হাওরে আলো ছড়াচ্ছে ভাসমান স্কুল

কিশোরগঞ্জঃ চারদিকে থই থই পানি। দূর থেকে সাধারণ লঞ্চ মনে হলেও আসলে তা প্রাথমিক বিদ্যালয়। নৌকার ভেতরে গেলেই চোখে পড়বে সুসজ্জিত বেঞ্চে বসে শিশুদের পাঠগ্রহণের দৃশ্য। হাওরে ভেসে থাকা এই জলযানের ভেতর চলছে কোমলমতি শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার হাওরাঞ্চলে ভাসমান এই স্কুলের মাধ্যমে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পপি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিশুদের শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখছে এই স্কুল। লেখাপড়ার পাশাপাশি স্কুলগুলোতে রয়েছে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও বিনোদনের ব্যবস্থা।

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার ভাঙনকবলিত অবহেলিত ছাতিরচর ও নিকলী ইউনিয়নে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় নৌকা ও লঞ্চে চলছে ৭টি ভাসমান প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরিচালনা করছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পপি। ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে ভাসমান এসব বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে সাড়ে ৩শ শিক্ষার্থী। স্কুল থেকে বিনামূল্যে মিলছে বই, খাতা, কলমসহ শিক্ষা উপকরণ। নৌকার ভেতর শিক্ষকরা পরম মমতায় শিশুদের পাঠদান করান। খেয়াল রাখেন তাদের মানসিক বিকাশের দিকেও।

সমাজের অবহেলিত শিশুরা এসব স্কুলে লেখাপড়া করলেও তাদের সচেতন করা হচ্ছে সামাজিক, রাজনৈতিকসহ সমসাময়িক বিষয়ে। শিক্ষার্থীরা জানান, এখানকার শিক্ষকরা আন্ত‌রিকতার সঙ্গে পাঠদান করেন। তাই স্কু‌লে পড়‌তে তা‌দের ভা‌লো লা‌গে। স্কুলগুলোতে পাঠদানের পাশাপাশি আছে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে আনন্দ-বিনোদনের ব্যবস্থা। সম্পূর্ণ বিনা খরচে যত্নসহকারে কোমলমতি শিশুদের পড়ানো হয়।

সরকারি কারিকুলাম অনুযায়ী প্রতিটি ভাসমান স্কুলে শিশু শ্রেণি থেকে ৫০ জন করে শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাচ্ছেন ২ জন শিক্ষক। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে স্কুলের কার্যক্রম। ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে টিফিনের ব্যবস্থা। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্য নৌকার ভেতরেই রয়েছে বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও ওষুধের ব্যবস্থা। যেকোনো সরকারি স্কুলের মতোই ভাসমান স্কুলের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় মনোযোগী ও মেধাবী বলে জানান শিক্ষকরা।

শিশু শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিশুদের ৬ বছর লেখাপড়া শেষ করে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা পাস করার পর নিজেদের উদ্যোগে তাদের নিকটতম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। এখানে লেখাপড়া করে সুফল পেয়েছে হাওরাঞ্চলে হতদরিদ্র শিশুরা। অনেকেই উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে শুধু নিকলী উপজেলায় এ কার্যক্রম থাকলেও শিগগিরই হাওরের আরও দুটি উপজেলায় ভাসমান স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানান প্রকল্পের সমন্বয়কারী ও পপির নির্বাহী পরিচালক।

প‌পির নির্বাহী পরিচালক মুর্শেদ আলম ও পপি ভাসমান স্কুল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. জ‌হিরুল ইসলাম জানান, ২০০২ সালে শুরু হওয়া ভাসমান বিদ্যালয় থেকে এ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছে ১২ হাজার শিক্ষার্থী।

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৭/০৮/২০২৩   

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.