ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

মাদারীপুরঃ জেলার সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের ২৭নং লক্ষ্মীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের ৭ বছরের মধ্যেই স্কুল ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এরপরও জরাজীর্ণ দুটি ভবনে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ের মাঠে পানি জমে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এর ফলে দিন দিন ক্রমেই কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। দীর্ঘদিন ধরে একটি নতুন ভবনের দাবি তুললেও তা এখনও নির্মাণ হয়নি।

বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার রাস্তি ইউনিয়নের লক্ষ্মীগঞ্জ গ্রামে ১৯৫৪ সালে ২৭নং লক্ষ্মীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সালে বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হলেও ২০১৩ সালেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। আর সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে পড়াশোনা। এদিকে বিদ্যালয়ে দুটি কক্ষ থাকায় একটি রুমের মধ্যে টিনের বেড়া দিয়ে তিনটি শ্রেণিকক্ষ তৈরি করে চলছে পাঠদান।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনের বিভিন্ন দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদ থেকেও পলেস্তারা খসে পড়ছে। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন। ভবনের পাশেই পুরাতন ও জরাজীর্ণ একটি টিনসেড ভবন রয়েছে। এই ভবনের তিনটি রুমে ক্লাস নিতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এই কক্ষগুলোর অবস্থা আরও জরাজীর্ণ। নেই দরজা, জানালা। অনেক আগেই ভেঙে গেছে দরজা ও জানালা। টিনের চালও জরাজীর্ণ ঘর থেকে তাকালে আকাশ দেখা যায়। বৃষ্টি হলে কক্ষের মধ্যে পানি পড়ে। জরাজীর্ণ টিনশেড ভবনের মধ্যখানের একটি ছোট রুমে এক সঙ্গে বসতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের দপ্তরিকেও।

ফলে ছোট এই অফিস রুমে কোনোরকমে চলছে বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল সকল কাজ। এতে করেও প্রধান শিক্ষকসহ ৭ জন সহকারী শিক্ষক ও একজন দপ্তরিকে পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়।

এছাড়া বিদ্যালয়ের টয়লেটের অবস্থাও জরাজীর্ণ। নোংরা টয়লেটেই যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এর ফলে দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে দেড়শ শিক্ষার্থী আছে।

বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রুবেল হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে ভবনের এখানে আমরা খেলাধুলা করেছিলাম। তখন ভবনের পলেস্তারা খসে আমাদের পাশে পড়ে। তখন আমরা খুব ভয় পেয়েছিলাম। কখন জানি এই দেয়ালটা ভেঙে আমাদের মাথার ওপরে পড়ে সবসময় এই আতঙ্কে থাকি।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মুন্নি বলেন, আমাদের স্কুলের অবস্থা অনেক খারাপ। এই স্কুলের দরজা ও জানালা নেই। তাই একটু বৃষ্টি হলে আমাদের বই-খাতা-কলম ভিজে যায়। তাছাড়া বিদ্যালয়ের টয়লেটের অবস্থাও খুব খারাপ।

চর্তুথ শ্রেণির ছাত্র তামিম বলেন, আমাদের এই টিনশেড ঘরে পড়াশুনা করতে কষ্ট হয়। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে আমাদের বই-খাতা ভিজে যায়। তাই আমাদের নতুন ভবন চাই। আমরা এই স্কুলে অনেক ঝুঁকি নিয়ে আসি কখন জানি আমাদের মাথার ওপরে দেয়াল ভেঙে পড়ে।

চর্তুথ শ্রেণির ছাত্রী জুথি বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের টয়লেটের অবস্থাও খুব খারাপ। বৃষ্টি নামলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। আমাদের ক্লাস থেকেও আকাশ দেখা যায়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাদারীপুর সদর উপজেলার প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. লুৎফর রহমান হাওলাদার বলেন, এই বিদ্যালয়ের ভবনের যে অবস্থা, তাতে যে কোন মুহূর্তেই ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হতে পারে। তাই আমি অনুরোধ করব, এই ভবনটি যেন নতুন ভবন করা হয়। তাছাড়া বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষই জরাজীর্ণ, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ক্লাস করতে পারছে না।

বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী আবুল বাসার বলেন, বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন জরুরিভাবে দরকার। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।

মাদারীপুর সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দাতুন্নেসা রূপা বলেন, মানসম্মত শিক্ষা সেবা নিশ্চিতকরণে সরকার ও শিক্ষা কর্তৃপক্ষের রয়েছে নানাবিধ উদ্যোগ। এ বিদ্যালয়ের ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক। তাই এর মেরামত ও নতুন ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১০/১০/২০২৩     

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.