শিক্ষা ক্যাডারের হাতছাড়া হচ্ছে শিক্ষার দপ্তরগুলো!

ঢাকাঃ সরকার এখন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির (আইসিটি) ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও আইসিটি গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েকটি বিসিএসে আইসিটি বিষয়ে বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ এ বিষয়টি ডিগ্রি বা অনার্স পর্যায়ের কলেজগুলোতে নেই। ফলে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পরও এ বিষয়ের শিক্ষকদের সহকারী অধ্যাপকের পরে আর কোনো পদ নেই।

শুধু আইসিটি নয়, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় সব বিষয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতিতেই জটিলতা রয়েছে। তবে পদ বেশি থাকায় কমন বিষয়গুলোর শিক্ষকরা বেশি পদোন্নতি পান। আনকমন বিষয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়।

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের আরেকটি বিষয় কৃষি। এ বিষয়ের কর্মকর্তাদের সহযোগী অধ্যাপক পদে থেকেই অবসরে যেতে হয়। ১৬তম বিসিএস কর্মকর্তা মু. আবুল কাসেম। নভেম্বরে তিনি অবসরে যাবেন। প্রায় ৩০ বছর চাকরি করার পরও সহযোগী অধ্যাপক পদেই তাকে অবসরে যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যোগ্যতা থাকার পরও অধ্যাপক পদ না থাকায় আমাদের পদোন্নতি হয়নি। একটা আক্ষেপ থেকে গেল। বিসিএস দিয়ে চাকরি পাওয়ার পরও আমরা বৈষম্যের শিকার।’

শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলেন, চাকরির বয়স পাঁচ-ছয় বছর হলে শর্ত পূরণ সাপেক্ষে সব ক্যাডারের কর্মকর্তারাই পদোন্নতি (ষষ্ঠ গ্রেড) পান। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারে সে সুযোগ নেই। অনেককেই এক পদে ১০-১২ বছর চাকরি করতে হয়। ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি হয় না। অন্য ক্যাডারে এর জন্য পদ খালি থাকার প্রয়োজন হয় না। তারা সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি পান। শিক্ষা ক্যাডারে পদ খালি নেই বলে পদোন্নতি হয় না। নতুন পদও সৃষ্টি করা হয় না।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রভাষক থেকে ১২-১৩ বছরেই অধ্যাপক হয়ে যান। কিন্তু বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা এ সময়ে সহকারী অধ্যাপকেই আটকে থাকেন। প্রায় সব ক্যাডারে গ্রেড-১, গ্রেড-২, গ্রেড-৩ পদ আছে, কেবল শিক্ষা ক্যাডারে নেই। আদালতের রায়ে শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপকরা গ্রেড-৩ পেলেও তা এখনো কার্যকরী হয়নি। কার্যত শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা চতুর্থ গ্রেডের ওপরে যেতে পারেন না। অন্য সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা সহজেই তা টপকে যান। এমনকি ক্যাডার পরিবর্তনের মাধ্যমে উপসচিব মর্যাদায় উন্নীত হতে অন্যান্য ক্যাডারের সঙ্গে শিক্ষা ক্যাডারের অন্তত ১০ ব্যাচের পার্থক্য থাকে।

প্রায় সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা চাকরির শুরু থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী সরকারি গাড়ির সুবিধা পান। শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যক্ষরাও তা পান না। অল্প কিছু সরকারি কলেজ বা প্রতিষ্ঠানে গাড়ির সুবিধা আছে, তবে অধিকাংশ কলেজেই নেই। পরীক্ষা চলার সময় শিক্ষা ক্যাডারের বড় কর্মকর্তাদের ভ্যানে বা ভাড়া গাড়িতে করে প্রশ্নপত্র আনতে হয়।

বিসিএস শিক্ষকরা বলছেন, অন্যান্য ক্যাডারের সদস্যরা চাকরিজীবনে ১০০ থেকে ১৫০টি অভ্যন্তরীণ, বিভাগীয় ও বিদেশি প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। অথচ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা জাতিগঠনের কারিগর হয়েও ৩০-৪০টির বেশি প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান না।

ক্যাডার কম্পোজিশন রুলস ১৯৮০ অনুযায়ী সব ক্যাডার কোন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর বা পরিদপ্তরে পদায়িত হবেন তা নির্দিষ্ট। বেশ কিছু দিন ধরে শিক্ষা ক্যাডারের ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে তাদের জন্য তেমন কোনো দপ্তর নেই। শিক্ষা ক্যাডারের শিডিউলভুক্ত যে পদগুলো আছে তা অন্যরা দখল করে নিচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরসহ শিক্ষার একাধিক দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের হাতে চলে গেছে। শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা যাতে এসব দপ্তরে আর না আসতে পারেন, সে জন্য বিধিও প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব দপ্তর দীর্ঘদিন শিক্ষা ক্যাডারের অধীনেই ছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হয়তো কোনো কর্মকর্তা মৎস্যের একটি দপ্তরে ছিলেন, তিনি এখন শিক্ষায়, আবার হয়তো তিনি পরিবেশে চলে যাবেন। এতে শিক্ষার মানোন্নয়ন কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে না। শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা শিক্ষার দপ্তরে থাকলে তারা মানোন্নয়নে বেশি ভূমিকা রাখতে পারতেন।

পদোন্নতি, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনসহ একাধিক দাবিতে সরকারের শেষ সময়ে আন্দোলনে নামেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা। এ মাসেই তারা দুই দফায় চার দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন। আরও দুদিনের কর্মবিরতির ডাক দিলে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি কর্মসূচি স্থগিত করে।

তাদের দাবি, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদকে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ, অর্জিত ছুটি প্রদান ও ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি বাতিল, শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত পদ থেকে অন্য ক্যাডারের লোকদের প্রত্যাহার ও প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব মো. শওকত হোসেন মোল্যা বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, যে পদগুলো মন্ত্রণালয়ের হাতে আছে, সেগুলো শিক্ষার ক্যাডাররাই পূরণ করবেন। অন্য দাবিগুলো পূরণে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। তবে এসব ব্যাপারেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নেবে। আমরা কিছুদিন দেখব। যদি অগ্রগতি দেখতে না পাই, তাহলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।’ সূত্রঃ দেশ রূপান্তর

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৫/১১/২০২৩  

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.