নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার ঢাকা আঞ্চলিক উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক। মূল পদ সরকারি হাইস্কুলের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি আয়নাঘরের (গুম হত্যা, নির্যাতন ও মুঠোফোনের আড়িপাতা) মুলহোতা ও জনক মেজর জেনারেল (চাকুরিচ্যুত) জিয়াউল আহসানের আপন বোন। ক্ষমতার দাপটে চাকরিজীবনের ৩২ বছরের ৩০ বছরই ঢাকা শহরে কর্মরত রয়েছেন। পতিত হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও ক্ষমতার দাপট কমেনি নাজমুন নাহারের। বর্তমানে ডিডি অফিসকে ঘুসের রাজ্যে পরিণত করেছেন তিনি। গত ১৯ অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে “ঢাকাতেই কর্মজীবন আয়নাঘরের হোতার আপন বোন ‘ঘুসখোর’ মাউশির নাজমুন নাহার” শিরোনামে শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশের পর তুমুল আলোচনা সমালোচনা ঝড় ওঠে। তবে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চলতি দায়িত্বের সহকারি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে পদায়ন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। স্কুল্টিতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় নাজমুন নাহারকে এখানে পদায় করে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেওয়াই মুল উদ্দেশ্য।
গতকাল রবিবার (২৯জুন) মাউশির মাধ্যমিক শাখা থেকে তাকে চলতি দায়িত্বের সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদায়ন করা হয়।
আয়নাঘরের (গুম হত্যা, নির্যাতন ও মুঠোফোনের আড়িপাতা) মুলহোতা ও জনক মেজর জেনারেল (চাকুরিচ্যুত) জিয়াউল আহসানের পরিবারের সাথেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে নাজমুন নাহারের সন্তান। শুধু জিয়া আহসানই নয় নাজমুন নাহারের আরেক ভাই আওয়ামী দুঃশাসনের সময়ের ঢাকা ও বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে (প্রায় আট বছর চেয়ারম্যান ছিলেন যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ সময়) সাবেক চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক ও আওয়ামী লীগের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র জিয়াউর রহমান বিপ্লবের বোন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী আমলের সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী নাজমুন নাহার কর্মজীবনের শুরুতে নিজ জেলা বরিশালে কয়েক বছর চাকরি করলেও গত ২৫ বছর টানা ঢাকাতেই তার কর্মজীবন। আওয়ামী ক্ষমতায় তার বিরুদ্ধে কথা বলার মত কারও কোন সাহস ছিল না। বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সিন্ডিকেট তাকে শেরেবাংলা নগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব দিতে মরিয়া হয়ে উঠে। সেই উদ্দেশ্যেই তাকে স্কুলটিতে চলতি দায়িত্বের সহকারী প্রধান শিক্ষ পদে পদায়ন করা হয়।
তাকে এই পদে কিভাবে পদায়ন দিল মাউশি এ বিষয়ে অধিদপ্তরটির কোন কর্মকর্তা কথা বলতে রাজী হননি। এমনকি মাউশির মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেলের মুঠোফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আঞ্চলিক ডিডি অফিসে নামমুন নাহারের দায়িত্ব অভিযোগ প্রতিকারে ব্যবস্থা, জেলা শিক্ষা অফিসার, প্রধান শিক্ষকগণের ভ্রমণ বিল অনুমোদন, অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীদের পাসপোর্ট করার অনুমতি, গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন খেলাধুলার আয়োজন, নৈমিত্তিক ছুটি ব্যতীত বিভিন্ন প্রকার ছুটি সংক্রান্ত আবেদন নিষ্পত্তি, বদলীজনিত কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তান ভর্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়ন ব্য্যন সংক্রান্ত এবং সকল ধরনের আইনগত বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ফাইল উঠানো এবং সেগুলো যাচাই বাছাই করে উপ-পরিচালকের কাছে প্রেরণ করা। কিন্তু নাজমুন নাহার টাকা ছাড়া এই ফাইল ছাড়েন না। টাকা পেলে দ্রুত ফাইল নামে মাত্র যাচাই করেই ডিডির নিকট প্রেরণ করেন। আর যারা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান তাদের ফাইলে কোন ধরণের ত্রুটি না থাকলেও তা আটকে রাখেন। তার ক্ষমতার দাপটে বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননা। ফলে টাকা দিয়েই ফাইল উঠাতে হয়।
শিক্ষাবার্তা’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি, সরকারি বরিশাল কলেজ থেকে ১৯৮৬ সালে এইচএসসি পাস, ১৯৮৯ সালে সরকারি মহিলা কলেজ, বরিশাল থেকে ডিগ্রী পাস করেন নাজমুন নাহার। এরপর ১৯৯২ সালের সহকারী শিক্ষক পদে বরিশাল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় যোগদান করেন। এর বছর খানেক সেখানে চাকরি করে শেরে বাংলা নগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি করিয়ে নেন। সেখানেও দের দুই বছর চাকরি করে মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলিয়ে হয়ে ৩৩ বছরের চাকরি জীবনের দুই যুগের বেশি এখানেই চাকরি করেন তিনি। মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকুরিকালে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক ও সহকর্মীদের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তটস্ত করে রাখতেন তিনি। পতিত হাসিনার সরকারের শেষ সময়ে তিন ভাইয়ের ক্ষমতার প্রভাবে সহকারী প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব বাগিয়ে নিয়ে গত ১৬ মে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে মাউশির ঢাকা আঞ্চলিক অফিসে সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক পদে পদায়ন বাগিয়ে নেন। এখানে এসেই দুর্নীতি ঘুস বাণিজ্য এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সহকর্মীদের তটস্ত করে রাখছেন তিনি। তবে সরকারের বদল হলেও এবং তার ভাই আয়নাঘরের মাস্টারমাইন্ড জিয়াউল হক চাকুরিচ্যুত ও গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে থাকলেও এবং ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক অবসরে চলে গেলেও তার ক্ষমতা প্রভাব কমেনি।
সার্বিক বিষয়ে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের মহাসচিব জাকির হোসেন শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, আওয়ামী আমলের এসব প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে যদি এখনও মাউশি এভাবে পদায়ন করে তাহলে নির্যাতিত ও বঞ্চিত কর্মকর্তা যাবে কোথায় ? অবিলম্বে তার এই বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে ঢাকার বাইরে পাঠাতে হবে। এবং তার অপকর্মের বিরুদ্ধে তদত্ন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/৩০/০৬/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.