ড. মোঃ শরিফুল ইসলামঃ বন মন্ত্রণালয় ব্রাজিল থেকে বিলুপ্তপ্রায় কিছু গাছের চারা দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য আনলেন। যথারীতি চারাগুলো রোপন করা হলো কিন্তু চারাগুলোকে বাচানো গেল না। উদ্ভিদবিজ্ঞানীগন বললেন ঐ দেশ থেকে বীজ এনে চারা করে তবেই আমাদের দেশে লাগাতে হবে। ৬ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশে ১০০ টি চারা উৎপাদন করা হলো যা ১০ বিঘা জমিতে রোপন করা যায়। কিন্তু ঐ চারা রোপনযোগ্য জমি আছে মাত্র ৭ বিঘা। এখন বাকী ৩০ টি চারা কি করা যায়? উদ্ভিদবিজ্ঞানীগন বললেন “যেহেতু অনেক কষ্ট ও ত্যাগের বিনিময়ে চারাগুলো উৎপাদিত হয়েছে তাই ৩ বিঘা জমি চাষ উপযোগী করে বাকী চারা রোপন করতে হবে।” [গল্পটি আমার এক প্রবাসী বন্ধুর কাছ থেকে নেওয়া।]
এবার আসি মুল বিষয়ে। বর্তমানে শুণ্যপদের চেয়ে নিবন্ধনধারী শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। এখানে মনে রাখতে হবে “মাথার রোগ হলে মাথা কেটে ফেলা কোন স্থায়ী সমাধান নয়।” তাই পদ সৃষ্টি করে নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ দেওয়া রাষ্ট্রের মানবিক দায়িত্ব।
আবার নিবন্ধনধারীদের অনেকেই ইতিমধ্যে ——
* সরকারী চাকুরী পেয়েছেন।
* কেউ বেসরকারী ভাল বেতনে চাকুরী পেয়েছেন।
* কেউ বিদেশ গিয়েছেন।
* কেউ ভাল ব্যবসা করছেন।
* অনেকের একাধিক নিয়োগ আছ।
[ আমার নিজেরই ৪টি নিয়োগ ছিল, এমপিওভুক্তির পর বাকীগুলো রিজাইন দিয়েছি।]
* কেউ এমন কিছু করছেন যে আর শিক্ষকতা পেশায় আসবেন না।
* অনেকের ৩/৪ বিষয়ে নিবন্ধন সনদ আছে। আমার নিজেরই কলেজর ৩টি সাবজেক্টে সনদ আছে। মাদার সাবজেক্টে ১টি, ফাদার সাবজেক্টে ১টি, আদার সাবজেক্টে ১টি।
* ৫ম নিবন্ধন পরীক্ষা পর্যন্ত পাশের হার ছিল খুব কম। তাই সেখানে চাকুরী প্রত্যাশীর সংখ্যা খু-উ-ব কম। এভাবে হিসাব করলে দেখা যাবে ২০% চাকুরী প্রত্যাশী।
যেভাবে পদ সৃষ্টি সম্ভব
শিক্ষাবিজ্ঞানে আদর্শ শিক্ষাদান নিশ্চিতকরণে শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৪০ বলা আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তা কার্যকর আছে। এভাবে হিসাব করলে কয়েক লক্ষ পদ সৃষ্টি হবে। যেমন
(১) মাধ্যমিক স্তরে ছাত্র-ছাত্রী/ সবল-দূর্বল আলাদা সেকশন করা ( যেখানে যেমন দরকার) যেতে পারে।
(২) উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আবশ্যিক ও কঠিন বিষয়ের ক্লাস সমুহ ১:১৫ টার আগে শেষ করার জন্য ১০০+ জন শিক্ষার্থী থাকলে একাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। সহজ ও ৪র্থ বিষয়ের ক্লাস বিরতীর পর নেওয়া যেতে পারে।
(৩) উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সকল বিষয় ৩ পত্র বিশিষ্ট হওয়ার গুঞ্জন শুনেছি সেখানেও ১০০+ জন শিক্ষার্থী থাকলে একাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
(৩) ডিগ্রি (পাশ) স্তর আগে ২ বছর ছিল শিক্ষকও ছিল ২ জন। এখন স্তর ৩ বছর হওয়ায় শিক্ষকও ৩ জন হবে এটাই যৌক্তিক।
(৪) অনার্স ও মাস্টার্সের শিক্ষকবৃন্দ দীর্ঘ প্রায় ৩ যুগ বছর বেতন বিহীন। এখানে বেশির ভাগ শিক্ষক খন্ডকালীন। এক্ষেত্রে নিবন্ধনধারী শিক্ষক নি:সন্দেহে বেশি যোগ্য।
নিবন্ধন সনদে বলা আছে He/She is eligible to be appointed as a Lecturer/ Assistant Teacher of any School/ College/ Madrasa in Bangladesh. হাই কোর্টের রায়েও সকল নিবন্ধনধারীর চাকুরী দেওয়ার কথা বলা আছে। গতবছর ২৭০০ প্রতিষ্টান MPOভুক্ত হয়েছে সেখানে নিবন্ধনবিহীন ৫০+ বয়সী শিক্ষকও রয়েছেন। তাহলে, নিবন্ধনধারী ৩৫+ শিক্ষক আরো বেশি যোগ্য। কেউ নিয়োগ না পেয়ে, কেউ MPO না পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। বাকীরা পরিবারের ও সমাজের বোঝা হয়ে জীবন্ত লাশ হয়ে আছে।
মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা! আপনার স্বর্ণালী সময়কে স্বরণীয় বরণীয় করে রাখতে অনতিবিলম্বে সকল নিবন্ধনধারী শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
লেখকঃ গবেষক ও কলামিস্ট, সিলেট
“মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২০/০৬/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.