এইমাত্র পাওয়া

এসএসসি থেকে স্নাতক একই সনদে চাকরি করছেন দুই এমপিওভুক্ত শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ জাতীয় পরিচয় পত্র থেকে শুরু করে শিক্ষা জীবনের সকল সনদ এক ব্যক্তির। কিন্তু একই সনদ দিয়ে চাকরি করছেন দুই ব্যক্তি। দুইজনই এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শরীরচর্চা শিক্ষক। একজন চাকরি করছেন ১৩ বছর, অন্যজন ৮ বছর। একই সনদে চাকরি করা ঐ দুই ব্যক্তি হলেন, জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলাধীন ৪নং চর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) মোঃ রকিবুল ইসলাম যার ইনডেক্স নম্বর-১০৬৯৩৪৯, অপরজন হলেন, পাবনা জেলার আটঘড়িয়া উপজেলাধীন মতিঝিল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) মোঃ রকিবুল ইসলাম যার ইনডেক্স নম্বর- ১১৩৬৬৬৭। 

শিক্ষাবার্তা’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইসলামপুর উপজেলাধীন ৪নং চর উচ্চ বিদ্যালয় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) মোঃ রকিবুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানটিতে শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ১৬ জুলাই ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে। চাকরিতে নিয়োগকালীন সময়ে তিনি যে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং জাতীয় পরিচয় পত্র সরবরাহ করেছিলেন জাতীয় পরিচয় পত্রে নাম- মোঃ রাকিবুল ইসলাম, পিতা: আজগর আলী, পাবনার আটঘড়িয়া উপজেলার পারখিদিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পাস, যার রোল-আটঘরিয়া নম্বর-৪১, বিভাগ-২য় (রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড), নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৯৪ সনে এইচএসসি পাস, যার রোল বনপাড়া নম্বর ৩১২৮৮৫ বিভাগ ২য় (রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড) এবং ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বনপাড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ডিগ্রি (পাস) ২য় শ্রেণি এবং পাবনার পাকশী কলেজ অব ফিজিক্যাল এডুকেশন থেকে ২০১১ সনে ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন (বিপিএড) পাস করেন যার রোল নম্বর ৯০০৭১৬, রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ৯০০২৮০, বিভাগ ২য়। 

অন্যদিকে, পাবনা জেলার আটঘড়িয়া উপজেলাধীন মতিঝিল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) মোঃ রকিবুল ইসলাম স্কুলটিতে যোগদান করেন ১ নভেম্বর ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে। নিয়োগকালীন সময়ে নিয়োগ বোর্ডে এবং পরবর্তীতে এমপিওভুক্তির সময় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো কাগজপত্র, ইসলামপুর উপজেলাধীন ৪নং চর উচ্চ বিদ্যালয় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) মোঃ রকিবুল ইসলামের কাগজপত্রের হুবহু এক। জাতীয় পরিচয় পত্র, এসএসসি, এইচএসসি, ডিগ্রি (পাশ), এমনকি শরীরচর্চার বিপিএড ডিগ্রির সনদও হুবহু এক। 

আরও পড়ুনঃ

হুবহু একই সনদে দুই জন চাকরি করা এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে সরকারি বেতন-ভাতা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে এই সনদ প্রকৃত কার সেই অনুসন্ধানে নামে শিক্ষাবার্তা। শিক্ষাবার্তা’র অনুসন্ধানে দেখা যায়, জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলাধীন ৪নং চর উচ্চ বিদ্যালয় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) মোঃ রকিবুল ইসলাম (ইনডেক্স নম্বর-১০৬৯৩৪৯) তার প্রকৃত নাম মুক্তা মিয়া। জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর- ১৯৭৭৩৯১৬১৬৬৫০৮৯৭৭, পিতা- মোহাম্মদ ছাখাওয়াত হোসেন, মাতা- মোছাঃ জাহানারা বেগম, স্থায়ী এবং বর্তমান ঠিকানা, পোষ্ট অফিস- টনকী বাজার, উপজেলা- মেলান্দহ, জেলা জামালপুর। মূলত তিনি মোঃ রকিবুল ইসলামের সব সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার করে চাকরি করছেন এবং সরকারের সাথে প্রতারণা করে সরকারি অর্থ (এমপিও) আত্মসাৎ করছেন যা চলমান রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালে ৪ নং চর উচ্চ বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্কুলটি। এই স্কুলে আবেদন করেন পাবনার আটোয়ারীর বাসিন্দা মোঃ রাকিবুল ইসলাম। জাতীয় পরিচয় পত্র, শিক্ষক নিবন্ধন সনদ সহ সকল কাগজ পাবনার প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা দিয়ে সত্যায়িত করে আবেদন করেন। কিন্তু তাকে এই চাকরিতে ডাকা হয়নি। আর মোঃ রাকিবুলের এই একই আবেদনে এবং তার সনদে মোটা অংকের অর্থের মাধ্যমে চাকরি বাগিয়ে নেন তিনি। বিষয়টি টের পায়নি পাবনার রকিবুল ইসলাম। ২০১৬ সালে এনটিরসিএর মাধ্যমে রকিবুল ইসলাম নিয়োগ পান পাবনার আটঘড়িয়া উপজেলার মতিঝিল উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেই থেকে তিনি এখানে চাকরি করছেন।  

এ বিষয়ে ৪নং চর উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকাবাসী জানায়, শরীর চর্চা শিক্ষক রকিবুল ইসলাম যে আরেক জনের নাম, সার্টিফিকেট ও এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে এখানে চাকরি করছেন তা সবাই জানে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এমনকি প্রধান শিক্ষকও কোনো ব্যবস্থা নেননা। এটা নিয়ে যতবার আলাপ উঠে প্রধান শিক্ষক মুক্তা মিয়া (রকিবুল ইসলাম) এর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তা ধামাচাপা দিয়ে দেন। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ৪নং চর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) মোঃ রকিবুল ইসলাম (ইনডেক্স নম্বর-১০৬৯৩৪৯) যার প্রকৃত নাম মুক্তা মিয়া শিক্ষাবার্তা’কে বলেন,  আমি আগে কখনও শুনিনি। আমার সনদ দিয়ে অন্য কেউ চাকরি করছে আমার জানা নেই। আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী নাম মুক্তা মিয়া এটা কিভাবে এর কোনো সদুত্তর দেয়নি তিনি। 

জানতে চাইলে ৪নং চর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হাকিম শিক্ষাবার্তা’কে বলেন,  তিনি এখন স্কুলে আসছেন না। আমার কাছে ৩/৪ মাস আগে পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েছেন। ২০১২ সাল থেকে জালিয়াতি করে এমপিওভুক্ত হয়েছেন রেজিগনেশন দিলেই সব বৈধ হয়ে গেলো কি’না, জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি আগে হেড মাস্টার ছিলাম না। আগে কে কিভাবে নিয়োগ দিয়েছে তা আমার জানা নাই। ইএফটিতে তিনি বেতন তুলছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি তার কোনো তথ্য ইএফটিতে দেইনি। 

তবে স্কুলটির একাধিক সূত্র বলছে, মোঃ রকিবুল ইসলাম (ইনডেক্স নম্বর-১০৬৯৩৪৯) যার প্রকৃত নাম মুক্তা মিয়া তিনি ৩য় ধাপে ইফটিতে বেতন তুলছেন। 

আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র ও সকল সনদ ব্যবহার করে কিভাবে অন্য আরেকজন চাকরি করছেন জানতে চাইলে  পাবনা জেলার আটঘড়িয়া উপজেলাধীন মতিঝিল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) মোঃ রকিবুল ইসলাম (ইনডেক্স নম্বর- ১১৩৬৬৬৭) শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমি এই স্কুলটিতে আবেদন করেছিলাম। অথচ তারা আমাকে ডাকে নাই। সেই আমার আবেদনে ও আমার কাগজে চাকরি করছে মুক্তা মিয়া। বিষয়টি আমি গত মাসে জানতে পারি। সাথে সাথে আমি আমার প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে সব কাগজ নিয়ে লিখিত আবেদন করি। এমনকি আমি জামালপুর জেলা প্রশাসকের কাছেও লিখিত আবেদন দিয়েছি। আমাকে এই বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তারা ডাকলে আমি আমার কাগজপত্র নিয়ে হাজির হবো। আমি এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। স্কুলটির সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ সোহেল রানা শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আমরাও এই গত কয়েকদিন আগে বিষয়টি জানতে পেরে রকিবুলকে জিজ্ঞেস করি। সে বলে আমি সেখানে চাকরির আবেদন করেছিলাম আমাকে ডাকে নাই। কিন্তু আমার সনদ দিয়ে কেউ চাকরি করছে সেটা আমি জানতাম না। আমরা তাকে এই বিষয়ে দ্রুত লিখিত দিতে পরামর্শ দিয়েছি। তিনি লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। 

জানতে চাইলে আটঘড়িয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম শাজাহান আলীর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

জানতে চাইলে ইসলামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: গোলাম মোস্তফা শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিব।  প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামালপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস.এম.মোজাম্মেল হাসান শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, অফিসে অনেকগুলো অভিযোগ রয়েছে কিছু কিছু তদন্তও চলছে। এই অভিযোগের বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে দেখা হবে।  

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৭/০৫/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading