Breaking News

স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডার বিলুপ্ত হোক

নাজমুল হোসেন।।

আমার কাছে চিকিৎসক আর শিক্ষক দেবতাতুল্য। কারণ এই দুই পেশার মানুষের সমাজে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখার সুযোগ আছে। কিন্তু বাংলাদেশে দলাদলিতে শ্রদ্ধার আসন হারাচ্ছেন ডাক্তার আর মাস্টার মশাই। তাদের ক্যাডারভুক্ত করে স্বৈরাচার এরশাদ বারোটা বাজিয়েছেন।

ক্লাসের সেরা মেধাবীর প্রথম পছন্দ থাকে মেডিকেল কিংবা বুয়েট। অথচ চাকুরী জীবনে এসে দেখে মাথার ওপর ছড়ি ঘুরাচ্ছেন ভিন্নকেউ। তখন মানতে কষ্ট হয় তৈরী হয় মনোবেদনা আর সিস্টেম লস।`

করোনা আক্রান্ত ৬০ জন মৃত বাংলাদেশির মধ্যে দুইজনের নাম সবাই জেনেছেন বেশি। দুইজন ২২তম বিসিএস ক্যাডারের অফিসার, দুদকের পরিচালক জালাল সাইফুর রহমান এবং ডাঃ মঈন। এখন সরকারী চিকিৎসকেরা তাদের প্রতি রাষ্ট্রের অবহেলার অভিযোগ করছেন। তাদের ক্ষোভ এডমিন ক্যাডারের ওপর। কারণ একজন এসিল্যান্ড সড়কে মারাত্মক আহত হলে তাকে হেলিকপ্টারে নিয়ে আসার হয় আর পিপিই ছাড়া চিকিৎসা দিয়ে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ডাক্তারকে ভাড়া করা এ্যাম্বুলেন্সে আনতে হয় ঢাকা। অথচ এটাও সত্য ওসমানী মেডিকেলে সহকর্মিরাই ডাঃ মঈনের পাশে ছিলেন না। এই দোষারোপ চলতেই থাকবে।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। বাংলাদেশের দুইটি খাতে এনজিওদের দাপট বেশি। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত। কারণ দাতাগোষ্ঠী খুব ভালো করেই জানে, এই দুই খাতের উন্নয়ন মানেই বাংলাদেশ স্বাবলম্বী হয়ে যাবে। তাই উন্নয়নের বদলে বাংলাদেশকে গরীব দেখতেই তারা পছন্দ করে। আর একশ্রেণীর বাংলাদেশি আছেন যারা বিদেশী ভিক্ষায় বেঁচে থাকতে পছন্দ করেন। এনজিওগুলোর বেশিরভাগই নিয়ন্ত্রণ করেন সাবেক বাম নেতারা।মুখে সুন্দর বুলি আর স্বার্থের প্রশ্নে সবাই একাট্টা।

দেশের বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট ই্উনির্ভাসিটি লাভজনক। তাই মালিকেরা এই সেক্টরের সুরক্ষার জন্য রাজনীতিতে জড়িয়ে যান। আর নিজেদের ফায়দা রক্ষা করেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বেসরকারি হাসপাতাল নামক কসাইদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাবেন তখন বেসরকারি একটি হাসপাতালের মালিকরা একহয়ে সরকারের কাছে লোকদেখানো নাকে খত দিচ্ছেন। এসবকিছুর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সরকারের এক ডাক্তার প্রতিমন্ত্রী। যার নামেই একটা বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে।

অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করোনার সময় অনলাইনে ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছেন। কারণ সেমিস্টার ফি মওকুফ করতে তারা নারাজ। অথচ এসব শিক্ষা ব্যবসায়ীরা করোনা অজুহাতে শিক্ষকদের বেতন কম দিচ্ছেন। করোনা সংকটের সময় কোন বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা হাসপাতাল নিজেরাই স্বউদ্যোগে গবেষণা করতে নারাজ। বরং ফেসবুকে ত্রাণের নামে শিক্ষক সমিতি, বিএমএ, স্বাচিপ নেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে নৈরাজ্যের কারণে প্রতিবছর অসংখ্য মেধাবী জনগণের ট্যাক্সের টাকায় প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেলে পড়ালেখা শেষ করেই উন্নত ভবিষ্যতের জন্য বিদেশ চলে যান। সেখানেই স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেন। বাংলাদেশি কমিউনিটি শক্তপোক্ত হয়। এরপর বৃদ্ধ বাবা-মাকে বিদেশে নিতে টানাটানি শুরু হয়।

মাত্র বিশ লাখ টাকার শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, আমেরিকা, নেদারল্যান্ড, জার্মানি কিংবা জাপান বাংলাদেশের মেধাবীদের নিজেদের আজীবনের সম্পদ বানিয়ে নেয়। আর কিছুদিন পরপর পত্রিকায় হেডলাইন দেখি, অমুক আবিস্কার করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বিজ্ঞানী কিংবা চিকিৎসক। আমরা খুশিতে আত্মহারা হই। তৃপ্ত হই। অথচ গরীব দেশের টাকা খরচ করে এসব মেধাবীরা বিদেশেই স্থায়ী হচ্ছেন বাধ্য হয়ে। সরকার সুযোগ করে দিলে এই রত্মগুলো বাংলাদেশে ফিরে আসতো। কিন্তু সেই ব্যবস্থা বাংলাদেশে নেই।

ধরা যাক, পাটের জন্মরহস্য আবিস্কারক ড. মাকসুদূল আলমের কথা। বাংলাদেশি বংশদ্ভেূাত বলেই উনি জীবন সায়াহ্নে দেশকে প্রতিদান দিয়ে গিয়েছেন। কারণ তাঁকে সরাসরি সহযোগিতা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নইলে আমলাতান্ত্রিক ম্যারপাঁচে ভদ্রলোকের জীবন কাহিল হয়ে যেত। অনেক প্রবাসী মেধাবী বাংলাদেশি মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চান কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের সিস্টেম তাঁকে স্বাগত জানায় না।

বঙ্গবন্ধু আমলাতন্ত্রকে ভাঙতে চেয়েছিলেন বলেই বাকশাল পদ্ধতি চালু করেছিলেন। কিন্তু বাকশাল সফল করার আগেই তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পাকিস্তান আমলে প্রতাপশালী ছিলো আর্মি অফিসাররা। আর বেশিরভাগ সিএসপি অফিসার আর্মিদের কাছ থেকে ফায়দা নিতো কিন্তু বাঙালির উন্নয়নে কিছুই করেনি । সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্রের কারণে সবসময় অবহেলিত ছিলো গোটা পূব পাকিস্তান। বাঙালি সিএসপি অফিসারদের কিছু ছিলেন দেশপ্রেমিক।

শোষণ আর বঞ্চণার বিষটি বুঝতে পেরে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন ছয় দফা প্রস্তাব। বঙ্গবন্ধুর মত রাজনীতিবিদদের কাছে ছয়দফা প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন বাঙালি শিক্ষক এবং আমলারা। বঙ্গবন্ধুর সাথে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসির মঞ্চে যেতে প্রস্তুত ছিলেন বাঙালি সেনা আর আমলারা। অথচ স্বাধীনতার পর সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক দৌরাত্বের অবসান হয়নি ।

বঙ্গবন্ধু সরকারের শিক্ষাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ড. কবীর চৌধুরীকে।কিছু আমলা সেই সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি। তারা মাস্টার মশাইকে ফেল করাতে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। দশজন আমলা গিয়ে ছলে বলে ড. কবীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কাছে নালিশ জানাতে শুরু করেন।পরবর্তীতে তাঁকে সরিয়ে নিয়মিত আমলাকেই শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়।

১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পররাষ্ট্র, প্রশাসন এবং পুলিশ ক্যাডারদের নিয়োগ দেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযোদ্ধা এই ব্যাচের লৌকিক নাম সেভেনটিথ্রি ব্যাচ। আমলাতান্ত্রিক ম্যারপাঁচ বন্ধ করতেই বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করেন। সেনা, এডমিন, পুলিশ, শিক্ষক সবাইকে তিনি একাতারে নিয়ে আসেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি। তাইতো বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর আমলাদের চরিত্র বদলাতে সময় লাগেনি।

জিয়া এবং এরশাদের আমলে সিভিল আমলাদের গায়ে টোকা লাগেনি। কারণ অন্য আমলারা শুধু এডমিন ক্যাডারকেই ভয় পান। একারণেই ক্ষমতা পোক্ত রাখতে সাবেক সেনা অফিসারদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী কিংবা উপদেষ্টা পদে বসালেও সচিব পদে হাত দেননি।

জিয়াউর রহমান আমলাতান্ত্রিক বিভাজন তৈরী করতে একটা ছক কষেন। বাস্তবায়নের শুরুতেই নিহত হন তিনি। স্বৈরাচার এরশাদ জিয়ার নেয়া প্রায় সব কিছু এগিয়ে নিয়ে যান। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে ২৭টি ক্যাডার তৈরী করেন। যেই বিধান এখনও চলমান। এরপর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রকৌশলসহ বিভিন্ন ক্যাডারের অফিসাররা এডমিন ক্যাডারকে দোষারোপ করেই চলেন। আর নিজেদের বঞ্চিত ভেবে হতাশ হয়ে যান।

এরশাদ উপজেলা সিস্টেমকে সফল করতে ১৯৮৪ এবং ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয় শতাধিক উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেন। এরপর শুরু হয় মাথাভারী প্রশাসনের যাত্রা। চেয়ার নেই কিন্তু অফিসার অনেক। অফিসারদের সাহেব বানাতে সাভারে লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র – বিপিএটিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। যেখানে একজন তরুণ-তরুণীকে মানুষ থেকে অফিসার বানানোর ট্রেনিং দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়।

শুধু সহকারী কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া অফিসাররা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দপ্তরের চেয়ার দখল করা শুরু করেন। এই ধারা এখনও অব্যাহত আছে। যেমন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের শুরু থেকেই চেয়ারম্যান পদে শিক্ষকরাই আসীন ছিলেন। ওয়ান ইলেভেনের পর ড. সা’দত হোসাইন চেয়ারম্যান হওয়ার পর শিক্ষকেরা তাদের হারানো চেয়ারে আর বসতে পারেননি। একই অবস্থা সায়েন্স ল্যাবের চেয়ারম্যান পদেও। অদূর ভবিষ্যতে ইউজিসির চেয়ারও হয়তো হাতছাড়া হয়ে যাবে। কারণ সংস্থাটির সাংগঠনিক কাঠামো প্রশাসন ক্যাডারের আদলে করা হয়েছে।

চিকিৎসকদের একই অবস্থা। তাদের সর্বোচ্চ পদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজি। সরকারী হাসপাতালের পরিচালক এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বড় চেয়ারগুলো অনেক আগেই চিকিৎসকদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। এরমধ্যে চিকিৎসকরা নিজেরাই সকাল আটটা থেকে দুপুর ২টা অফিস নিয়ম চালু করেছেন। যাতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে অল্পদিনেই কোটিপতি হওয়া যায়। হাসপাতালের জুনিয়র অফিসাররা কলুর বদলের মত দায়িত্ব পালন করেন কিন্তু প্রফেসর সাহেব মাসে একটা অপারেশন করতে নারাজ। তিনি ব্যস্ত ব্যক্তিগত লাভের বিষয় নিয়ে। বিএমএ, স্বাচিপ, ড্যাব নামের সংগঠনগুলো আছে ডাক্তারদের দলবাজ বানাতে।

ক্লাসের মেধাবী ছেলে কিংবা মেয়েটি কিন্তু বুয়েট অথবা মেডিকেলে পড়ালেখার সুযোগ পায়। কিন্তু সার্ভিসে এসে দেখে তাদের সর্বোচ্চ পদ প্রধান প্রকৌশলী কিংবা ডিজি হেলথ। তখন একধরণের হতাশা তৈরী হয়। অনেকেই তখন নিজের সার্ভিসকে ভালোবাসার বদলে নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকেন। একারণেই হতাশা তৈরী হয়। একারণে ইদানিং একজন বুয়েট স্নাতক কিংবা ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকের বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম পছন্দ থাকে এডমিন কিংবা পুলিশ। কারণ হাসপাতালের পরিচালকের জন্য বরাদ্দ হাইস গাড়ি আর একজন ডিসি কিংবা এসপি পান পাজেরো গাড়িসহ অনেক সুযোগ সুবিধা।

আমাদের সমাজব্যবস্থা সরকারী আমলাদের ক্ষমতাকে কুর্নিশ করে। যেকারণেই একজন রাজনীতি করা ত্যাগী সৎ নেতার পাশে কেউই থাকে না। ছাত্ররাজনীতি করে মূল রাজনীতিতে আসা তৃণমূলের রাজনীতিবিদ মানুষটি অল্পতেই কোটিপতি হতে চান। কারণ তার কাছে মানি মানেই পাওয়ার। সেই পলিটিক্যাল পাওয়ারের কারণে পুচকা আমলারা ভালো পোস্টিং কিংবা সুবিধার রাজনীতিবিদের পেছনে ছোটেন। আর রাজনীতিবিদ কোনমতে গ্রুপিং সাইজ হলেই আমলাদেরও পল্টি নিতে সময় লাগে না।

একজন ডিসি কিংবা এসপি সাহেব মাঠ প্রশাসনে নিজেদের কর্তৃত্ব জাহির করতে ব্যস্ত থাকেন। কারণ তাদের হাতেই রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা। এমন একটা বলয় তৈরী করেন যখন প্রধানমন্ত্রী বাধ্য হয়ে নিজ দলের নেতা-কর্মিদের পরিবর্তে ডিসি-এসপি সাহেবদের ওপর আস্থাশীল হতে হয় । সমালোচকেরা বলেন, ডিসি সাহেবরা এখন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আর এসপি সাহেবরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ওসি সাহেব থানা আওয়ামী লীগের মা-বাপ।

অনেকে বলেন, এখন জেলায় হয় ডিসিমেলা আর উপজেলায় হয় ইউএনও মেলা। অমুক দিবস, তমুক দিবস, অমুক স্কুল কমিটির চেয়ারম্যান, তমুক কমিটির সভাপতি ইত্যাদি। অনেক অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত সময় পার করতে হয় মাঠ প্রশাসনের অফিসারদের। এর মধ্যে আছে প্রটোকল নামক জবরদস্তিমূলক সম্মান নেয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা। মাঠ প্রশাসনের মূল কাজ বাদ দিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইউএনও কিংবা ওসি সাহেব হুকুম বাস্তবায়ন করতেই ব্যস্ত সময় পার করেন। অথচ এখন অনেক মানবিক ডিসি-এসপিদের আমরা দেখতে পারি। আবার উদ্ভাবনী ক্ষমতা নিয়ে অনেক ইউএনও-এসিল্যান্ড-ওসিরা বিভিন্ন উপজেলার চিত্র বদলে দিচ্ছেন।

আমি বিশ্বাস করি, ইদানিং মাঠ প্রশাসনের অফিসারদের সেবার মানসিকতাই বেশি। নইলে করোনা ভাইরাসের সময় উনারা যেভাবে জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের স্যালুট দেই। পুলিশ সদস্যরা একাত্তরের রাজারবাগের শহীদ পুলিশ সদস্যদের উত্তরসূরি হিসেবে কাজ করছেন। কারণ করোনা মহামারীতে পুলিশ নিয়ে মানুষের নেতিবাচক ধারণা বদলের পরীক্ষা। আমার বিশ্বাস, পুলিশ এই যুদ্ধে সফল হবেই।

আমার মতে, শিক্ষা ও চিকিৎসা দুই খাতকে ক্যাডার সার্ভিস থেকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্র কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা সময়ের দাবি। তাহলে এডমিন-পুলিশ ক্যাডারের সাথে তুলনা করে শিক্ষক কিংবা চিকিৎসকেরা দ্বিধায় ভুগবেন না। ব্যাংকারা নিজেদের মত করেই চলতে পারলে মাস্টার-ডাক্তার মশাইও পারবেন। সমাজে চিকিৎসক এবং শিক্ষক দেবতাতুল্য। তাদের সেই সম্মানের আসনে বসানো উচিত।

আমার মতে, আমলাতন্ত্রের চাবিকাঠি এডমিন ক্যাডারের হাতেই থাকা উচিত। জুনিয়রদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া উচিত। গাইবান্ধার ডিসি সাহেব সাদুল্লাপুরের ইউএনও নবীনেওয়াজের সাথে যেটা করেছেন তা খুবই দু:খজনক। সাহসী ইউএনও সাহেব ২২ মার্চ উপজেলা লকডাউন করলে ডিসি সাহেব তা অস্বীকার করে নিজেদের দৈন্য প্রকাশ করেছেন। আমার বিশ্বাস, ডিসি সাহেবকে কোনও সচিব হয়তো ধমক দিয়েছেন।

প্রশাসন কতটা চমৎকার হয় তার উদাহরণ প্রতিবেশি দেন ভারত। দেশটির মন্ত্রিপরিষদ সচিব রাজিব গাউবা করোনা ভাইরাস যুদ্ধের প্রধান সেনাপতি। তবে সেদেশের জুনিয়র অফিসাররা রাজনৈতিক দলাদলির মধ্যে নয়, নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ পান। বাংলাদেশেও নিশ্চয়ই আমতান্ত্রিক লালফিতার দৌরাত্ব বন্ধ হবে একদিন। উদ্যোমী অফিসাররা এগিয়ে নিয়ে যাবে মাঠ প্রশাসনকে।

আর চিকিৎসকদের মধ্যে সিনিয়রদের উপদেষ্টা রেখে পুরো স্বাস্থ্যখাতকে তরুণদের হাতে ছেড়ে দেন। সাফল্য আসবেই। কারণ এই করোনা পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

তাই স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডার বিলুপ্ত করা উচিত। কারণ এই ক্যাডার প্রথার কারণে অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরী হচ্ছে। দেবতারা অসুর হয়ে যাচ্ছেন। তাদের জন্য সবচেয়ে বড় জনতার সম্মান আর আর্থিকভাবে স্বচ্ছল রাখলে বাংলাদেশ বদলে যাবে। ব্যাংকারদের মতই স্বতন্ত্র থাকুক আমাদের চিকিৎসক এবং শিক্ষকেরা।

এবার ভিন্ন অভিজ্ঞতা বলি। সেদিন এক ব্যাংকার ছোটভাইয়ের অভিজ্ঞতা শুনে তাজ্জব বনে গেলাম। লকডাউনের মধ্যে একজন গ্রাহক সাড়ে ছয় লক্ষ টাকার ব্যালান্স থাকলেও মাত্র দুই হাজার টাকা তুলতে এসেছেন। জিজ্ঞাসা করতেই সোজা উত্তর, ঘরে বোর ফিল করছিলাম, তাই পুলিশকে চেক দেখিয়ে ব্যাংকে এসেছি। পরেরদিন আসবেন এই দুই হাজার টাকা জমা দিতে।

কে বেশি সৌভাগ্যবান? বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নাকি কানাডার প্রধানমন্ত্রী? নি:সন্দেহে কানাডার। কারণ, কানাডার জনগণ করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের কথা মেনে চলেন। আর বাংলাদেশি আমজনতা প্রধানমন্ত্রীকে সহযোগিতা না করে নিজেদের খেয়ালখুশি মতোই চলতে পছন্দ করেন। যত কড়া নির্দেশেই দেয়া হোক না কেন তা না মানার মধ্যে যত কৃতিত্ব! আর দোষ সব সরকারের।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Check Also

বিসিএস আন্তক্যাডার বৈষম্যের অবসান হবে কবে

তুহিন ওয়াদুদঃ বিসিএস ক্যাডারের পদোন্নতির নৈরাজ্য আজও দূর করা সম্ভব হয়নি। বিসিএসে এক ক্যাডারের সঙ্গে অন্য …