এইমাত্র পাওয়া

কুবিতে টেন্ডার প্রদানে ফের অনিয়ম, সরকারের আর্থিক ক্ষতি প্রায় সাড়ে ৮ লাখ

কুমিল্লাঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ১ কোটি টাকার টেন্ডার ঘিরে অনিয়ম ও পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটেছে। ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৪১ হাজার ৪৭১ টাকা।

জানা যায়, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি ইজিপিএ ওয়েবসাইটে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় (দরপত্র নং-১০৬০০৭১)।

কাজের সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারিত হয় ৯৯ লাখ ৯২ হাজার ৫৬৯ টাকা। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ৭টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হল রিউনিক ইঞ্জিনিয়ারস, এম/এস হামিম এন্ড ব্রাদারস, এম/এস জে এন্ড ট্রেডার্স, এম/এস ভুইয়া এন্টারপ্রাইজ, জে এন্ড জাহাঙ্গীর ব্রাদার্স, এম/এস আমিন ট্রেডার্স এবং এম/এস বিটস এন্ড বাইটস।

টেন্ডারটিতে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোলায়মান, সদস্য সচিব তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আবদুল লতিফ এবং সদস্য হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস. এম শহিদুল হাসান দায়িত্ব পালন করেন।

কমিটির তথ্যমতে, ৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ৩টি প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। সেগুলো হলো জে এন্ড জাহাঙ্গীর ব্রাদার্স ‍যারা বিট করেন ৯০ লাখ ৭৫ হাজার ৩৭ টাকা, অপরদিকে এম/এস আমিন ট্রেডার্স ও এম/এস বিটস এন্ড বাইটস বিট করেন যথাক্রমে ৯৩ লাখ ৭৪ হাজার ২৬২ টাকা এবং ৯৯ লাখ ১৬ হাজার ৫০৮ টাকা।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ এর ধারা ৪৮ (২) অনুযায়ী, দরপত্র দাখিলকৃত প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সর্বনিম্ন দরপত্র দাখিলকৃত প্রতিষ্ঠানটি টেন্ডার পেয়ে থাকে। তবে সীমানা প্রাচীরের এই টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরপত্র দাখিলকারী প্রতিষ্ঠান জে এন্ড জাহাঙ্গীর ব্রাদার্স (৯০ লাখ ৭৫ হাজার ৩৭ টাকা) হলেও টেন্ডার প্রদান করা হয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান এম/এস বিটস এন্ড বাইটসকে (৯৯ লাখ ১৬ হাজার ৫০৮ টাকা)।

এ বিষয়ে জে এন্ড জাহাঙ্গীর ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মহিউদ্দিন সজল অভিযোগ করেন, ‘এই টেন্ডারের জন্য শহিদুল স্যার আমাকে ডাকাইছে, ট্যাম্প করাইছে। সবকিছু ঠিকই ছিল। এরপর হঠাৎ করে আমাকে জানাইলো, উনাদের কে জানি কী ভুল ধরছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী ভুল। তারা আমাকে কোনো জবাবই দিতে পারলো না। ভুল থাকলে কী ভুল সেটা জানার তো অধিকার আমার আছে। আমার অনেকগুলো টাকা এভাবে ক্ষতি করাইয়া এইরকম করা অন্যায় হইছে।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি বলছে, শুধু সর্বনিম্ন দর দিলেই যে প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হবে, এমন নয়। তারা প্রতিষ্ঠানের পূর্ব কাজের রেকর্ড, অভিজ্ঞতা, সুনাম সকল কিছু বিবেচনাপূর্বক টেন্ডার প্রদান করা হয়।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য ও টেন্ডার ওপেনিং কমিটির আহ্বায়ক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এস. এম শহিদুল হাসান বলেন, ‘এই ক্ষেত্রে রেসপন্সিভ হওয়া লাগে। কেউ যদি ব্লাক লিস্টেড হয় তাহলে আমরা তাকে দিতে পারি না। ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স, ব্যাংক ট্রান্সপারেন্সি এবং বিভিন্ন বিষয় যাচাই করেই যিনি রেসপন্সিভ হয়েছেন তাকেই দেওয়া হয়েছে।’

তবে জে এন্ড জাহাঙ্গীর ব্রাদার্স বা এম/এস বিটস এন্ড বাইটস কেউই ব্ল্যাকলিস্টেড নয়। বরং ২ প্রতিষ্ঠানের আগের কাজের রেকর্ড ঘেঁটে দেখা গেছে তারা পূর্ববর্তী কাজ নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক দেরিতে শেষ করেছে এবং উভয় প্রতিষ্ঠানকেই জরিমানাও গুনেছে। জে এন্ড জাহাঙ্গীর ব্রাদার্স ২০১৯ সালে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার জুরানপুর মদিনাতুল উলুম আলিম মাদ্রাসার অ্যাকাডেমিক ভবনের নির্মাণে ৫৪৫ দিন দেরি করায় ২৫ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা গুনেছে। অপরদিকে বিটস এন্ড বাইটস কুমিল্লার জুনাব আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা ভবনের কাজে ৩২৩ দিন দেরি করায় ১৭ হাজার ৪১৬ টাকা জরিমানা দিয়েছে।

টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমি কমিটিতে আছি কিনা সঠিক বলতে পারতেছি না। এইগুলা শহিদুল স্যার ভালো বলতে পারবেন।’

কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোলায়মানের সঙ্গে ২৫ মে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এইটা তো অনেক আগের কাজ, আমাকে জেনে বলতে হবে। আপনি ২-৩ দিন পর আসেন।’ তবে পরবর্তীতে ২৮ মে তার অফিসে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, ‘যদি এমন হয় তাহলে এতে সরকারের ৯ লাখ টাকা ক্ষতি। তবে শুধু সর্বনিম্ন বিট করলেই যে সে পাবে ব্যাপারটা এমন না। এক্ষেত্রে কোয়ালিটিকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়।’

এর আগে, ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর বিজ্ঞাপন দেওয়া কম্পিউটার সরবরাহ সংক্রান্ত টেন্ডারের দরপত্রে সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া সত্ত্বেও ওয়াল্টন ডিজি-টেক কোম্পানিকে টেন্ডার প্রদান না করায় কোম্পানিটি বাংলাদেশ প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮-এর ৫৬ ধারায় আপত্তি জানালে এতে সরকারের ক্ষতি হয়েছিল ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৩৫০ টাকা।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/৩০/০৫/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading