এইমাত্র পাওয়া

শারীরিক অক্ষম তবুও তিনি প্রধান শিক্ষকের চেয়ার ছাড়বেন না!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: জেলার নবীনগরে শারীরিক অক্ষমতা থাকার পরও ৭ বছর ধরে একই বিদ্যালয়ে পড়ে আছেন হুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুসুম রানী ভৌমিক। এতে করে ঐ বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থায় থুবড়ে পড়েছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এই স্কুলের অভিভাবকদের মধ্যে।

জানা যায়, নবীনগর উপজেলার জিনতপুর ইউনিয়নের হুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুসুম রানী ভৌমিক দীর্ঘদিন ধরে হুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন, এরই মধ্যে তিনি বিগত ৭ বছর আগে স্টোক করে প্যারালাইসিস হয়ে পড়ে।

তারপরও তিনি সেই অবস্থায় ঐ স্কুলে শিক্ষকতা করতে চাইলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মানবিক কারণে কিছুদিনের জন্য প্রধান শিক্ষকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে অনাপত্তি জানান।

যদিও এমন পরিস্থিতিতে তিনি শিক্ষকতা করার মতো অবস্থা ছিল না, তাকে চলাফেরা করতে হয় হামাগুড়ি দিয়ে। তারপরও কিছুদিনের জন্য তাকে সেই বিদ্যালয়ে রেখে অবসর গ্রহণ করতে বাকি প্রস্তুতি সম্পন্ন করার ইঙ্গিত দিয়ে প্রধান শিক্ষককে সেই পদে বহাল রাখেন কর্তৃপক্ষ। এই প্রধান শিক্ষকের স্বামীও একজন শিক্ষক। সেই সুবাধে আইনের ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে কর্তৃপক্ষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে তিনি বছরের পর বছর ধরে সেই পদে বহাল থেকে পুরোপুরি বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রধান শিক্ষকের এই দুর্বলতা সুযোগ নিয়ে বিদ্যালয়ে চলছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট, আরেকজন সহকারী শিক্ষক তিনিও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে একই স্কুলে আছেন ৮ বছর যাবৎ, একজন শিক্ষক যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে প্রায় ২ বছর চিকিৎসার নামে ভারতে অবস্থান করে অতিসম্প্রতি দেশে ফিরে এলেন। তিনিও সুকৌশলে ভারতে গিয়ে ছুটি মঞ্জুর করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, এসব বিষয়ে বারবার উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শিউলি কর এর নিকট লিখিত ও মৌখিকভাবে জানিয়েও কার্যত অচল অবস্থা নিরসনে পেলেন না কোন ফল।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে  জানান, আমরা বারবার লিখিত ও মৌখিক ভাবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে আমাদের বিদ্যালয়ের এই দুর অবস্থার কথা জানালেও তারা কোন কর্নপাতই করে না। আমাদের বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ৭ বছর যাবৎ প্যারালাইসেস হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করে, তিনি তার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ অক্ষম তারপরও তাকে অবসরে দেয়া হচ্ছে না বা অন্য কোথাও বদলি করা হয় না। এরপর আরেক শিক্ষিকা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, আশালতা নামের আরেকজন শিক্ষক কারো অনুমতি ছাড়াই ২ বছর ধরে ভারতে চিকিৎসার নামে বসবাস করে এলেন। আপনারাই বলেন এভাবে কি একটা বিদ্যালয় চলতে পারে ? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের একেবারে শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে এই প্রধান শিক্ষক। এখনো যদি কোন ফল না পাই তবে আমাদের এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করতে বাধ্য হবো।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, আমি এই বিষয়টি জেনেছি, আমাদের হাতে তেমন কিছু করার নেই একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপরের মহলে লেখালেখি করা ছাড়া। আমরা তাই করেছি। আমি মনে করি এই শিক্ষক সেচ্চায় তার শারীরিক অবস্থার কারণে অবসরে যাওয়ার উচিত কিন্তু সে তো তা করছে না। অধিক পরিমাণে বেতন পাওয়ার লোভে সে এমন করছে বলে আমার মনে হয়। এই মুহূর্তে সে সর্বসাকুল্যে প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেতন ভাতা ভোগ করছেন। তার বদলির বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেবেন।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২০/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.