প্রতিনিধি, পঞ্চগড়।।
পঞ্চগড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ হারানোর কুড়ি বছর পর আইনি প্রক্রিয়ায় শিক্ষকতা ফিরে পেয়েছেন আকবর হোসেন নামে এক শিক্ষক। পঞ্চগড় সদর উপজেলার নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে যোগদান করেন এই শিক্ষক।
এ সময় বিদ্যালয়ের তার সাবেক সহকর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। মিষ্টি বিতরণ করা হয় সবার মাঝে। আকবর হোসেনের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের কাপরাঙ্গাপাড়া এলাকায়।
কুড়ি বছর নিজ হাতে গড়া বিদ্যালয়ে ফেরার ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃস্টি হয়েছে। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরাও বিদ্যালয়টিতে ছুটে আসেন ।
আকবর হোসেনের পরিবার জানায়, দীঘলগ্রামে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ১৯৯২ সালে নয়নীবুরুজ দীঘলগ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন আকবর হোসেন। কয়েক বছরের মধ্যে তিনিসহ শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হন। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়।
তার অনেক আগেই সভাপতি হবিবর রহমানের সাথে দ্বন্দ থাকায় আকবর হোসেন শিকার হন ষড়যন্ত্রের। ২০০১ সালে তার স্ত্রীর সাথে বিরোধের একটি মামলায় তিনি ৩ মাস কারাগারে থাকতে হয় তাকে।
পরে সমঝোতা হওয়ায় জামিনে মুক্তি পান তিনি। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর বিদ্যালয়ের সভাপতি হবিবর রহমান প্রধান শিক্ষক আকবর হোসেনকে আর বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেন নি। এভাবে চলে যায় কয়েক বছর। ২০০৪ সালে আদালতে আদেশাত্মক নিষেধাজ্ঞার মামলা করেন আকবর। মামলায় আদালত আকবরকে স্বপদে বহাল ও তার বকেয়া বেতন পরিশোধের নির্দেশ দেন।
এদিকে আকবরকে সরিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্টরা সভাপতির ভাতিজা বৌ আয়েশা সিদ্দিকাকে নিয়োগ দেন। এরপর এই মামলা গড়িয়েছে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। সবশেষ ২০২২ সালের ১৮ মে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে নি¤œ আদালতের রায় বহাল রাখেন এবং আয়েশা সিদ্দিকার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর অবৈধভাবে নিয়োগ দেয়া আয়েশা সিদ্দিকাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। কিন্তু আকবরকে যোগদান করাতে টানবাহানা শুরু করে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তারা তাকে ঘুরাতে শুরু করে। উপায় না পেয়ে ২০২২ সালের শেষের দিকে পঞ্চগড় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি জারি মামলা করেন তিনি।
এরপর আকবর আলীকে যোগদান করানোর আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় আদালত গত ২৯ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এরপর তড়িঘড়ি করে বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আকবর হোসেনকে যোগদান করিয়ে বিদ্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
আকবর হোসেন জানান, এই মামলার পেছনে আমার সবকিছু শেষ করে ফেলেছি। ছেলে দুইটাকেও ভালো করে লেখাপড়া করাতে পারিনি। ২০ বছর ধরে আমি সংগ্রাম করছি। চরম অভাবে দিন পাড় করেছি।
তবুও ন্যায় বিচারের আশায় বছরের পর বছর ঘুরেছি। সভাপতি হবিবর রহমান এটিইও আকবর আলী, জিন্নাত আলী ও টিইও রুস্তম আলী যোগসাজস্যে আমাকে বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে আয়েশা সিদ্দিকাকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়েছিল।
আজ ২০ বছর পরে আদালতের নির্দেশে আমাকে আমার পদ ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আমাকে পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলোতে আর যেন হয়রানি না করা হয় সেই দাবি জানাই। এর সাথে আমি স্থানীয় বাসিন্দাসহ বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করি।
আইনজীবী আসাদুজ্জামান বলেন, আমি আকবর হোসেনের অন্যজারি মামলার আইনজীবী ছিলাম। সংশ্লিষ্টরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা না মানায় এই মামলা করা হয়। বিবাদীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ করা হলেও তারা কোন জবাব না দেয়ায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ারা জারি করে।
এরপর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা কাগজপত্র যাচাই করে তাকে বিদ্যালয়ে যোগদান করায়। তৎকালীন সময়ে আকবর হোসেন কে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বহিস্কার করেছিল সেটি অবৈধ হয়েছে, আদালতের আদেশ থাকা সত্তেও আকবর হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আদেশ অমান্য করা হয়েছে আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে। এজন্যই আদালত আকবর হোসেনের পক্ষে আবারও দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মন্ডল বলেন, দীর্ঘ চাকরি সংক্রান্ত মামলা চলার পর আদালতের নির্দেশে আমরা আকবর হোসেনকে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের অনুমতি দিয়েছি। তিনি আজ বিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/১১/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.