এইমাত্র পাওয়া
অধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজ। ছবিঃ সংগৃহীত

জালিয়াতির মাধ্যমে ১৭ বছর ধরে অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম পারভেজ!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চার বছর প্রভাষক পদে চাকরি করেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং প্রভাষক পদে পাঁচ বছরের মাথায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন মো. মইনুল ইসলাম পারভেজ। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার হুলিয়ারপাড়া জামেয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া আলিম  মাদ্রাসার বর্তমান অধ্যক্ষ  (ইনডেক্স নং— ৩২০৮৫৮) । এমনই অভিযোগের সত্যতা মিলেছে নিয়োগ সংক্রান্ত পত্রাদি ঘেটে। শুধু তাই নয় নানা অনিয়মের কারণে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এই অধ্যক্ষের এমপিও বাতিল কেন হবে না জানতে চেয়ে শোকজ করা হয় চলতি বছরের গত ২৫ জুন । এছাড়াও মাদ্রাসার উন্নয়নে লন্ডন প্রবাসীদের দেওয়া  অনুদানের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় চলতি বছরের গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর  ১৬ দিনের কারাবরণ করেন (বর্তমানে জামিনে আছেন) এই অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষের নানা অনিয়ম নিয়ে গত ২ অক্টোবর “অনিয়মের হোতা অধ্যক্ষ মইনুলকে অধিদপ্তর শোকজ করলেও বন্ধ হয়নি এমপিও” শিরোনামে শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

শিক্ষাবার্তা’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০০ সালের ৩০ এপ্রিল হলিয়ারপাড়া জামেয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদ্রাসায় আরবি প্রভাষক পদে যোগদান করেন মো. মইনুল ইসলাম পারভেজ। এরপর ১, অক্টবোর ২০০৪ সাল থেকে ১০ নভেম্বর ২০০৫ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৫ সালের ১১ নভেম্বর তিনি অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান। অর্থ্যাৎ প্রভাষক পদে যোগদানের মাত্র পাঁচ বছর ৬ মাস ১২ দিনের মাথায় তিনি প্রভাষক থেকে সরাসরি অধ্যক্ষ নিয়োগ পান।

জানা গেছে, ১৯৭৮ সালের ১২ এপ্রিল মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৮৯ সালের পহেলা জানুয়ারি দাখিলের অনুমোদন পায় মাদ্রাসাটি। ১৯৯৬ সালের ৭ জানুয়ারি আলিমের অনুমোদন পাওয়ার পর পর্যায় ক্রমে ফাজিলের অনুমোদন পেয়ে পাঠদান শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো ১৯৯৫ অনুযায়ী, আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হতে হলে দাখিল মাদ্রাসায় আট বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অথবা মাদ্রাসায় প্রভাষক পদে আট বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রথম শ্রেণীর কামিল ডিগ্রীসহ সকল পরীক্ষায় ২য় শ্রেণী/বিভাগ, যদি কামিল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ না থাকে সেক্ষেত্রে  ইসলামিক স্টাডিজে দ্বিতীয় শ্রেণীর মাস্টার্স ডিগ্রীসহ সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ।

একই কাঠামো অনুযায়ী, ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ  হতে হলে কামিল/ফাজিল মাদ্রাসায় প্রশাসনিক অথবা মুহাদ্দিস মুফাসসির / ফকীহ/ আদীব পদে অথবা সহকারী অধ্যাপক পদে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা; অথবা আলিম মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, দ্বিতীয় শ্রেণীর কামিল ডিগ্রীসহ সকল পরীক্ষায় ২য় শ্রেণী/বিভাগ অথবা দ্বিতীয় শ্রেণীর কামিল ডিগ্রীসহ আরবী/ইসলামিক স্টাডিজে দ্বিতীয় শ্রেণীর মাস্টার্স ডিগ্রীসহ সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ/শ্রেণী অথবা দ্বিতীয় শ্রেণীর কামিল ডিগ্রীসহ বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী ভাষার উপর ডিগ্রী এবং সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ।

আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হতে হলে দাখিল মাদ্রাসায় আট বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অথবা মাদ্রাসায় প্রভাষক পদে আট বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে ছিল আরবি প্রভাষক পদে মাত্র পাঁচ বছর ৬ মাস ১২ দিনের। যেখানে কাম্য যোগ্যতা আট বছরের সেখানে মাত্র পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি কিভাবে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেলেন তা জানেন না বর্তমান মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট কেউ-ই।

জানা গেছে, মো. মইনুল ইসলাম পারভেজ ২০০০ সালে যখন আরবি প্রভাষক পদে নিয়োগ লাভ করেন তখন মাদ্রাসাটি ছিল শুধু আলিম পর্যায়ে। বর্তমানে মাদ্রাসাটি ফাজিল পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি ও স্বীকৃতি রয়েছে। আলিম মাদরাসায় আরবি প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে হলে অবশ্যই কামিল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ সহ সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজ ২০০০ সালের ৩০ এপ্রিল নিয়োগ পেলেও তিনি কামিল পাশ করেছেন ২০০০ সালে নিয়োগ পাওয়ার পরে। জানা গেছে, মোঃ মঈনুল ইসলাম পারভেজ একই সনে ফাজিল এবং বি.এ. অনার্স ডিগ্রি পাস করেন (সমমনা একই ডিগ্রি এক সাথে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়ার সুযোগ নেই।

শিক্ষাবার্তা’র অনুসন্ধান ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে, মোঃ মঈনুল ইসলাম পারভেজ এই মাদ্রাসায় আরবী প্রভাষক হিসাবে যোগদানের পর সম্পূর্ণ বে-আইনী ভাবে জগন্নাথপুর পৌরসভার ৩, ৪ এবং ৬নং ওয়ার্ডের কাজী হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। কাজীপদে অবৈধ ভাবে, তথ্য গোপন করে নিয়োগ লাভের পর তৎকালীন এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়। লাভজনক কাজীর পদটি টিকিয়ে রাখার জন্য মোঃ মঈনুল ইসলাম পারভেজ মাদ্রাসার প্রভাষক পদ থেকে ২০০৪ সালের ৯ মে তারিখে পদত্যাগ করেন। ২০০৪ সালের ২৮ মে তারিখে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে মোঃ মঈনুল ইসলামকে জানানো হয়, যেহেতু তিনি জামেয়া কে.এস, মাদ্রাসার প্রভাষক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সেহেতু তাকে কাজীর পদে থাকতে কোন অসুবিধা নাই। মাদ্রাসায় তিনি মোঃ মঈনুল ইসলাম পারভেজ এবং কাজী পদে তিনি মোঃ মঈনুল ইসলাম নাম ব্যবহার করছেন। অর্থ্যাৎ একই ব্যক্তির দুই নাম দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজের কাছে জানতে চাইলে তিনি শিক্ষাবার্তা’য় গত ৮ অক্টোবর তারিখে ‘অনিয়মের হোতা অধ্যক্ষ মইনুলকে অধিদপ্তর শোকজ করলেও বন্ধ হয়নি এমপিও‘ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে প্রশ্ন ছুড়ে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে কাম্য অভিজ্ঞতা ছাড়াই কিভাবে নিয়োগ পেলেন এবং কামিল পাশের আগেই কিভাবে আরবি প্রভাষক পদে নিয়োগ লাভ এবং প্রভাষক পদ থেকে পদত্যাগ করেও অধ্যক্ষ হবার বিষয়ে জানতে চেয়ে তার ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি তা সিন করে কোনো উত্তর দেননি।

জানতে চাইলে মাদরাসাটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফয়জুল ইসলাম এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাজেদুল ইসলাম ইসলাম এর মুঠোফোনে কল করলে বিষয়টি শুনে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে পরে ফোন করতে বলেন পরে ফোন এবং মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি আর সারা দেননি।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাকে কখনই কেউ জানাননি। ইউএনও থেকে শুরু করে মাদরাসা অধিদপ্তর পর্যন্ত তার এই অনিয়মের বিষয়টি জানেন উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আমার কাছে তার অনিয়মের ডকুমেন্টসগুলো দেন। অবশ্যই তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৩/১০/২০২৩    

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.