নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: ‘শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাবৃন্দ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও পদোন্নতি ও গ্রেড বিবেচনায় বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার চরম বৈষম্যের শিকার। সরকারি শিক্ষক কাঠামোতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছেন সরকারি কলেজের অধ্যাপকগণ যাদের সর্বোচ্চ গ্রেড-৪র্থ। অথচ একই সময়ে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ প্রথম গ্রেড পাচ্ছেন। শিক্ষা ক্যাডারের সকল স্তরে নিয়মিত পদোন্নতি, পদসৃজন এবং পদ আপগ্রেডেশন আটকে আছে। শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত কেউ কথা রাখেনি। রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রেখে কাঠামো তৈরি করা কথা থাকলেও সেটাও করা হয়নি। সব মিলিয়ে বৈষম্যের বেড়াজালে শিক্ষা ক্যাডার।
সোমবার (৬ অক্টোবর) জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত বিশ্ব শিক্ষক দিবস-২০২৫ ও সরকারি সাত কলেজ শিক্ষা ক্যাডারের স্বার্থ সংরক্ষণ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন যে, শিক্ষকতা পেশার দীপ্তি বাড়াতে হলে শিক্ষা ক্যাডারের বিদ্যমান বৈষম্যসমূহ দূর করতে হবে এবং শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য অনুযায়ী দীপ্তিমান শিক্ষক নিশ্চিত করতে হলে, শিক্ষকদের পেশাগত সর্বোচ্চ সুবিধাদী নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারের সকল স্তরে নিয়মিত পদোন্নতি, পদসৃজন এবং পদ আপগ্রেডেশন জরুরী ভিত্তিতে বাস্তবায়ন শিক্ষা ক্যাডারের প্রাণের দাবী।
আরও পড়ুন:
- আওয়ামী রেজিমের সুবিধাভোগীদের নেতৃত্বে চলছে ‘জাতীয়তাবাদী’ আসল বিসিএস শিক্ষা সমিতি!
- এনসিটিবিতে কামিয়েছেন টাকা, ডিআইতেও অর্থের নেশায় বুদ ডিডি ওয়াজকুরনী
- মিনিস্ট্রি অডিট খ্যাত ডিআইএ’র ‘ঘুষ’ বিতর্ক, আসলে কী ঘটেছিল?
- শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ: মাউশির ডিডি প্রিম রিজভীকে শোকজ
- বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের ড. খাদেমুল এখন ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ
- ‘খালেদা জিয়া’কে পুঁজি করে চাঁদাবাজি করা শিশির হতে চান এনসিটিবির চেয়ারম্যান
- মাউশির বিতর্কিত পরিচালক অধ্যাপক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে শোকজ
- মাউশির পরিচালক কাইয়ুম শিশিরের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ কাকলী মুখোপাধ্যায় বলেন,আমরা এক ধরনের বঞ্চনার মধ্যে আছি। আমাদের অনেক সহকর্মী প্রভাষক হিসেবেই অবসর নিয়েছেন। আজও সেই একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। কেউ কথা রাখেনি। আমাদের প্রাথমিকের শিক্ষকরা একজন ক্লার্ক বা অ্যাকাউন্টেন্টের চেয়ে কম বেতন পান। শিক্ষকের যেন ক্ষুধা নেই, সংসার নেই, সন্তান নেই। তিনি মহাপুরুষ, তাই তার কিছুই লাগবে না— এই ধারণাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর ইউটিসির এক মিটিংয়ে বলা হয়েছিল, সাত কলেজের স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রেখে কাঠামো তৈরি করা হবে। কিন্তু সেটি করা হয়নি। সেই কমিটিতে সাত কলেজের কোনো অধ্যক্ষ ছিলেন না। তখন থেকেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আজকের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকদের আন্দোলনকে বিকৃতভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। আমাদের সন্তানদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, আমরা ক্যাডার চাই, ঢাকা থাকতে চাই— যেন এটা অপরাধ। অথচ আমরা আমাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতির জন্য লড়ছি।
বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক তামান্না বেগম বলেন, রাষ্ট্র শিক্ষকদের কিছু দিতে গেলেই দরিদ্র হয়ে পড়ে। এমন ধারণা বদলানো দরকার। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও শিক্ষকরা এখনো প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। তবু সীমিত সুযোগ ও সামর্থ্য নিয়ে তারা জাতি গঠনের কাজ করে যাচ্ছেন নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের সঙ্গে।
নেতৃবৃন্দ বিশ্ব শিক্ষক দিবসের আলোচনায় উল্লেখ্য করেন যে, শিক্ষকতাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহামানব, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মহিমান্বিত করলেও বাংলাদেশে শিক্ষকদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান পৃথিবীর অনেক দেশ এমন কি পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের মধ্যে একেবারেই নিচের দিকে। শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাবৃন্দ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও পদোন্নতি ও গ্রেড বিবেচনায় বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার চরম বৈষম্যের শিকার। সরকারি শিক্ষক কাঠামোতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছেন সরকারি কলেজের অধ্যাপকগণ যাদের সর্বোচ্চ গ্রেড-৪র্থ। ঢাকা সেন্টাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ঐতিহ্যবাহী ঢাকার সরকারি সাত কলেজে নারী ও উচ্চশিক্ষার মারাত্মক সংকোচন, শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্যকে অন্ধকারের গহীনে নিপতিত করবে বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত কর্মকর্তবৃন্দ মতামত ব্যক্ত করেন।
অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ড. মো. মাসুদ রানা খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আজাদ খান ও দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, অধ্যাপকসহ শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন।
এসময় ড. মোঃ মাসুদ রানা খান বলেন, যে শিক্ষকদের মান মর্যাদা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বৃদ্ধি করতে হলে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে হবে, অন্যথায় মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আর আসবে না।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.
শিক্ষাবার্তা ডট কম অনলাইন নিউজ পোর্টাল
