গাজীপুর: ৯ দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল গাজীপুরের চন্দ্রা ও মাওনা এলাকা। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষের ঘটনায় শ্রীপুরে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
শনিবার (৩ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশ নেন।
পুলিশ, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী জানায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এতে ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই সময় পুলিশ ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মাওনা হাইওয়ে পুলিশের দুটি বক্সে ব্যাপক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে শিক্ষার্থীরা শ্রীপুর থানা পুলিশের তিনটি পিকআপ ও মাওনা হাইওয়ে থানার দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। তারা মাওনা উড়াল সেতুর নিচে বিভিন্ন মার্কেটের সামনে রাখা লোকজনের বেশ কয়েকটি গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর করে।
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় এক ব্যবসায়ী নিহত হন। আহত হন ১৫ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শটগানের গুলি, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে পুলিশ শটগানের গুলি ও টিয়ারসেল ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
এ সময় মাওনা চৌরাস্তা এলাকার লেপতোশকের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) নিহত হন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা এবং প্রায় ৭ বছর আগে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় লেপতোশকের ব্যবসা শুরু করেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান জানান, নিরস্ত্র হাতে পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে শ্রীপুর সড়কের ভাই ভাই সিটিতে অবস্থান করছিল। এসময় আন্দোলনকারীরা হঠাৎ করে নিরস্ত্র পুলিশের ওপর হামলা করে। একপর্যায়ে তারা ভাই ভাই সিটির নিচে রাখা পুলিশের তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা উড়াল সেতুর নিচে হাইওয়ে পুলিশের দুটি বক্সেও আগুন দেয়।
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্র ত্রিমোড় এলাকায় শত শত শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। একপর্যায়ে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও চন্দ্র-নবীনগর সড়ক অবরোধ করে। এতে ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা ১০-১২টি যানবাহন ভাঙচুর করে। এর আগে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা চন্দ্রা মোড় এলাকায় বিক্ষিপ্ত মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকে। এতে পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা চলে যায়। ওই এলাকায় পুলিশ থাকলেও শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের কোনো সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
গাজীপুর শহরের শিমুলতলী এলাকায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেছে। শিক্ষার্থীরা জয়দেবপুর-শিমুলতলী সড়ক অবরোধ করে মহাসড়কে অবস্থান নেয়। তারা ৯ দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে।
শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ও পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে উত্তাল ছিল গাজীপুর।
নাওজোর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদাত হোসেন জানান, দুপুর ১২টার দিকে বিভিন্ন স্কুল কলেজে শতশত শিক্ষার্থী চন্দ্র এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। তবে এখানে কোনো ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া কিংবা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। পরে শিক্ষার্থীরা বিকেল ৪টার দিকে ওই এলাকা ত্যাগ করে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৮/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.