নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার নীলাখিয়া আর. জে পাইলট উচ্চ বিদালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ ১৩ জন শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ জালিয়াতি নিয়ে করা অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে তদন্তে আসা তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সামনেই দুই অভিযোগকারীকে বিদ্যালয়ের দরজা বন্ধ করে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে তদন্তে আসেন জামালপুর জেলা শিক্ষা অফিসের তিন কর্মকর্তা। কর্মকর্তারা অভিযোগকারী দুই ব্যক্তিকে তদন্ত কাজের জন্য বিদ্যালয়টিতে ডাকেন। তারা বিদ্যালয়ে আসলেই তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সামনেই তাদের বেধড়ক মারধর করেন। পরে তদন্ত না করেই তদন্তকারী কর্মকর্তারা বিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রীষ্টাব্দে নীলাখিয়া আর. জে পাইলট উচ্চ বিদালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীর অবৈধ নিয়োগ ও নিয়োগকারীদের অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অতিসত্তর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট চার ব্যক্তি মো. লাভলু মিয়া, রাজু আহমেদ, নুর মোহাম্মদ সিরাজ, এবং কে এম তৌহিদুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিয়ে মাউশি জামালপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করে। মাউশির নির্দেশ মোতাবেক জামালপুর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জেলা শিক্ষা অফিসের তিন কর্মকর্তা সহকারী পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম, সহকারী পরিদর্শক মোহাম্মদ শফিকুল আলম এবং সহকারী পরিদর্শক জাকারিয়া হোসেনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা মনোনয়ন করেন। তারা গতকাল বিদ্যালয়টিতে সরেজমিন তদন্ত করেন।
নিয়োগ জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া ঐ ১৩ শিক্ষক কর্মচারী হলেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মো. সুজাউদ্দিন, সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) এইচ এম সহিদুল আলম, সহকারী গ্রন্থাগারিক সিদ্দিকুর রহমান, সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) মোঃ শহিদুল্লাহ, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর সারজিনা আক্তার, ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর সোহেল আল মোজাহিদ এবং সহকারী শিক্ষক (ভাষা) মোস্তফা কামাল, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর আলপনা, নৈশ্য প্রহরী মোঃ রকিবুল হাসান, কম্পিউটার ডেমোনেস্ট্রেটর মোঃ মামুন সরকার, কম্পিউটার ল্যাব এসিস্ট্যান্ট মো; সুমন মিয়া ও সহকারী শিক্ষিকা মোছাঃ আলফাতুন্নাহার।
অভিযোগপত্র এবং শিক্ষাবার্তা’র হাতে থাকা নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র ঘেটে জানা গেছে, বিদ্যালয়টির শূন্য পদে একজন প্রধান শিক্ষক ও নব সৃষ্ট পদে একজন অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ১৭ আগস্ট ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দে। বিজ্ঞপ্তিতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন করতে বলা হয়। এরপর দুই দুইবার ডিজি প্রতিনিধি চেয়ে আবেদন করে দুই বারই জালিয়াতির অভিযোগে সেই নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এরপর ১০ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রতিষ্ঠান প্রধান ও এনটিারসিএ’র বহির্ভুত পদে নিয়োগের পরিপত্র জারি হয় যা কার্যকর হয় ২১ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে। এই পরিপত্র অনুযায়ী, স্কুলটিতে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি বাতিল হয়ে যায়। পরিপত্র অনুযায়ী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল হলেও নীলাখিয়া আর. জে পাইলট উচ্চ বিদালয় থেকে ০৮ ফ্রেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে একটি নোটিশ জারি করা হয়। নোটিশে আবেদনকারী প্রার্থীদের জানানো হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২১ জানুয়ারি ২০২৪ খ্রিঃ প্রকাশিত পরিপত্র মোতাবেক নীলাখিয়া আর. জে পাইলট উচ্চ বিদালয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রীঃ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক সুজাউদ্দিন নিজে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে সেই প্রশ্ন পত্রে পরীক্ষা দিয়ে প্রধান শিক্ষক হন। সর্বশেষ পরিপত্র অনুযায়ী বাতিল হওয়া বিজ্ঞপ্তির পরীক্ষা নেওয়া হলেও পরীক্ষায় মানবন্টন করা হয় আগের নিয়মে। সম্পূর্ণ অনিয়ম করে বাতিল হওয়া পরিপত্রে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ বাগিয়ে নেন সুজাউদ্দিন এবং এমপিওভুক্ত হন।
প্রধান শিক্ষক সুজাউদ্দিন বাতিল হওয়া যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত হন সেই একই বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত হন অফিস সহায়ক মো. আব্দুল করিম ওরফে মোঃ কামরুজ্জামান। নিয়োগ আবেদন ও এমপিওভুক্তিতে আব্দুল করিমের বয়স দেখানো হয় ১৫ মার্চ ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচনে দেওয়া মো. আব্দুল করিমের ভোটার আইডি কার্ড অনুযায়ী জন্ম তারিখ দেয়া হয় ০৬ জুন ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দ। নিয়োগে সময় আব্দুল করিমের বয়স জাল করে দেখানো হয়। শুধু তাই নয় তিনি যে অষ্টম শ্রেণির পাস সনদ দেখিয়েছেন সেটাও জাল করে বানানো। মো. আব্দুল করিম ওরফে মোঃ কামরুজ্জামান বড় ছেলে মোঃ হাসান মিয়া একই বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ে দেওয়া তথ্য মতে হাসানের বয়স ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৭। সম্পূর্ণ জাল জালিয়াতি করে তাকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহায়ক বাদে প্রতিষ্ঠানটির আরেক শিক্ষক (কম্পিউটার) এইচ এম সহিদুল আলম। ব্যানবেইসের তালিকা অনুযায়ী তার নিয়োগ দেখানো হয় ০১ মার্চ ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ২০০৮ খ্রি: থেকে ২০১২ খ্রি: পর্যন্ত ঢাকা তানজিম গার্মেন্টসে কর্মরত ছিলেন। ফলে তার পদ শূন্য ঘোষণা করে ২০১২ সালে ১১ ডিসেম্বর নিয়োগ পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। কোন নিয়োগ পরীক্ষা না নিয়েই ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে এইচ এম সহিদুল আলমকে নিয়োগ করা হয় এবং ১ জানুয়ারি ২০১৩ খ্রি: কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হন। তিনি যে কম্পিউটার সনদে এই পদে নিয়োগ পেয়েছেন সেই কম্পিউটার সনদ দেখানো হয়েছে বগুড়ার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (সিট) ফাউন্ডেশনের। সিট ফাউন্ডেশনে থেকে অর্জিত ডিপ্লোমা দিয়ে এমপিওভুক্তির কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে মাউশি। তবে সিট ফাউন্ডেশন থেকে যে সনদ দেখানো হয়েছে সেটাও কম্পিউটার দোকান থেকে বানানো। তার এই সনদ সিট ফাউন্ডেশনেও কোন অস্তিত্ব নেই। নিয়োগ জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া তিনি একজন জাল সনদধারী শিক্ষক।
প্রতিষ্ঠানটির সহকারী গ্রন্থাগারিক সিদ্দিকুর রহমান নিয়োগ পান ১৪ মে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি লাইব্রেরিয়ানের যে ডিপ্লোমা সনদ দেখিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন সেই সনদ নেওয়া বগুড়ার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (সিট) ফাউন্ডেশন থেকে। এই প্রতিষ্ঠানের সরকারি কোন অনুমোদন নেই। অর্থ্যাৎ তিনিও জাল সনদে চাকরি করছেন।
নিয়োগ জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া নীলাখিয়া আর. জে পাইলট উচ্চ বিদালয়ের আরেক শিক্ষক মোঃ শহিদুল্লাহ। তিনি ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক। নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র ঘেটে দেখা গেছে, ১৯ এপ্রিল ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করেন মোঃ মনিরুজ্জামান। তিনি নিয়োগ সুপারিশপ্রাপ্ত হন। কিন্তু তৎকালীন প্রতিষ্ঠান প্রধান দেলোয়ার হোসেন এবং সভাপতির চাহিদা মতে অর্থ দিতে না পারায় তাকে যোগদান করতে দেয়া হয়নি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ছয় মাসের মধ্যে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার বিধি থাকলে মনিরুজ্জামানের জায়গায় ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে মোঃ শহিদুল্লাহকে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং এমপিওভুক্ত করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নয় মাস পর তাকে যোগদান দেখানো হয়। তার নিয়োগ প্রক্রিয়া শতভাগ জাল জালিয়াতি করে করা হয়েছে।
স্কুলটির ট্রেড ইন্সট্রাক্টর সারজিনা আক্তার, ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর সোহেল আল মোজাহিদ এবং সহকারী শিক্ষক (ভাষা) মোস্তফা কামালের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখানো হয় ৩ জুলাই ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত কোন ম্যানেজিং কমিটি ছিল না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২২ অক্টোবর ২০১৫ খ্রিঃ পরিপত্র মোতাবেক প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারি প্রধান এবং কর্মচারী বাদে সকল নিয়োগ এনটিআরসিএর হাতে চলে যায়। শুধু মাত্র ২২ অক্টোবর ২০১৫ খ্রিঃ এর আগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে তারা নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ পান। প্রকৃত পক্ষে এই তিনজনের কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি। এনটিআরসিএর হাতে নিয়োগ চলে যাওয়ায় তড়িঘড়ি করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কাগজ পত্র তৈরি করে তাদের খাতা কলমে নিয়োগ দেখিয়ে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এই তিনজনের নিয়োগ দেখানো হয় ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ খ্রিঃ। ৩ জুলাই ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ দেখানো হলেও যোগদান ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ খ্রিঃ দেখানোর অর্থ্য হচ্ছে বেকডেটে নিয়োগ দেখানো। ব্যানবেইসের তালিকায় তার প্রমাণ মেলে।
এছাড়াও স্কুলটির নৈশ্য প্রহরী মোঃ রকিবুল হাসান বাংলা পড়তে পারেন না। কোন মতে স্বাক্ষর দেওয়া শিখেছে। তিনি নিয়োগকালীন অষ্টম শ্রেণির যে সনদ দাখিল করেছেন তা টাকা দিয়ে জাল সনদ কেনা। কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর আলপনা আক্তার বয়স সংশোধন (নিয়োগে বয়স সংশোধনের কোন সুযোগ নেই) করে নিয়োগ নেন। এই দুইজনের নিয়োগ একই সময়ে হলেও এমপিওভুক্তির তারিখ ভিন্ন ভিন্ন। ভোকেশনাল শাখায় নিয়োগ প্রাপ্ত কম্পিউটার ডেমোনেস্ট্রেটর মোঃ মামুন সরকারের নিয়োগের ডিজি প্রতিনিধি অধিদপ্তর থেকে জারিকৃত নয়। ভোকেশনাল শাখায় নিয়োগ প্রাপ্ত কম্পিউটার ল্যাব এসিস্ট্যান্ট মো; সুমন মিয়ার সংশ্লিষ্ট ট্রেডে এমপিওভুক্তির সরকারি আদেশ (জিও) নেই। সহকারী শিক্ষিকা মোছাঃ আলফাতুন্নাহারের যোগদান করেন ০১ জুন ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে নিয়োগ পান সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ৮ অক্টোবর ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় তিন বছর পর তার যোগদান দেখানো হয়। নিয়োগ জালিয়াতি করে তাকেও নিয়োগ ও এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহায়ক নিয়োগ জালিয়াতির সময় প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. আলমগীর হাসান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পুরো জালিয়াতির সাথেই এই শিক্ষক জড়িত রয়েছে। অফিস সহায়ক রকিবুল হাসানের জাল সনদ প্রদান করেন তিনি। ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পালনের সময় বিদ্যালয়ের ফান্ডের অর্থ ব্যাংকে জমা না দিয়ে নিজেরা ভাগাভাগি করে আত্মসাৎ করেন।
বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে আসা তদন্তকারী কর্মকর্তারা অভিযোগকারী পাঁচ জনের মধ্যে মো. লাভলু মিয়া ও রাজু আহমেদকে বিদ্যালয়ে ডাকেন। তারা বিদ্যালয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা যে রুমে অবস্থান করছিলেন সেই রুমে প্রবেশ করতেই প্রধান শিক্ষক সুজাউদ্দিনের নেতৃত্বে অভিযুক্ত শিক্ষকরা তাদের দুইজনকে বেধড়ক মারধর করেন। মারধরের পরে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিলে তারা বাইরে আসতেই প্রধান শিক্ষক পূর্ব থেকে দাঁড় করিয়ে রাখা বহিরাগতদের দিয়ে ফের মারধর করতে উদ্বত হন। এসময় তারা দৌরে পালান। মারধরের ঘটনার পর তদন্তকর্মকর্তারা বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যান।
মারধরের শিকার এই দুই অভিযোগকারী লাভলু মিয়া ও রাজু আহমেদ শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তারা আমাদের বিদ্যালয়ে যেতে বললে আমরা বিদ্যালয়ে যাই। বিদ্যালয়ে প্রবেশ করা মাত্রই দরজা বন্ধ করে দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনেই প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে নিয়োগ জালিয়াতি করে ও জাল সনদধারী কম্পিউটার শিক্ষক এএইচ এম সহিদুল আলম ও অন্যান্য অভিযুক্তরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেন। আমরা এই ঘটনার বিচার দাবি করি।
নিয়োগ জালিয়াতি ও অভিযোগকারীদের মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়া প্রধান শিক্ষক মোঃ সুজাউদ্দিন শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, মারধরের বিষয়ে অভিযোগকারীরা মিথ্যা কথা বলছে। শিক্ষা অফিস কাগজপত্র চেয়েছে কিছু দিয়েছি বাকিটা দিয়ে দেব।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, বৃহস্পতিবার স্কুলের সামনে অনেক বহিরাগত লোক দেখতে পাই আমরা। আগে এদের এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখিনি। স্কুলের ভিতরে দুই অভিযোগকারীকে তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনেই মারধরের ঘটনা শুনেছি। তবে দরজা বন্ধ করে মারধর করা হয়েছে। আমরা দেখিনি। দুই জন স্কুল থেকে বের হলে বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো তাদের আবার মারতে উদ্বত হয় সেটা আমরা দেখেছি। স্কুলের অনেক অনিয়ম যা বলে শেষ করা যাবেনা।
সরেজমিনে তদন্তে উপস্থিত থাকা তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, মারধরের বিষয়টি আপনি অভিযুক্ত ওই শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করেন। এ বিষয়ে বলতে পারব না
তদন্তে উপস্থিত থাকা সহকারী পরিদর্শক জাকারিয়া হোসেন বলেন, মারধরের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না, তবে আমরা বলেছি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য অভিযোগকারীকে লাগবে তারা ১জনকে আশার অনুমতি দিচ্ছিল আমরা বলেছি দুজনকেই লাগবে। আমরা দুজনের সাথেই কথা বলেছি। এটা অনেক বড় অভিযোগ একদিনেই তদন্ত করে শেষ করা সম্ভব নয়।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৭/১২/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.