ইবিতে কোটি টাকার জেনারেটর কেনায় অনিয়ম!

কুষ্টিয়াঃ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বিদ্যুতের সাবস্টেশন স্থাপনের আওতায় কোটি টাকা মূল্যের দুটি জেনারেটর কেনায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরেজমিন তদন্তে অনিয়মের বিষয়টির প্রমাণ মিলেছে। কেনা জেনারেটরের সঙ্গে সিডিউলের ভিন্নতা পাওয়া গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ক্যাম্পাসে ৫০০ কিলো ভোল্ট (কেভিএ) ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি সাবস্টেশনের কাজ চলছে। ৫ কোটি ৫৭ লাখ ৯২ হাজার ৫৩০ টাকা ব্যয়ে গত বছরের ১০ নভেম্বর সাবস্টেশন দুটির কাজ পেয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন। কাজ শুরুর ১৩ মাসের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি শেষ করতে বলা হয়। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ হয়নি। কাজ শেষ হলে সাবস্টেশন দুটিতে ৩০০ ও ৫০০ কেভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি জেনারেটর বসানোর কথা। তবে সাবস্টেশন দুটির কাজ শুরুর প্রায় এক বছর আগেই ২ কোটি ৩৭ লাখ ২২ হাজার ৬৯৬ টাকায় দুইটি জেনারেটর কিনে ফেলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জেনারেটর দুটি কেনার জন্য প্রকৌশল দপ্তরের অনুমতিও ছিল না।

এর প্রেক্ষিতে প্রকৌশল অফিস ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. রেজওয়ানুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে জেনারেটর বুঝে নেওয়া সংক্রান্ত ছয় সদস্যের পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে কমিটি চারটি সভা করে। একই সঙ্গে সরেজমিনে জেনারেটর দুটি পরিদর্শন করে। এতে জেনারেটর কেনায় বিভিন্ন অনিয়ম উঠে আসে।

কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেনারেটর দুটির এলসি ডকুমেন্ট জানার জন্য জেনারেটর নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে ই-মেইল করা হয়। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ঠিকাদারের তথ্যের কিছু অসঙ্গতি পাওয়া যায়। ঠিকাদার ভলবো ইঞ্জিন সুইডেনের তৈরি বললেও ইঞ্জিনটি জার্মানির বলে জানায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে টেন্ডারের সিডিউলে পারকিন্স (perkins) ইঞ্জিনটি ইউকে অরিজিন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেখানে ইউএসএ উল্লেখ করেছে।

কমিটি সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখে, নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া জেনারেটর দুটির ইঞ্জিন নম্বর ও সিরিয়াল নম্বরের সঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তথ্যের অমিল রয়েছে।

এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী, ৩০০ কেভিএ জেনারেটরের ইঞ্জিনটি সুইডেনে তৈরি এবং ভলবো কোম্পানির হতে হবে। এর অল্টারনেটর ইতালির হওয়ার কথা, কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেনা ইঞ্জিন ভারতের তৈরি বলে জানা গেছে।

এদিকে ৫০০ কেভিএ জেনারেটরের ইঞ্জিন পারকিন্স যুক্তরাজ্যে তৈরি এবং অল্টারনেটর ইতালির হওয়ার কথা। অথচ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেনা জেনারেটর পারকিন্স ইঞ্জিনের গুরুত্বপূর্ণ কমপনেন্টের গায়ে ‘চাইনা’ (চীন) লেখা পাওয়া যায়।

এসব বিষয়ে জেনারেটর বুঝে নেওয়া সংক্রান্ত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি কোম্পানি মজিদ সন্স কন্সট্রাকশনের প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে তেমন বিস্তারিত জানি না। তবে জেনারেটর দুটি ফেরত নিয়ে যাওয়া হবে বলে জেনেছি। বাকিটা প্রকৌশল অফিস বিস্তারিত বলতে পারবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেটর বুঝে নেওয়া সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী কে এম শরীফ উদ্দীন বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফায় মিটিং করেছি। সেই প্রতিবেদন উপাচার্য স্যারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। জেনারেটর কেনায় অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। এমনকি তারা আমাদের অবহিত না করেই জেনারেটর দুটি ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, তারা যা করেছে এটা অনিয়ম। আমি জেনারেটর বুঝে নেওয়া কমিটির প্রতিবেদন দেখে জেনারেটর দুটি ফেরত নিয়ে যেতে বলেছি। সিডিউল অনুযায়ী যা আছে তাই দিতে বলেছি।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/০৯/২০২৩     

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.