নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: ৬২ বছর বয়সে অধ্যক্ষের চেয়ার আঁকরে থাকা চট্টগ্রামের শাহী কমার্শিয়াল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। ৬২ বছর বয়সেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে আকড়ে থাকলেও তাকে শাহী কমার্শিয়াল কলেজের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্থ পরীক্ষা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। একই সাথে এই কেন্দ্রটিকেও বাতিল করেহে শিক্ষা বোর্ডটি।
গত ২৭ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোঃ কেপায়েত উল্লাহ স্বাক্ষরিত চিঠি থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন এইচএসসি (বিএম/ বিএমটি) শিক্ষাক্রমের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় শাহী কমার্শিয়াল কলেজ (কেন্দ্র কোড: ৭০০৩২), ১১২ নুর আহম্মদ সড়ক, চট্টগ্রাম সদর, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সচিব/ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আপনার বিরুদ্ধে পরীক্ষা পরিচালনা নীতিমালা অনুসরন না করে পরীক্ষা পরিচালনা করা, পরীক্ষা পরিচালনার আয় ও ব্যয় হিসাব সংরক্ষণ না করা, কেন্দ্র পরিচালনায় অদক্ষতা এবং অধ্যক্ষ/ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে আপনার অযোগ্যতা, কেন্দ্র কমিটিতে কেন্দ্রের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অন্তর্ভুক্ত না করা, ভৌত অবকাঠামোর ঘাটতিসহ নানাবিধ অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এমতাবস্থায় উপরোক্ত অভিযোগসমূহের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির নিকট হতে প্রাপ্ত সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ২৬-০৬-২০২৫ খ্রি. তারিখ হতে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি (বিএম/ বিএমটি) শিক্ষাক্রমের ২০২৫ সালের চুড়ান্ত পরীক্ষার সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকাসহ আপনাকে কেন্দ্র সচিব/ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পদ হতে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।”
এর আগে গত ‘চট্টগ্রামের শাহী কমার্শিয়াল কলেজ: ৬১ বছর বয়সেও অধ্যক্ষ জিয়াউদ্দিন‘ শিরোনামে গত ২৭ জুন ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর বিষয়টি আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। তবে ৫ আগস্ট সরকারের পতনের সাথে সাথে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলি হয়ে গেলে সেই তদন্ত আর আলোর মুখ দেখেনি। এখনও বহাল তবিয়তে আছেন তিনি।
জানা গেছে, শাহী কমার্শিয়াল কলেজে দীর্ঘ চব্বিশ বছর যাবত নেই অধ্যক্ষ। কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন শাহ মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন চৌধুরী। তিনি এমপিওভুক্ত শিক্ষক নন। তবু তিনিই একাধারে ২৪ বছর যাবত চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি গত ১৪ বছর ধরে চলছে এডহক কমিটি দিয়ে। এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো (কারিগরি) অনুযায়ী, অধ্যক্ষ হতে হলে প্রভাষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ১২ বছর এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে অধ্যক্ষ পদ শূন্য থাকলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে হলে নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ প্রভাষকই ভারপ্রাপ্ত হবেন।
প্রকৃতপক্ষে শাহ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন চৌধুরী নিয়মবহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে আসীন হলেও বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এর শিক্ষক ডাটাবেইজে তিনি অধ্যক্ষ। ব্যানবেইসের শিক্ষক ডাটাবেইজে তার জন্ম তারিখ ১২ এপ্রিল ১৯৬৩ ইং এবং যোগদানের তারিখ ০১ জানুয়ারি ১৯৯৯ ইং। জন্ম তারিখ অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ৬২ বছর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, শুধু অধ্যক্ষ কিংবা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নয় যে কোন এমপিও, ননএমপিও শিক্ষকের বয়স ৬০ বছর অতিক্রম করলে তার আর শিক্ষক পদে থাকার কোন সুযোগ নেই। তার স্বাক্ষর অকার্যকর। তবে একিছুর পরেও বিভিন্ন সময়ে করা একাধিক তদন্তে তার নিয়োগ এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব অবৈধ তা উঠে আসলেও এবং ৬০ বছর অতিক্রম করলেও তিনি এখনও রয়েছেন বহাল তবিয়তে। বিষয়টি যেন দেখেও না দেখার অভিনয় করছে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৭/০৫/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.