এইমাত্র পাওয়া

শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মটাই কেন একমাত্র নিয়ম হবে?

শেখ ফরিদঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স দুটোতেই প্রথম হওয়ার পর সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে ভাইভা দেই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ততদিনে আমার তিনটা পাবলিকেশনও ছিল। নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন তৎকালীন ভিসি ওয়াহিদুজ্জামান চাঁন আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবুল হোসেনসহ মোট ৫ জন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১-৫ এর মধ্যে ছিলাম, এ রকম আমরা ২০ জনের ওপরে ভাইভা দিয়েছি। এদের মধ্যে আমরা দুজন এখন ইউএসএ পিএইচডি করি, একজন ইউএসএ পোস্ট-ডক করছেন, একজন কানাডায় পিএইচডি করছেন। পজিশনে ছিল এমন কেউই সেই বোর্ডে নিয়োগ পায়নি। নিয়োগ বোর্ডে থাকা এই ৫ জন ‘প্রগতিশীল’ চেতনার হকারের একজনও বলেনি যে মেরিটোক্রেসির ভিত্তিতে অন্তত একজনকে নিয়োগ দেন।

সেদিনের সেই ভাইভার পর আমি বুঝে গিয়েছিলাম এই দেশ কারা চালায়, এ দেশের উচ্চশিক্ষা কাদের হাতে জিম্মি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর কোথাও ভাইভা দেব না।
এরপরে এক বড় ভাই পরামর্শ দিয়ে বললেন আমি যেন দেশ ছাড়ার আগে আরও ৫ বছর চেষ্টা করি। কোনো না কোনো নিয়োগ বোর্ডে একজন সৎ, সাহসী, মেরিটোক্রেসিতে বিশ্বাস করে এমন একজন থাকবে। উনার মতে এ দেশের কোনো না কোনো বোর্ডে অন্তত একজন সৎ ও দেশপ্রেমিক ভিসি/প্রোভিসি থাকবে। অন্তত একজন শিক্ষানুরাগী, সত্যিকার অর্থেই এই দেশকে ভালোবাসে, কোনো না কোনো বোর্ডে থাকবে। চেতনা বিক্রির এই বাজারে কেউ একজন বিশ্বাস করবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে কোনো কম্প্রোমাইজ করা ঠিক না। আমি আবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইভা দেওয়া শুরু করি। প্রায় ২৭ বার ভাইভা দিয়েছি/আবেদন করেছি, সব অভিজ্ঞতা লিখে রেখেছি। এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে কী হয় তা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। ধীরে ধীরে সব অভিজ্ঞতাই লিখবব। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই করুণ অভিজ্ঞতার কথাও।

সে ভাইয়ের ধারণা ভুল ছিল (উনার চিন্তাকে আমি শ্রদ্ধা করি)। আর আমিও কাদের কাছে কী প্রত্যাশা করেছিলাম! ২০১০ সাল থেকে এসব নিয়োগ ফলো করি। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলব যদি এই ধারা এভাবে চলতে থাকে, আগামী ৫০ বছরেও এ দেশের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু মেরিটোক্রেসির ভিত্তিতে একটা ফেয়ার সিলেকশন বোর্ডের মাধ্যমে একটা নিয়োগও হবে না। এর কারণ আপনাদের চিন্তা করতে দিলাম। সময় পেলে আমি আরেকদিন আলোচনা করব।

প্রশ্ন করতে পারেন এর মধ্যে কোনো মেধাবী ছাত্রছাত্রী নিয়োগ পেয়েছে কিনা। হ্যাঁ, পেয়েছে। তবে সেটা কোনো ফেয়ার সিলেকশনের মাধ্যমে না, তাকেও তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হয়েছে, কথা দিতে হয়েছে, তাদের ডিমান্ড পূরণ করতে হয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করার পরেই নিয়োগ পেয়েছেন। কোনো ফেয়ার নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে না। মূল আলোচনা এখানে: একটা ফেয়ার সিলেকশন বোর্ড থাকবে, নিয়োগের আগে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে কেন? এ দেশে বিসিএস পরীক্ষা যদি ফেয়ার হতে পারে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে কেন অনিয়ম হবে? অনিয়মটাই কেন একমাত্র নিয়ম হবে?

একটা দেশের মূল পিলার হলো সে দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা। উচ্চশিক্ষা পুরোটাই নির্ভর করে কেমন শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন সেটার ওপর। আর সেই উচ্চশিক্ষার যখন এই হাল, তখন এ দেশের ‘বুদ্ধিজীবীরা’ যখন প্রেমের কবিতা লেখে, মোটিভেশনাল স্পিচ দেয়, সিস্টেমের সমস্যা নিয়ে কথা না বলে তরুণদের স্বপ্ন দেখতে বলে, পাওয়ারকে প্রশ্ন না করে মানুষের ওপর দোষ চাপায়, লিট ফেস্ট করে, কালচারাল বিপ্লব করে ফেসবুক ভাসায়, তখন হাসিও পায় আবার ঘৃণাও লাগে।

লেখক: পিএইচডি ক্যান্ডিডেট ও গবেষণা সহকারী, কানকেটিকাট ইউনিভার্সিটি

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.