আর একটি জেল বা গুলি নয়-আসুন ছাত্র-জনতার মনের ভাষা বুঝুন, প্লিজ।। মুগ্ধ যখন বলছিল পানি লাগবে, পানি? আহ!! এই পানি শব্দটি আমাকে ঘুমাতে দেয় না। কী অপরাধ ছিল এই ছাত্রদের? আমি পারি না। মুগ্ধের এই পানি শব্দটি আপনার কান পর্যন্ত পৌঁছেনি?
আমার সন্তানদের এভাবে আর না-বহু হয়েছে। বহু-আসলে বহু—আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আপনার কী পাবার বাকী আছে? আপনার পিতা অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নিজের জীবন বিলীন করে দিয়েছেন? ইতিহাস গড়েছেন, স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়েছেন। আপনি শুধু ১৮ কোটি মানুষের মনের ভাষাটি বুঝলেই আমি অন্তত খুশি।। কিচ্ছু চাই না-কিচ্ছু না!!! না আপনার উন্নয়ন, না গণতন্ত্র, কিচ্ছু না।
প্রতিটি মুক্তিকামী জনতার জন্য এখন আমাদের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম অনিবার্য। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাঁর লেখনি শক্তি এতটাই ছিল যে, তাঁকে জেলে যেতে হয়েছে। তিনি ছিলেন রাজবন্দী। গতকাল বহু সংবাদ মাধ্যমের সংবাদে জেনেছি আমাদের ৬ রাজবন্দী প্রতিবাদী সন্তান বন্দী অবস্থায় অনশনে ছিলেন। তখনই বার বার আমি নজরুলের কাছে ছুটে গিয়েছি-জবানবন্দীতে নজরুল বলেছেন,
“আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজবিদ্রোহী। তাই আমি আজ রাজকারাগারে বন্দি এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত।…আমি কবি, আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন, আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা ভগবানের বাণী। সেবাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যাদ্রোহী নয়। সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি-মশাল হয়ে অন্যায় অত্যাচার দগ্ধ করবে…।
‘ আমার হাতের বাঁশি কেড়ে নিলেই সে বাঁশির মৃত্যু হবে না।’ কেননা আমি আর এক বাঁশি নিয়ে বা তৈরি করে তাতে সেই সুর ফোটাতে পারি। সুর আমার বাঁশির নয়, সুর আমার মনে এবং বাঁশির সৃষ্টির কৌশলে, অতএব দোষ বাঁশির নয়, সুরেরও নয়, দোষ তার, যিনি আমার কণ্ঠে তার বীণা বাজান, …সে বাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে। কিন্তু ন্যায়বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়। সত্যদ্রোহী নয়। সে বাণী রাজদ্বারে দণ্ডিত হতে পারে। কিন্তু ধর্মের আলোকে ন্যায়ের দুয়ারে তা নিরপরাধ, নিষ্কলুষ, অম্লান, অনির্বাণ, সত্যস্বরূপ।…তাকে শাস্তি দেয়ার মতো রাজশক্তি বা দ্বিতীয় ভগবান নেই। তাকে বন্দী করার মতো পুলিশ বা কারাগার আজো সৃষ্টি হয়নি।
…বিচারক জানে আমি যা বলছি, যা লিখেছি, তা ভগবানের চোখে অন্যায় নয়, ন্যায়ের এজলাসে মিথ্যা নয়। কিন্তু হয়তো সে শাস্তি দেবে। কেননা সে সত্যের নয়, সে রাজার। সে ন্যায়ের নয়, সে আইনের। সে স্বাধীন নয়, সে রাজভৃত্য। তবু জিজ্ঞাসা করছি, এই বিচারাসন কার? রাজার না ধর্মের? এই যে বিচার, এ বিচারের জবাবদিহি করতে হয় রাজাকে, না তার অন্তরের আসনে প্রতিষ্ঠিত বিবেককে, সত্যকে? ভগবানকে? এ বিচারককে কে পুরস্কৃত করে? রাজা, না ভগবান? না আত্মপ্রসাদ?
আজ ভারত পরাধীন। তার অধিবাসীবৃন্দ দাস। এটা নির্জলা সত্য।
কিন্তু দাসকে দাস বললে, অন্যায়কে অন্যায় বললে এ রাজত্বে তা হবে রাজদ্রোহ। এত ন্যায়ের শাসন হতে পারে না, এই যে জোর করে সত্যকে মিথ্যা, অন্যায়কে ন্যায়, দিনকে রাত বলানো এটা কি সত্য সহ্য করতে পারে? এ শাসন কি চিরস্থায়ী হতে পারে? এত দিন হয়েছিল, হয়তো সত্য উদাসীন ছিল বলে। কিন্তু আজ সত্য জেগেছে, তা চুষ্মান জাগ্রত-আত্মা মাত্রই বিশেষ রূপে জানতে পেরেছে। এই অন্যায় শাসনকিষ্ট বন্দী সত্যের পীড়িত ক্রন্দন আমার কণ্ঠে ফুটে উঠেছিল বলেই আমি রাজদ্রোহী?
আসুন। সবাই মিলে বলি, বহু হয়েছে, আর না।
লেখক – শিক্ষাবিদ ও নজরুল গবেষক।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এ/০২/০৮/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.