এইমাত্র পাওয়া

নতুন বছরে কোচিং-গাইড নির্ভরতায় খরচ বাড়ার শঙ্কা

ঢাকা : নতুন বছরের শুরতেই কিছু বিষয়ে কোচিং করা শুরু করেছে বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মাহির শাহরিয়ার শীর্ষ। কয়েক দিনের মধ্যে আরও কয়েকটি বিষয়েও কোচিংয়ে পড়বে সে। প্রায় সব বিষয়ে কোচিং ক্লাস শুরু করায় ছেলের পড়াশোনার খরচ বেড়ে গেছে বলে জানালেন তার মা ফজিলাতুন নাহার শাম্মী।

তিনি বলেন, গত বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে কোচিং খুব জরুরি না হলেও কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষকদের বাসায় পড়তে পাঠিয়েছিলাম। তবে আগের শিক্ষাক্রম ফিরে আসায় সপ্তম শ্রেণির শুরু থেকে প্রায় প্রতিটি বিষয়ের কোচিংয়ে পাঠাব বলে ঠিক করেছি।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছেলের পড়াশোনার খরচতো বাড়বেই। সবগুলো বিষয়ের কোচিং করাতে অনেকগুলো টাকা চলে যাবে।

চলতি বছর শিক্ষাক্রমের পরিবর্তনের জেরে শিক্ষার খরচ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা হয়েছে। কোচিং ও নোট-গাইড এই ব্যয়বৃদ্ধির মূল কারণ হবে বলে মনে করছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠান ও গবেষকরা।

তাদের মতে, ‘অভিজ্ঞতানির্ভর’ শিক্ষাক্রম বাতিল করে দিয়ে একযুগ আগের ‘মুখস্ত নির্ভর’ শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা কোচিং ও নোট-গাইডমুখী হয়ে পড়বে। আর অভিভাবকদের ওপর নেমে আসা ‘বাড়তি খরচের খড়্গ শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হারও বাড়াবে’।

২০১২ সালের যে শিক্ষাক্রম আবারও বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে তাতে ‘কোচিং ও নোট-গাইড নির্ভরতার’ অভিযোগ ছিল। এক যুগ আগে প্রণয়ন করা এ শিক্ষাক্রমে কোচিং ও নোট-গাইডের ৩০ হাজার কোটি টাকার বাজার সৃষ্টি হয়েছিল বলে ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল।

ওই শিক্ষাক্রম ফিরে আসায় শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির জেরে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)।

এমন বাস্তবতায় কোচিং ও নোট-গাইডের খরচ থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিতে ‘জীবনমান উন্নয়ন ও যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকদের শিক্ষাদানে আন্তরিক ও যোগ্য করে গড়ে তোলা’ এবং ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির’ তাগিদ দিয়েছেন শিক্ষা গবেষকরা।

আর শিক্ষাক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও (এনসিটিবি) কোচিং ও নোট-গাইডের বাড়তি খরচ এড়াতে শিক্ষকদের জীবনমান ও শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নসহ কিছু ‘কাঠামোগত’ পরিবর্তনের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষকে শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা দেখছে।

২০২৩ সালে প্রাথমিকের একটি ও মাধ্যমিকের দুটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল। ‘অভিজ্ঞতা নির্ভর’ সেই শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে ‘কোচিংমুখিতা ও নোট-গাইড ব্যবহারের প্রবণতা কমবে’ বলে একাধিকবার দাবি করেছিলেন বিগত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা।

২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে নোট-গাইড ও কোচিং নির্ভরতায় শিক্ষার্থীদের ব্যয় বেড়েছিল বলে বিভিন্ন সময়ে গবেষণায় পাওয়া গেছে।

গণসাক্ষরতা অভিযানের ‘এডুকেশন ওয়াচ রিপোর্ট ২০২২’ অনুসারে, ২০২২ সালে অষ্টম ও নবম শ্রেণির প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট টিউশন নিতে হয়েছে। প্রাথমিকের ৭৯ ও মাধ্যমিক স্তরের ৮২ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ওই বছর তাদের পাঠ ও পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য নোট-গাইডবই অনুসরণ করেছে।

আর ২০২২ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ২০২৪ সালের মার্চে প্রকাশিত ‘এডুকেশন ওয়াচ রিপোর্ট ২০২৩’ এ বলা হয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা খাতে বার্ষিক পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা এবং নবম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর জন্য এই ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। এই খরচের বড় অংশ ছিল কোচিং ও নোট-গাইড বাবদ।

২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ ব্যয় ২৫ শতাংশ ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য এ ব্যয় ৫১ শতাংশ বেড়েছিল বলেও ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.