ফরিদপুর: জেলার বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের সভাপতির পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন না করায় সহকারী প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় এলাকাবাসী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে।
শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে ফরিদপুর সদর ও বোয়ালমারী উপজেলার সীমান্তবর্তী ভাটদি বঙ্গেশ্বরদী বাজারে কয়েকশ’ মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন। এসময় তারা বরখাস্তকৃত সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামকে স্বপদে বহালের দাবি জানান। মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।
জানা যায়, সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় বঙ্গেশ্বরদী’র প্রধান শিক্ষক মান্নান মল্লিক ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. ফিরোজ আহম্মেদ সদ্য সম্পন্ন হওয়া বোয়ালমারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেন। আর ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম অন্য প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে সহকারী প্রধান শিক্ষক সমর্থিত প্রার্থী পরাজিত হন।
এনিয়েই দ্বন্দ্বের শুরু। প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির রোষাণলে পড়েন সিরাজুল ইসলাম। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের প্রতিবাদ করায় আগে থেকেই ক্ষিপ্ত ছিলেন প্রধান শিক্ষক। এরই জের ধরে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির যোগসাজসে তাকে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়।
সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘করোনাকালীন এসএসসির পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত করায় ফরম ফিলাপের টাকা ফেরত আসে স্কুলে, যা শিক্ষার্থীদের ফেরত দেয়ার কথা। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ওই টাকা ফেরত দেননি। আমি একাধিকবার তাকে বলেছি, টাকা শিক্ষার্থীদের বুঝে দেন। কিন্তু তিনি আমার কথা শোনেননি। আমি টাকা ফেরত দিতে বলেছি বলে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে স্কুলে নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তিনি আমার ওপর ক্ষুব্ধ হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের সভাপতি এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করেন। আমি অপর এক প্রার্থীর নির্বাচন করি। নির্বাচনে আমার প্রার্থী পরাজিত হন। এরপর থেকেই প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি আমাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা শুরু করেন। কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাকে সভাপতি গত ১৯ জুন বরখাস্তের কাগজ ধরিয়ে দেন।’
সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি স্কুলে থাকলে কোনো অনিয়ম তারা করতে পারবে না, একারণে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি যোগসাজস করে আমাকে বরখাস্ত করেছে। আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। আমি প্রশাসন ও শিক্ষা কর্মকর্তার সহায়তা কামনা করছি।’
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সিরাজুল ইসলাম একজন প্রতিবাদী মানুষ। সব সময় তিনি ন্যায়ের পথে থাকেন। একারণেই প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি তাকে দেখতে পারে না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করাতেই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়েও মতবিরোধ ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি এক প্রার্থীর নির্বাচন করেছেন, আর সহকারী প্রধান শিক্ষক আরেক প্রার্থীর নির্বাচন করেছেন। এ থেকেই রোষাণলে পড়েন তিনি, পরে তাকে স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়।’
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলে, ‘সিরাজুল স্যারের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়মের প্রতিবাদ করাতেই স্যারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। স্যারকে স্বপদে ফেরাতেই আমরা আজকে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা কাশেম শেখ বলেন, ‘বর্তমানে স্কুলের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ। এর আগে তার ভাই খায়ের তিনিও এই স্কুলের সভাপতি ছিলেন। ওই সময়ও সিরাজুল স্যারকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তিনি স্বপদে বহাল হন। এরা দুই ভাই স্কুলটিকে রাজনীতির অঙ্গন বানিয়ে ফেলেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে স্কুলে পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী এখান থেকে অন্যত্র চলে যেতে চাচ্ছে। আমরা স্কুলে সুস্থ পরিবেশ চাই। জেলা প্রশাসক স্যারসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মান্নান মল্লিক বলেন, ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক অভিভাবক অভিযোগ দিয়েছেন সভাপতির কাছে। ওই অভিযোগে বলা হয়, সিরাজুল ইসলাম স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করাতে বাধ্য করেন। তার কথা না শুনলে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যরা হলেন ডা. হাবিবুর রহমান, কোমল কুমার সোম ও রবিউল সরদার। তারা এখনও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে কথা বলতে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. ফিরোজ আহম্মেদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। একারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের আগে ভাটদি বঙ্গেশ্বরদী বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আলেপ কাজী, বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সিদ্দীক মীর, চাঁদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তফা হোসেন, দাদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/৩০/০৬/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.