বাড়তি টাকা খরচ ছাড়াই শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ সম্ভব

ড. মো: শরিফুল ইসলামঃ আজ যে শিশুটি দোলনায় দোলছে, সেই শিশুটিই আগামীকাল বিশ্ব দোলাতে পারে। এজন্য ঐ শিশুটির চাই উপযুক্ত পরিবেশ, সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ, উন্নত জীবনবোধ, ব্যক্তিত্বের বিকাশ ও তার মধ্যে উচ্চতর চিন্তা চেতনার স্বপ্নের বীজ বোনা।

একজন সক্রেটিস জন্মেছিল বলে,পৃথিবী একজন প্লেটোকে পেয়েছিল। একজন প্লেটো জন্মেছিল বলে, পৃথিবী একজন এ্যারিস্টেটলকে পেয়েছিল। একজন এ্যারিস্টেটল জন্মেছিল বলে, পৃথিবী একজন আলেকজান্ডারকে পেয়েছিল এবং যারা পুরো বিশ্বকে আলোকিত করেছিল।

‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা জাতীয়করণ হলে সরকারের এক টাকাও বাড়তি খরচ হবে না। বর্তমানে এমপিও হিসাবে দেওয়া অনুদানের অর্থেই ব্যয় সংকুলান হবে। এর সঙ্গে কেবল প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় যোগ করতে হবে। এই দুই অর্থ মিলিয়ে শিক্ষকের বেতনভাতা সবই দেওয়া যাবে। এরপরও বছরে অন্তত দেড়শ কোটি টাকার মতো সরকারের তহবিলে জমা থেকে যাবে।’

‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে হলে স্মার্ট নাগরিক দরকার। আর সেই স্মার্ট নাগরিক গড়ার জন্য আগে স্মার্ট শিক্ষক লাগবে। সেজন্যই শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ জরুরি। এটা হলে বাড়তি লাভ হবে শিক্ষার মানের। তখন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় সরাসরি সরকারি নিয়ন্ত্রণ কায়েম হবে। নিয়োগ পাবে আরও মানসম্মত শিক্ষক। ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং অসৎ শিক্ষকদের অন্যায়-অনিয়ম বন্ধ হবে। আর এর সুফল পড়বে শিক্ষায়। ফলে গড়ে উঠবে সুনাগরিক।

সরকার সর্বশেষ ২০১৫ সালে জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণা করে। সরকারি চাকরিজীবীদের মতোই শিক্ষকরা পে-স্কেলে শতভাগ বেতন পাচ্ছেন। অবসর ভাতাও আলাদা হিসাবে পাচ্ছেন। তবে তারা বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা অনুরূপ পাচ্ছেন না। শিক্ষক সমাজের দাবি, যেসব খাতে ভাতা দেওয়া হয় না তার পেছনে ব্যয়ের পরিমাণ বেশি নয়। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্র বেতন, ভর্তি ফি, সেশন চার্জবাবদ বিপুল অর্থ আদায় করে থাকে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পত্তি থেকেও আয় আছে। ওই আয় রাজকোষে নিলেই ব্যয়ের সংস্থান হবে।

বর্তমানে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ১ কোটি ৬৩ লাখ শিক্ষার্থী আছে। প্রতি শিক্ষার্থী মাসিক ২০ টাকা হিসাবে টিউশন ফি দিলে বার্ষিক আয় হবে ৩৯০ কোটি টাকা। ভর্তি বা সেশন ফি বাবদ শিক্ষার্থীপ্রতি গড়ে ৪শ টাকা আদায় সম্ভব। এতে বার্ষিক আয় দাঁড়ায় ৬৫০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পত্তি থেকে অন্তত ২০০ কোটি টাকা বছরে আয় করা সম্ভব। অন্যদিকে সরকার বর্তমানে এমপিও বাবদ বার্ষিক দেয় ১৪২৫ কোটি টাকা। এই তিন খাতের অর্থ একত্র করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৬৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু জাতীয়করণ করা হলে সরকারের বার্ষিক লাগবে ২৫০০ কোটি টাকা। এই হিসাবে বার্ষিক উদ্বৃত্ত থাকবে ১৬৫ কোটি টাকা। এছাড়া প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে গড়ে সাধারণ ফান্ডে জমা আছে এক লাখ টাকা হিসাবে ৪০০ কোটি টাকা। সরকারি করা হলে এই অর্থও সরকারি তহবিলে জমা হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের সব স্থাবর সম্পত্তিও সরকারের অনুকূলে যাবে।

বর্তমানে সরকারি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী বেতন ১২ টাকা, নবম থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত ১৮ টাকা আর একাদশ থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ২৫ টাকা। গড় বেতন ১৫ টাকা। জাতীয়করণ করা হলে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বেতন ৫০ টাকা এবং নবম-দশম পর্যন্ত ৭৫ টাকা আর একাদশ থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত বেতন ১০০ টাকা করা যেতে পারে। এতে শিক্ষার্থীপ্রতি গড় টিউশন ফি দাঁড়ায় মাসে ৭৫ টাকা। ফলে আয় আরও বাড়ানো সম্ভব।

মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা ! আর স্মার্ট শিক্ষার্থী উপহার দিতে পারেন উচ্চতর চিন্তা চেতনার অধিকারী শিক্ষকবৃন্দ। এলক্ষে শিক্ষকবৃন্দের জন্য চাই বিশ্বমানের সুযোগ সুবিধা যা একমাত্র শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের মাধ্যমে-ই সম্ভব। তাই আপনার এ সোনালী সময়কে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখতে টিউশন ফিস সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে আপামর জনতার প্রাণের দাবী একযোগে ‘শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ’ করবেন এই প্রত্যাশা রইল।

লেখকঃ গবেষক ও কলামিস্ট, সিলেট

মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২১/০৮/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.