নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোরঃ একাধিক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানী ও অনৈতিক আচরণের অভিযোগে অভিযুক্ত জেলার কোতোয়ালী থানার জঙ্গলবাধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারী পরোয়ানা ছিল। তার গ্রেফতারের খবরে স্থাণীয়দের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে চলেছে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
এর আগে গত ২৫ জুন ২০২৩ ইং তারিখে “একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানী করেও বহাল তবিয়তে প্রধান শিক্ষক জুলফিকার” শিরোনামে শিক্ষাবার্তা”য় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জানা গেছে,বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য নাজিম উদ্দিনের বিভিন্ন ছাত্রীকে করা যৌন হয়রানীর প্রতিবাদ করায় তার মেয়ে মেহনাজকেও ছাড়েননি প্রধান শিক্ষক। বাবার প্রতিবাদে মেয়েকেও যৌন হয়রানি করা থেকে রেহাই দেননি প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী। উপায় না পেয়ে যশোর জেলা আদালতে প্রধান শিক্ষকের নামে যৌন হয়রানীর মামলা করেন অভিভাবক সদস্য নাজিম উদ্দিন। বর্তমানে সেই মামলায় প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে প্রধান শিক্ষক হাইকোর্ট থেকে কয়েক দফায় জামিন নিয়েছিলেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফাতেমা মেধা ও মরিয়ম সুধা জঙলবাধাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেনিতে পড়াশোনা করে। তারা আপন দুই বোন। শুধু এক জনের সঙ্গে নয় এই দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গেই অনৈতিক আচরণ, শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে এই অপ্রত্যাশিত আচরণ করেন প্রধান শিক্ষক। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অন্যান্যদের দ্বারস্থ হয়ে বিচার চান এই দুই শিক্ষার্থীর মা শারমিন খাতুন। এই ঘটনায় স্কুলটি দাতা সদস্য শফিকুল ইসলাম এবং অভিভাবক নাজিম উদ্দিন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিন্টুর কাছে অভিযোগ দেন। সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলীর নিকটাত্মীয় (মামা শ্বশুর) হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো অভিযোগকারীকেই বিভিন্নভাবে দোষারোপ করা হয়। পরবর্তীতে বাধ্য হয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে মাউশি মহাপরিচালক, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ একাধিক দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন তিনি।
শুধু ঐ দুই শিক্ষার্থীই নয়, শিক্ষাবার্তার পক্ষ থেকে বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির অন্তত দশ জন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বললে এদের মধ্যে অন্তত ছয় জন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষকের বাজে আচরণের শিকার হন যা তারা বাবার বয়সী একজন প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে কখনই প্রত্যাশা করেনি।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তারাও প্রধান শিক্ষকের এই অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানেন তবে তাদের কিছু করার নেই বলে জানান। তারা জানান, বিদ্যালয়টি প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি দুইজন মিলে নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে। তারা ইচ্ছামত বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন।
স্থানীয় এবং স্কুল সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ বছর যাবত বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্বে আছেন শহিদুল ইসলাম মিন্টু যিনি প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলীর আপন মামা শ্বশুর। গত ৫০ বছর ধরে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন শহিদুল ইসলাম মিন্টুর পরিবার। শহিদুল ইসলাম মিন্টুর বাবা ছিলেনে এই স্কুলের টানা ৪৩ বছর ধরে সভাপতি। এরপর শহিদুল ইসলামের বড় ভাই সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মারা গেলে শহিদুল ইসলাম মিন্টু বর্তমানে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। শহিদুল ইসলাম মিন্টুর পরিবারের মেয়ের জামাই হবার সুবাদে প্রধান শিক্ষক জুলফিকার আলী তাঁর ইচ্ছে মত অপকর্মগুলো চালিয়ে যাচ্ছেন। আর জুলফিকার আলীর অপকর্মের বিষয়ে কোন ছাত্রী যেন মুখ খুলতে না পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির নারী শিক্ষক প্রতিনিধি ফাউজিয়া পারভিন এবং সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিন্টুর স্ত্রী শহিদা আক্তার। কোন শিক্ষার্থী কথা বললেই এই দুই শিক্ষিকা তাদের বিরুদ্ধে অকট্য ভাষায় গালাগালি থেকে শুরু করে শ্রেণি কক্ষে খুবই বাজে ব্যবহার করেন। ফলে শিক্ষার্থী ভয়ে কথা বলতে সাহস করেনা।
জানা গেছে, ভুক্তোভুগী শিক্ষার্থীর পরিবার, ম্যানেজিং কমিটির দুই সদস্য জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ এবং স্থানীয়রাসহ স্বারকলিপি পেশ করলে তদন্তের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। তদন্তের দায়িত্ব পান জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম আজম। তদন্তের ২৪ দিন পর গত অদ্য ২২ মার্চ ২০২৩ তারিখে সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে আসেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছুটির পর তদন্ত শুরু করেন এবং প্রধান শিক্ষকের কিছু নিকটজনকে হ্যা না প্রশ্নে তদন্ত করেন। তদন্তে পক্ষপাত দেখা দাতা সদস্য, অভিভাবক সদস্য ও স্থানীয়রা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে পক্ষপাতের বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যান। এরপর আর কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তদন্তের পক্ষপাতের অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন দাতা সদস্য এবং অভিভাবক সদস্য।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/১২/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.