রমেশ চন্দ্র সরকার।।
অনেক চড়াই উৎরাই ,রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নানা পটপরিবর্তনের মধ্যদিয়ে আগামি ২০২১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশ ৫০ বছরে পদার্পণ করবে। পালিত হবে সুবর্ন জয়ন্তী। জেনে ভালই লাগছে । ইতোমধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা ,জ্বালানি নিরাপত্তা ,যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে দেশটির একথা বলা যায়। এতকিছু অগ্রগতির পরেও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একি হাল। বিষয়টি নিয়ে ভাববার সময় এসেছে।
প্রিয় পাঠক,আজকে কলম ধরলাম বেসরকারি শিক্ষা জাতীয়করণ প্রসঙ্গে । ৪৮ বছর ধরে খুড়িয়ে চলা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার হাজারো রুপ। আছে সরকারি বেসরকারির মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য । বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যেও বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। এখনো সরকারের নজরদারির বাহিরে রয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (কিন্ডারগার্টেন,ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, কওমি শিক্ষা) । যে যার মতো কারিকুলাম তৈরী করে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে। হাজারো সমস্যায় জর্জরিত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এতো দিন নীতিহীন ছিল। রাষ্ট্রীয় দর্শন ও জাতীয় চাহিদা অনুযায়ী দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উপায় ও অবলম্বন হলো শিক্ষানীতি। সর্বশেষ ২০১০ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষানীতি চালু হলে জাতির কংলঙ্ক মোচন হয়।
কিন্তু এই শিক্ষানীতি কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে তা ভেবে দেখা দরকার। যদিও উল্লেখিত শিক্ষানীতির বাস্তবায়ন কাল ধরা হয়েছে (২০১০ – ২০১৮) পর্যন্ত। বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন শিক্ষানীতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রানের দাবী পূরণ হবে বলে ধারনা করা যায়। পৃথিবীর একাধিক দেশ ঘুরে এটা আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে,আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শ্রেণিকক্ষে আইসিটির ব্যবহার ও শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে দারুণ অগ্রগতি হলেও একথা বলা বাহুল্য আমাদের শিক্ষকগন এখনো আর্থিক দৈন্যতায় ভুগছে।
প্রিয় পাঠক,লেখাটি যখন লিখতে শুরু করি, তখন দেশে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৭,৮১০টি এবং কর্মরত শিক্ষক/কর্মচারীর সংখ্যা ৪,৯৬,৩৬২ জন। এর বাহিরে নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৭ সহস্রাধিক এবং কর্মরত শিক্ষক/কর্মচারী প্রায় ৮০ হাজার। শিক্ষা ব্যবস্থার বিরাট একটি অংশকে জাতীয়করণের বাহিরে রেখে শিক্ষার গুনগত মান কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা আমার বোধগম্য নয়। নিশ্চই বেসরকারি শিক্ষকদের প্রানের দাবিটি উপেক্ষিত হউক এটা সবার কাম্য নয়।
দেশে অনেক মেগা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় যা একটি নির্দিষ্ট এলাকায় প্রভাব ফেলে কিন্তু বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করলে সমগ্র জাতির উপর প্রভাব ফেলবে বৈকি। একথা সত্য যে,আমাদের শিক্ষার হার বেড়েছে, শিক্ষায় সহায়তা বাড়ানো হয়েছে (বৃত্তি, উপবৃত্তি, খাদ্য প্রদান ,বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক, অবৈতনিক শিক্ষা) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এসেছে ও বার্ষিক বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হলেও সিংহভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো জাতীয়করণের আওতার বাহিরে। তবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে বর্তমান সরকারের যে প্রচেষ্টা তা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সবার জন্য সুখকর হবে। এই হউক মোদের প্রত্যাশা।
লেখকঃ
(শিক্ষক ও সাংবাদিক)
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.