এইমাত্র পাওয়া
ফাইল ছবি

নতুন শিক্ষা ব্যবস্থাটা আমাদের আয়ত্তে আনাতে হবে

ঢাকাঃ আমার বড়ছেলে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। প্রায় পনেরোদিন ধরে স্কুলে জেলা পর্যায়ের সব মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলছে।

সেদিন হলো অভিভাবকদের মতবিনিময় সভা এবং কীভাবে বাচ্চাদের মূল্যায়ন করা হবে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ। এর আগেও যখন শিক্ষা ব্যবস্থায় নতুন পদ্ধতি শুরু হয়েছে আমাদের সমাবেশ করে শিক্ষকরা নিজেরা যেভাবে যতটুকু বুঝেছেন আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। আমি যেহেতু বিএড প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে এসব বিষয়ে সামান্য হলেও জেনেছি তাই আমার মূল্যায়নের ধারণা বুঝতে খুব বেশি অসুবিধা হয়নি এবং একটা দিক আমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে, আসল বিষয়গুলো সবই আছে একটু ঘুরিয়ে দেওয়া। খুব ভালোভাবে প্রশিক্ষণ না নিলে শিক্ষকরা ঠিকভাবে বিষয়গুলো বুঝাতে পারছেন না। যা আমার ধারণা ধীরে ধীরে সবার আয়ত্তে চলে আসবে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং অন্যান্য বিষয়ের শিক্ষকরা প্রজেক্টরের মাধ্যমে সব বই এবং বইয়ের ভিতরের অধ্যায়গুলো আমাদের দেখাচ্ছিলেন এবং জানতে চাইছিলেন কে কে এই বই এবং ভিতরের পড়াগুলো দেখেছেন। দুঃখের বিষয়, দুজন অভিভাবক ছাড়া আর কেউ হাত তুলেননি। বাচ্চাদের বাবারা যারা মিটিং শুরু হওয়ার আগে এক একজন তুখোড় আলোচক ছিলেন, তারা কেউ বাচ্চাদের বইও দেখেননি! এবং জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রারম্ভিক মূল্যায়নে কয়টি বিষয়ের মূল্যায়ন হয়েছিল? দুংখের বিষয়, এখানে শুধু আমার হাতটিই উঠেছিলো যেখানে অভিভাবক ছিলেন প্রায় দু‘শ জনের মতো। বাবাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কেন আপনারা বাচ্চাদের বই বা রেজাল্ট কোনটাই দেখেননি? উনাদের উত্তর ছিলো, আমরা তো সারাদিন বাইরে থাকি! তাজ্জব হয়ে গেলাম। আর মায়েদের উত্তর ছিলো বাচ্চারা বলেছে লেখাপড়া নাই, তাই আমরা বই বা রেজাল্ট দেখার প্রয়োজন মনে করিনি!

উভয়পক্ষের জবাবেই আমি বাকরুদ্ধ। শিক্ষকরাতো বটে। অভিভাবকদের মধ্যে অনেক শ্রেণিপেশার মানুষ আছেন। যারা নিজেদের পেশা নিয়ে হয়তো অনেক সিরিয়াস। কিন্তু নিজের বাচ্চার পড়াশোনার খবরও রাখেন না, অথচ হুজুগে বাঙালির মতো প্রতিবাদে মুখর। সব কিছুরই ভালো এবং মন্দ উভয় দিক আছে। কেন আমি সবকিছুর শুধু খারাপ দিকগুলো দেখব, তাও না জেনে! তাছাড়া একটি শিক্ষা ব্যবস্থা চাইলেই আপনি আমি পরিবর্তন করতে পারবো না। তার চেয়ে বরং সবকিছুর ভালোটাই আমরা গ্রহণ করি। নিজের বাচ্চার সব খবর নিজে রাখি, তাদের প্রতি মনযোগ দিই, তাদের বন্ধু হই, স্কুল নিয়ে প্রতিযোগিতা না করি, আমার বাচ্চারা অমুক স্কুলে পড়ছে, তোমার বাচ্চা কেন ঐসব হাবিজাবি! স্কুলে পড়ছে! এসব চিন্তাভাবনা থেকে সরে আসি। দেখবেন বাচ্চাদের নিয়ে আপনার টেনশন অনেকটা দূর হয়ে যাবে। এখন আর কার বাচ্চা ক্লাসে প্রথম হলো, কে তৃতীয় হলো এসব নিয়ে পাশের বাসার ভাবীর সাথে তর্ক করতে পারবেন না। কারণ মূল্যায়ন হবে স্কোর ভিত্তিক। যারা নিয়মিত স্কুলে যায় তাদেরকে আলাদাভাবে স্কোর দেওয়া হবে। সুতরাং বাচ্চাকে নিয়মিত স্কুলে পাঠালে পরবর্তী শ্রেণিতে সে উত্তীর্ণ হবেই।

আমি জানি না এভাবে সব স্কুলে মতবিনিময় সভা হয়েছে কিনা। মনে রাখবেন ফুলের মাঝেও কাঁটা থাকে। তাই বলে কি আমি হাত গুটিয়ে বসে থাকব? আমার এই কাঁটামুকুটের কাটিং করতে আমার হাতে অনেক কাঁটা লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি আপনি চাইলেই কিছু করতে পারব না। বুদ্ধিমানের কাজ হলো আমরা শিক্ষা ব্যবস্থাটা আমাদের আয়ত্তে আনার চেষ্টা করি। আপনি নিজে যদি বাচ্চার বইটা খুলেও না দেখেন, অথচ রাস্তায় দাঁড়িয়ে, টিভিশো করে, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এর বিপক্ষে গলা ফাটিয়ে ফেলেন, আপনার সন্তান আরও উৎসাহ পেয়ে যাবে। সুতরাং অভিভাবকরা প্লিজ একটু সচেতন হয়ে প্রতিবাদ না করে বাচ্চাদের উৎসাহিত করুণ। শিক্ষকরা আরও বেশি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করুন।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৭/১১/২০২৩ 

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.