গু ভাইরাসে অভিযোজন ঘটে ভিন্ন একটি উপ-স্ট্রেইন সৃষ্টি হওয়ার কারণে এটা ছড়িয়ে পড়ছে। কেননা, ভাইরাসের দেহে অভিযোজন ঘটলে মহামারীর শঙ্কা থাকে। অন্যরা মনে করছেন, এডিস মশার অতিপ্রজননই এ ক্ষেত্রে মূলশত্রু।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মুহূর্তে পাঁচটি ডেঙ্গু ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছে। এর মধ্যে দু’টি প্রায় শেষপর্যায়ে। তবে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া বিকল্প নেই”। (তথ্য ঋণ ও কৃতজ্ঞতা: দৈনিক ইত্তেফাক ২৮ জুলাই ২০১৯)
অন্যদিকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের শ্লোগান ঢ়ৎবাবহঃরড়হ রং নবঃবৎ ঃযধহ পঁৎব এ জন্যই যে জিনিসগুলোর কারণে মানুষের রোগ হয়, তা আগেই ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মানুষের রোগ-শোকের অন্যতম কারণ অবহেলা, অপরিচ্ছন্নতা, অলসতা ইত্যাদি। এ জন্যই প্রিয়নবীর (স.) মুনাজাত “হে আল্লাহ্! আমি তোমার কাছে অলসতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি”।
পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় এমন কাজ ইসলামে স্বীকৃত নয়। আমরা জানি, প্রিয়নবীর (স.) সুন্নাতগুলো স্বাস্থ্যসম্মত ও বিজ্ঞানভিত্তিক। কেউ যদি ঘুম থেকে জাগা, পানাহার, চালচলন, মলমূত্র ত্যাগসহ সবকিছু সুন্নাত অনুযায়ী সম্পাদন করেন, তবে তিনি বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। টয়লেট পেপার ব্যবহার, কাশি ও হাঁচি-হাই এর সময় নাক ঢেকে রাখা, মেসওয়াক করা, মশারি ব্যবহার, রাগ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক। তাছাড়া রোগ ছড়ানোর অন্যতম কারণ অপরিচ্ছন্নতা ও নোংরা পরিবেশ, আর প্রিয়নবীর (স.) শিক্ষা বলে “পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ”। দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটে মশার মাধ্যমে। তাই পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন যেমন জরুরি, তেমনি সাবধাণতার বিকল্প নেই এ কথাও সত্য। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মেনে চলতে হবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ ও জাতীয় গাইড লাইন।
ইসলাম সবসময় একটি সুস্থ-সক্ষম মানবগোষ্ঠীর ধারণা দেয়। মানুষের ‘হায়াৎ’ তথা জীবনকালের সঙ্গে ‘হিসাব’ বা জবাবদিহিতা ও ইবাদতের সঙ্গে সুস্থতার সম্পৃক্ততা সুনিবিড়। শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে নামাযের সামর্থ্য প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন “তোমরা আল্লাহ্কে স্মরণ কর, দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে” (নিসা: ১০৩)। সুস্থদেহ সুন্দর মনন ও সক্ষম মানবগোষ্ঠী বিনির্মাণে যথাযথ চিকিৎসা ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে পবিত্র-পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের কোনো বিকল্প নেই। তাই বর্তমানেও সব রোগের প্রতিকার, প্রতিরোধ সম্পর্কে আমরা সঠিক ধারণা পেতে পারি পবিত্র কুরআন থেকে। মহান আল্লাহ্ বলেন “আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করি, যা মু’মিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত” (বানি ইসরাইল: ৮২)।
সাম্প্রতিককালের বন্যা জনিত রোগ-শোকে বা ডেঙ্গুতে আতঙ্কিত না হয়ে বরং বিশ্বাস রাখা জরুরি, মহান আল্লাহ্র রহমতেই রোগ থেকে আরোগ্যলাভ করা সম্ভব। রোগের কোনো ক্ষমতা নেই কাউকে আক্রান্ত করবার। মহান আল্লাহ্ চাইলেই মানুষ রোগাক্রান্ত হয়, নতুবা নয়। এজন্যই দেখা যায়, রোগীর সংস্পর্শে গেলেও অনেকে রোগাক্রান্ত হন না। প্রিয়নবী (স.) বলেন “রোগ-ব্যধি (তার নিজের শক্তিতে) একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে লেগে যায় না” (মুসলিম শরিফ)। আবার হযরত মু’আজকে (রা.) দেওয়া প্রিয়নবীর (স.) নির্দেশসমূহের অন্যতম ছিল “…..কোনো এলাকায় যদি মহামারীর প্রাদূর্ভাব হয়, তবু তুমি সেখানেই অবস্থান করবে (পালিয়ে যাবে না)” (আহ্মাদ)। কেননা, ডেঙ্গু আতঙ্ক ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য নয় বরং ঈমানদারের মনে মুখের দৃঢ় বিশ্বাস মহান আল্লাহ্ই এ মহা বিপদ থেকে রক্ষাকারী ও একমাত্র উদ্ধারকারী।
পরিশেষে মুনাজাত, মহান আল্লাহ্ বাংলাদেশের মানুষকে ডেঙ্গুর যন্ত্রণা ও বিস্তার থেকে উদ্ধার করুন। পবিত্র কুরআনে আছে, মহান আল্লাহ্র পরিচয় প্রসঙ্গে হযরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন “ওয়া ইযা মারিয্তু ফাহুয়া ইয়াশ্ফিন” অর্থাৎ ‘যখন আমি অসুস্থ হই তখন তিনিই আমাকে সুস্থতা দান করেন’ (শু’আরা: ৮০)। অন্যদিকে মহান আল্লাহ্র শাহি দরবারে প্রিয়নবীর (স.) মুনাজাত ছিল “হে আল্লাহ্ আমি তোমার কাছে সুস্বাস্থ্য কামনা করি….” (বায়হাকি)।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ কাপাসিয়া গাজীপুর।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.