এইমাত্র পাওয়া

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: কোটা নির্ধারিত আসনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি

রাবিঃ চলতি বছর জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হয় কোটা বাতিল নিয়ে। এই আন্দোলনে এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সর্বসাধারণ এই আন্দোলনে যোগ দেয় বৈষম্যবিহীন একটি রাষ্ট্র দেখার প্রত্যাশায়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখনো সংস্কারের ধারা শুরু হয়নি। 

এর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ভর্তিতে এখনো চার ধরনের কোটা বহাল রয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি কোটা রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের ভর্তির ক্ষেত্রে। রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা। এসব বিশেষ কোটায় অকৃতকার্য হয়েও ভর্তির অভিযোগ রয়েছে।

আবার কোটার নির্ধারিত আসনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগও রয়েছে। এ বিষয়ে সংস্কারের দাবিতে সম্প্রতি উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দীন আম্মার।

অনগ্রসর বা সুবিধাবঞ্চিত না হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের কেন বিশেষ কোটা দিয়ে ভর্তি করানো হচ্ছে, তা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তির সংখ্যা কমিয়ে আনা এবং পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও ভর্তির সুযোগ পান ৭১ জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে সংরক্ষিত পোষ্য (ওয়ার্ড) কোটা, খেলোয়াড় কোটা এবং বিশেষ বিবেচনায় তাঁদের এই ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়। নির্ধারিত পাস মার্ক না পাওয়ার কারণে পোষ্য কোটার আসনগুলো খালি ছিল। ২০২২ সালের ৭ নভেম্বর ভর্তি উপকমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক, আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের সন্তানদের ভর্তির আবেদন করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে পাস নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে ৩০ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে ৭১ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পান।এ ছাড়া পরে বিভিন্ন সময়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। 

স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিচালনাসংক্রান্ত ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশে ভর্তির বিষয়ে কোটাসংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধার স্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে ভর্তির বিষয়ে কমিটিকে ক্ষমতা দিয়ে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভর্তি কার্যক্রমে অধ্যাদেশের ৪৬ ধারা অনুযায়ী ভর্তি কমিটি দ্বারা নির্ধারিত কার্যপ্রণালী অনুসরণ করতে হবে। ধারণা করা হয়, এই ধারাকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েই ভর্তি পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টার সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের জন্য প্রতি বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের আসনসংখ্যার ৫ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য প্রতি বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে ৪ শতাংশ কোটার পদ্ধতি চালু রয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষেই বিশেষ কোটায় ভর্তি হয়েছেন ৪২৮ জন। এর মধ্যে পোষ্য কোটায় ৭৯ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৯৪ জন, প্রতিবন্ধী কোটায় ৯৮ জন এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৫৭ জন শিক্ষার্থী।

আইসিটি সেন্টার সূত্রে আরো জানা যায়, গত পাঁচ শিক্ষাবর্ষে কোটায় ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় ৯৬ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১৮৫ জন, প্রতিবন্ধী কোটায় ৯৪ জন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৪১ জনসহ মোট ৪১৬ জন শিক্ষার্থী। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় ১০০ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২৬২ জন, প্রতিবন্ধী কোটায় ৯৫ জন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৫৫ জনসহ মোট ৫১২ জন শিক্ষার্থী।

২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় ১১৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০৯ জন, প্রতিবন্ধী কোটায় ৯৪ জন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৫৮ জনসহ মোট ৪৭৪ জন শিক্ষার্থী। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে পোষ্য কোটায় ৩৯ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২২৩ জন, প্রতিবন্ধী কোটায় ৭১ জন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৬০ জনসহ মোট ৩৯৩ জন শিক্ষার্থী।

আবার অভিযোগ আছে, বিশেষ কোটার নির্ধারিত আসনেরও বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। আইসিটি সেন্টারের তথ্য মতে, মুক্তিযোদ্ধাদের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের জন্য প্রতি বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে আসনসংখ্যার ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে। সে হিসাবে তাদের মোট আসন হবে ১৯০টি। কিন্তু সেখানে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি করা হয়েছে ২৬২ জন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ২০৯ জন এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ২২৩ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া চলতি শিক্ষাবর্ষে ১৯৪ জনকে ভর্তি করানো হয়।

শিক্ষার্থীরা বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় একটি আসনের বিপরীতে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আসনসংকট ও ভর্তির তুমুল প্রতিযোগিতার মধ্যেও কোটাব্যবস্থার কারণে অনেক অযোগ্য শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়ে যান। এতে এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘কোটাব্যবস্থা নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি জানি। আমরা তাদের এই সংস্কারমূলক দাবির বিষয়ে আগামী ৫ নভেম্বরের মিটিংয়ে একটি কমিটি গঠন করব। ওই কমিটির কাজ হবে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাপদ্ধতির পর্যালোচনা করে একটি নতুন রিপোর্ট সুপারিশ করা।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৩/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.