অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: ‘ভিয়েতনাম পারলো, বাংলাদেশ পারবে কবে?’Ñ এই শিরোনামে সমকাল পত্রিকায় সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকের লেখা একটি আর্টিকেল পড়লাম। বেশ তথ্যবহুল লেখা। কথা হলো বাংলাদেশ কি কখনো পারার চিন্তা করে পলিসি ঠিক করছে বা পারার চেষ্টা করছে? কিছুদিন ভিয়েতনামের ভিয়েতনামের পঞ্চম বৃহত্তম শহরের একটি ছবি পোস্ট করেছিলাম। দেখলে যেকোন পশ্চিমা সভ্য দেশের ছবি মনে হতে পারে। ভিয়েতনামের দুইটা বিশ্ববিদ্যালয় খুব দ্রুত ওয়ার্ল্ড রেঙ্কিং-এ ৪০০ থেকে ৫০০ এর মধ্যে চলে এসেছে। কয়েক বছর আগে তাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে ১০০০ এর মধ্যেও ছিল না। ভিয়েতনামের জনসংখ্যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। আমেরিকায় লেখাপড়া করছে এইরকম ভিয়েতনামের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ হাজারের বেশি যেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর এর অর্ধেক যদিও আমাদের জনসংখ্যা ওদের দ্বিগুণ। এতে প্রমাণিত হয় এদের লেখাপড়ার মান আমাদের চেয়ে বেটার। সমকালের আর্টিকেলে ঠিক এই কথাটাই বলার চেষ্টা করেছে।
সমকালের আর্টিকেলটি শুরু হয় এই প্যারাগ্রাফ দিয়ে ‘ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে যেমন মিল আছে, শিক্ষাক্ষেত্রেও তাই। তবে গত কয়েক বছরে শিক্ষায় ভিয়েতনাম যে আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের মতো একটা অবস্থানে থেকে যাত্রা শুরু করে তারা কেন এবং কীভাবে এতটা এগিয়ে গেলো?’ এর উত্তরটি লেখক দেননি অথবা দিতে চাননি। লেখাপড়া ও গবেষণার মান বাড়াতে হলে এই খাতে বিনিয়োগ করতে হবে। আসমান ফাইরা উন্নতি নেমে আসবে না। আপনারা কি জানেন শিক্ষায় জিডিপির শতাংশে ভিয়েতনামের বাজেট বরাদ্দ কত? ২০২০ সালে শিক্ষায় তাদের বাজেট জিডিপির ৪.১১% এবং এইটা প্রতিবছর বাড়ছে। আর আমাদের এই বছরের বাজেট হলো জিডিপির ১.৭৬% যা প্রতি বছর কমছে। তাহলে বলুন তো কীভাবে আমাদের শিক্ষা ও গবেষণার উন্নতি হবে? ইন ফ্যাক্ট, লেটেস্ট রিপোর্ট হলো: Vietnam spends 4.9% of GDP on education!
যেই সরকার যখনই শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ হঠাৎ বৃদ্ধি করে তখনই এর একটা মেসেজ গোটা দেশে প্রবাহিত হয়। সেটা হলো এই সরকার শিক্ষা ও গবেষণায় উন্নতি করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, সংকল্পবদ্ধ। এইরকম একটি মেসজের বিরাট ইমপ্যাক্ট আছে। আর বরাদ্দ যখন আগের বছরের চেয়ে কমে যায় তারও একটা মেসেজ আছে। সেটা হলো এই সরকার শিক্ষা ও গবেষণাকে পাত্তা দেয় না।
আমরা স্বাধীন হই ১৯৭১ সালে আর ভিয়েতনাম স্বাধীন হয় ১৯৭৬ সালে। ইতোমধ্যেই তারা আমাদের চেয়ে এগিয়ে গেছে এবং যেই গতিতে আগাচ্ছে খুবই শীঘ্রই তারা আমাদের ধরাছোঁয়ার বাহিরে চলে যাবে। খুব শীঘ্রই এরা চীন ও দক্ষিণ কোরিয়াকে কাছাকাছি চলে যাবে। আমাদের মূল সমস্যা আমরা সুশিক্ষিত, সৎ, কর্মঠ মানুষ তৈরী করিনি। আমরা তৈরী করেছি দুর্নীতিবাজ, পাচাকারী, লুটপাটকারী মানুষ। তারা দেশকে ফোটা করে সম্পদ নিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশের ট্যাক্সের টাকায় শিক্ষিত হয়ে নিজের দেশকে না গড়ে অন্য দেশকে গড়ছে। যারা বিদেশে পড়তে ও গবেষণা করতে যাচ্ছে তাদের একটি অংশকে ফিরিয়ে আনার কোন উদ্যোগ নাই। ভালো মানের ইন্সিটিউট নাই যে তারা ফিরে এসে দেশে এসে কাজ করতে পারে।
আমাদের সবাই ছাড়িয়ে যাবে। শুধু ভিয়েতনাম নাম না। রুয়ান্ডাও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালি বিশ্বের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহরগুলোর একটি এবং আফ্রিকার সবচেয়ে সুন্দর শহরের খেতাব লাভ করেছে। এক সময় দক্ষিণ কোরিয়াও আমাদের মতই ছিল। যতদিন পর্যন্ত আমরা শিক্ষাকে মেরামত করতে মনোযোগী না হবো ততদিন এই দেশের সত্যিকারের উন্নয়ন হবে না। সত্যিকারের শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে ধান্দাবাজ আর দুর্নীতিবাজে দেশ সয়লাব হওয়াটাই স্বাভাবিক।
লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.