এইমাত্র পাওয়া

মনিটরিং নেই, ‘লার্নিং লস’ হচ্ছে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের

ঢাকাঃ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফেরায় পরিবর্তিত শিক্ষাক্রমে অনেক শিক্ষার্থী নিজেকে এর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

বক্তারা বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ নির্দেশনা না দেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের এক ধরণের ‘লার্নিং লস’ বা শিখন শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এই শিখন শূন্যতা পূরণেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি নতুন বছরের প্রায় দুই মাস চলে গেলেও শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য অংশের হাতে এখনও বই পৌঁছেনি। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, শিক্ষা আদৌ সরকারের অগ্রাধিকারে আছে কিনা?

মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে শিক্ষা অধিকার সংসদ আয়োজিত ‘ফ্রম লার্নিং লস টু লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট’ শিরোনামের ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনিনুর রশিদ বলেন, সরকার পরীক্ষার নির্দেশনা দিয়েছে বটে, কিন্তু শ্রেণিকক্ষে কী হচ্ছে, তা কি মনিটর করছে? মনে হচ্ছে, কেবল পরীক্ষা নেওয়াই তাদের মূল কাজ। পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরে যাওয়ার কারণে সময়ের অভাবে একদিনেই হয়তো এক অধ্যায় শেষ করতে হচ্ছে। এতে তাদের শিখন ঠিক হচ্ছে না।

তিনি বলেন, নতুন করে আবার রমজান ও এসএসসির কারণে বড় ছুটিতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতেও শিখনশূন্যতা বাড়বে। ২০২৬ সালের জন্য সরকার নতুন শিক্ষাক্রমের কথা বললেও এখনও সে কাজ শুরু করছে না কেন? সরকার অনেক কমিশন করেছে, কিন্তু শিক্ষা কমিশন করেনি। তার মানে কি সরকার শিক্ষার বিষয়ে সিরিয়াস নয়?

শিক্ষা অধিকার সংসদের আহ্বায়ক ও নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির প্রফেসরিয়াল ফেলো অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, জুলাই বিপ্লব শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এক সুযোগ তৈরি করেছিল। জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে মৌলিক এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের সূচনা করার অনন্য পরিবেশ ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ২০২৪ সালের জুলাই পরবর্তী বিপ্লবের পর শিক্ষা খাতে অস্থিরতায় দেখছি। স্পষ্ট নির্দেশনা ও যোগাযোগ ছাড়াই ২০১২ সালের পাঠ্যক্রমে হঠাৎ ফিরে যাওয়া শিক্ষক, ছাত্র ও অভিভাবকদের অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে। স্কুল বন্ধ, পাঠ্যপুস্তক বিলম্ব, বিষয়বস্তু পরিবর্তন এবং প্রতিকারমূলক ব্যবস্থার অভাব শিখন সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলে মনে হচ্ছে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে — শিক্ষায় স্পষ্ট নির্দেশনা এবং দৃঢ় নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

শিক্ষার কাজে বাংলাদেশে সফররত ক্যাথোলিক ইউনিভার্সিটি লিউভেনের অধ্যাপক স্যান্ডি টুবেউফ তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। যে কারণে শিখন শূন্যতা তৈরি হয়। শিখন শূন্যতার কারণে এমনকি ঝড়ে পড়ার ঘটনাও ঘটে। শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়। শিক্ষকদের ওপরও চাপ তৈরি হয়।

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ২০২৩ সালে বিগত সরকার যে শিক্ষাক্রম রচনা করেছে, তা আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে অনেক দিক থেকেই যথার্থ হয়নি। যার ফলে চব্বিশের বিপ্লবের পর আমরা ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমে ফিরে গেছি। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা যথাযথ দিক-নির্দেশনা পাইনি। শিক্ষার্থীরা যারা নতুন শিক্ষাক্রমে ছিলো, পুরনো শিক্ষাক্রমে যাওয়ার কারণে নতুন করে সৃজনশীল লেখাসহ অনেক বিষয়েও তারা হোঁচট খাচ্ছে।

বাংলার ম্যাথের সহপ্রতিষ্ঠাতা আহমেদ শাহরিয়ার বলেন, কোভিডের সময়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে শিখনশূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তার মূল্যায়ন কিংবা সেই শিখনশূন্যতা পূরণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জুলাই বিপ্লবের কারণে পাঠ্যপুস্তকের পরিবর্তন জরুরি ছিল, কিন্তু এরপরও পাঠ্যপুস্তক পেতে যে দেরি হয়েছে, সেটি অগ্রহণযোগ্য।

রাজধানীর মনেস্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না পারভীন বলেন, পুরনো শিক্ষাক্রমে ফিরে গেলেও শিক্ষকরা যেহেতু আগে এই শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত ছিল, সেজন্য সমস্যা হয়নি। শিক্ষা প্রশাসন থেকেও সিলেবাস নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন শিক্ষা অধিকার সংসদের অফিস কোঅর্ডিনেটর মো. মিনহাজুল আরেফিন। শিক্ষা অধিকার সংসদ এর সঙ্গে ওয়েবিনারের সহ-আয়োজক ছিল বাংলার ম্যাথ।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৬/০২/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.