কুষ্টিয়াঃ উদ্বোধনের মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই বন্ধ করে দিতে হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনের দুটি লিফট। চালু অবস্থায় লিফট দুটিতে একাধিকবার ভেতরে আটকে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ওভার লোড কন্ট্রোল ও অটোমেটিক উদ্ধারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেন্সর না থাকায় এ সমস্যা দেখা দেয়। লিফট এখন ইবির শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম ।
এদিকে বাজারের সবচেয়ে নিম্নমানের অর্থাৎ ‘সি’ ক্যাটাগরির লিফট ভবনে বসানো হয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। যেটির ধারণক্ষমতাও খুবই কম। কর্তৃপক্ষ একাডেমিক ভবনে নিম্নমানের লিফট স্থাপনে ভোগান্তিতে পড়েছেন অন্তত ৩ হাজার শিক্ষার্থী। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ভবনে এবারই প্রথম লিফট বসানো হয়েছে। ভবনের দুই দিকেই একই ধারণক্ষমতার দুটি লিফট বসানো হয়েছে। পঞ্চম-ষষ্ঠ তলা সম্প্রসারণের সময় লিফট দুটির অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনের সময় দুটি লিফটের জন্য বাজেট ধরা হয় ৪২ লাখ টাকা। অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘পিডব্লিওডি’ শিডিউল অব রেটস-২০১৮ অনুযায়ী বাজারের সর্বনিম্ন তালিকাভুক্ত ‘সি ক্যাটাগরির’ লিফটের মূল্য তালিকায় রয়েছে অনুমোদিত লিফট দুটি। তালিকায় ‘বি’ ক্যাটাগরিতে উল্লিখিত প্রতিটি লিফটের মূল্য রয়েছে ৩১ লাখ ও ‘এ’ ক্যাটাগরির ৪০ লাখ টাকা করে। পরে প্রতি তলা অনুযায়ী বাড়ানো হয় লিফটের দাম।
সনেট ইন্টারন্যাশনাল নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় এ লিফট স্থাপনের কাজ। এ সময় তাদের সি ক্যাটাগরির এলজিএস, গোল্ড স্টার, সিগমাসহ ৪টি ব্র্যান্ডের কথা উল্লেখ করে সরবরাহের অনুমতি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য থেকে সিগমা ব্র্যান্ডের কোরিয়ান লিফট দুটি এনে গত ৩ মে স্থাপন করে প্রতিষ্ঠানটি। এর প্রতিটির মূল্য ধরা হয় ২৫ লাখ টাকা। অনুমোদিত লিফটের ধারণক্ষমতাও খুব কম দেওয়া হয়েছে। প্রতি লিফটে মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থী ওঠার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। একাডেমিক ভবনে এত অল্প ধারণক্ষমতার লিফট দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। লিফটে ৬ জন ওঠার নির্দেশ থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে এর বেশি শিক্ষার্থী ওঠায় একাধিকবার লিফট দুটি ভেতর থেকে বন্ধ হয়ে যায়। এতে শিক্ষার্থীরা ভেতরে আটকে পড়েন। তবে এ সময় ওভার লোডের কোনো প্রকার সিগন্যাল না দিয়ে দেবে গিয়ে নিজে নিজেই বন্ধ হয়ে যায় লিফটি। এদিকে আটকে গেলে অটোমেটিক উদ্ধার ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও সে রকম কোনো সেন্সরও নেই লিফটে। ফলে বিষয়টি নিয়ে চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক অস্বচ্ছতারও প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ।
আবিদ হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এক দিনদুপুরে ক্লাসে যেতে লিফটে উঠলে হুট করেই লিফটি বন্ধ হয়ে যায়। ওভার লোডের কোনো প্রকার সিগন্যালও দেয়নি লিফটটি। ফলে আমরাও বিষয়টি বুঝতে পারিনি। ওই অবস্থায় প্রায় আধ ঘণ্টা পর আমাদের উদ্ধার করা হয়। খুবই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট এত নিম্নমানের হবে তা ভাবতেও পারিনি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেও এক দিন লিফটে আটকে পড়েন। এ সময় লিফটের দুই পাশ টেনে তাকে উদ্ধার করা হয়।
তবে পরে অটোমেটিক উদ্ধার (এআরডি), অটোমেটিক ভোল্টেজ রেগুলেটর সিস্টেম ও ওভার লোডের সেন্সরের কাজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রকৌশল দফতর। লিফট দুটি সাড়ে ৩ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে সিঁড়ি দিয়েই উঠে ক্লাসে যেতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এ ক্ষেত্রে বেশি বিপদে পড়েছেন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা।
এদিকে লিফট চালুু করতে প্রকৌশল অফিসে আবেদন করেছেন অন্তঃসত্ত্বা এক ছাত্রী। তারপরও চালু করা হয়নি লিফট। ফলে কষ্ট করেই ষষ্ঠ তলায় উঠে ক্লাস করতে হয় তাকে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, লিফট দুটির তত্ত্বাবধায়ক (অ্যাটেনডেন্ট) না থাকায় তা চালু করতে পারছেন না তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লিফট বুঝে নেওয়া কমিটির সদস্য সচিব তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মালেক মিয়া জানান, এটি প্রথম লিফট হওয়ায় কারোই তেমন কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। ফলে কিছু জিনিস কনসিডার করা হয়েছে। তবে লিফটের বাজেট আগে থেকে করা থাকায় ওই মানের লিফটই আমাদের দিতে হয়েছে। তারপরও আমরা বাজার যাচাই করে সি ক্যাটাগরির মধ্যে ভালো লিফটের অনুমোদন দিয়েছি। ভবিষ্যতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ছাড়া কোনো লিফটের অনুমোদন না দেওয়ার সুপারিশ করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী একেএম শরীফ উদ্দিন বলেন, নিচের একটি সেন্সর এডজাস্ট না হওয়ায় লিফটটি একাধিকবার আটকে গেছে। তবে আমরা সেটি ঠিক করে দিয়েছি। অ্যাটেনডেন্ট কন্ট্রোলার না থাকায় তা চালু করতে পারছি না। কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে একাধিকবার বলা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে চিন্তা করে মনিটরিং করার লোক রেখে লিফট দুটি চালু করার কথা জানিয়েছেন ব্যবসা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম।
কন্ট্রাক্টর ইকবাল হাসান বলেন, টেকনিক্যাল ত্রুটি থাকতেই পারে। তবে আমরা কিছু সমস্যা পরে ঠিক করে দিয়েছি। এখন লিফটগুলো চালু করা যাবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে কোনো লিফট ছিল না তাই লিফট মনিটরিংয়ের জন্য পদ আছে কি না সে আলোকে একটি কমপ্লিট প্রস্তাব দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দফতরকে। অন্যথায় কাউকে ট্রেইন করেও সেখানে দিতে পারে। ডে লেবাররা এখানে এসে কাজ করে আর বসে বসে চা খায়। আর তারা লোকই খুঁজে পায় না। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো চিঠি আমি পাইনি।
এ দিকে নতুন লিফটের ত্রুটির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সময়ে লিফটটি কেনা হয়নি। এখন তারা যদি পচা লিফট বুঝে নিয়ে থাকে তা হলে আর কী বলব! তবে সমস্যা হলে রিপ্লেস করার ব্যবস্থা করতে হবে। আমি প্রকৌশলীকে ডেকে কথা বলব।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৩/০৯/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.