শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকাঃ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের দিন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ব পালন করা ১০ শিক্ষক এখনো প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসেননি। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে তারা প্রতিষ্ঠান ছেড়েছেন। অনেকে কর্মস্থলে না থেকেও বেতন-ভাতা গ্রহণ করছেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের বাইরে থাকা শিক্ষকেরা নিয়োগ বাণিজ্যসহ, বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বিরুদ্ধে।
তবে শিক্ষকেরা নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি শিকার করে সাবেক এক সংসদ সদস্যকে দুষছেন। রাজনৈতিক কারণেই বিদ্যালয় ছাড়া বলে মন্তব্য করেন তারা।
উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু ১০ জন না, আরও অনেকে বিদ্যালয় ছাড়া ছিলেন। ওইসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। অনেকে ফিরেছেন। তবে রাজনৈতিক কারণে কেউ বিদ্যালয় ছাড়া হননি। এর মধ্যে বিএনপির নেতারাও রয়েছেন।’
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর প্রধানদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। অনেকে সরাসরি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে তারা আত্মগোপনে চলে যান। এর পরে কিছু স্থানে জোরপূর্বক প্রধানদের পদত্যাগে বাধ্য করায় তাদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়। এই সময়েও প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকতে শুরু করেন অনেকে। বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিগত সময়ের হিসেব চাওয়া ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এ সময়ে ছাত্র, শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন এসব দাবি নিয়ে সোচ্চার হলে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা গা ঢাকা দেন। সে থেকে তারা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত বন্ধ করে দেন।
জানা যায়, উপজেলার প্রায় ৪২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা যাতায়াত বন্ধ করে দেন। এই সময়ের মধ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি ও জবাবদিহিতা করে ফিরে আসেন ৩২টি প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তবে এখন পর্যন্ত ১০টি প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ব পালন করা শিক্ষকেরা ফেরেননি। এদের মধ্যে হামিরকুত্সা, ঝিকড়া, চান্দেরআড়া, চক মহব্বতপুর, মোহনগঞ্জ, জামগ্রাম, দামনাশ ওদ্বীপপুর উচ্চ বিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। তাঁরা বিদ্যালয়ের বাইরে থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। বিগত সময়ে তারা নিয়োগ বাণিজ্য করলেও প্রতিষ্ঠানের তহবিলে কোনো টাকা জমা দেননি। এদের মধ্যে চক মহব্বতপুর, ঝিকড়া, দামনাশ, জামগ্রাম, চান্দেরআড়া, বড় বিহানালী বালিকা উচ্চবিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে হামিরকুত্সা, মোহনগঞ্জসহ অন্য বিদ্যালয়ের প্রধানদের বিরুদ্ধে।
চকমহব্বতপুর উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক গণিপুর ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আশরাফ আলীর বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে স্থানীয় বাসিন্দা নাজমুল হক, মাহাতাব আলীসহ শিক্ষার্থীরা জানান, তিনি প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। এসব বিষয়ে তারা বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, যার তদন্ত চলছে। দুই তিন মাসের বেশি সময় ধরে আশরাফ আলী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত।’
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আশরাফ আলী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা ও নিয়োগ বাণিজ্যের কথা স্বীকার করে বলেছেন, তাকে জোর করে পদত্যাগ করানো হয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হককে দিতে হয়েছে। বিদ্যালয়ের বাইরে থাকলেও বেতন-ভাতার কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।’
একই ধরনের কথা বলেছেন অনুপস্থিত থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া বড় বিহানালী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাফিউল আলম। তিনিও নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিদ্যালয়ের গাছ কেটে বিক্রয়লব্ধ টাকা সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হককে দিতে হয়েছে বলে সাফ জানিয়ে দেন।
এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রতিবেদককে জানান, প্রধানেরা অনুপস্থিত থাকার কারণে দাপ্তরিক কাজে সমস্যা হচ্ছে। তাদের বিগত দিনের অনিয়মের দায়ভার নিয়ে কাজ করতে বিভিন্ন রকমের ঝামেলা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ তারা ( অনুপস্থিত থাকা প্রধানেরা) বিগত সময়ে কোনো শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় করেনি। সভাপতি নিয়ে চলার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
হামিরকুত্সা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁকে দায়িত্ব দিয়েছেন,তা পালন করছেন। কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এসব বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুক্তাদির আলম বলেন, ‘অনেক প্রতিষ্ঠানে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তা স্থানীয় ভাবে সমাধান করা হয়েছে। যেসব প্রধানেরা এখনো ফেরেননি ওই প্রতিষ্ঠানে ইউএনও মহোদয়ের পরামর্শ নিয়ে ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। অনেক লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে, এগুলোর তদন্ত চলছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে এখনও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসতে আরও সময় লাগবে। আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৪/১১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.