সভাপতি না হয়েও কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্বে যুবলীগ নেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়াঃ জেলার শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে সভাপতি না হয়েও অবৈধভাবে গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্ব পালন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এডহক কমিটির সভাপতি এবং শাহজাহানপুর উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি আলী ইমাম ইনোকী।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ৬ মাস মেয়াদি এডহক কমিটির শেষ সময়ে গত ০৪ আগস্ট ২০২২ তারিখে অভিভাবক ক্যাটাগরির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৭ আগস্ট ২০২২ তারিখে কলেজের অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন গভর্নিং বডির সভাপতি নির্বাচনের জন্য তিন জনের নাম পাঠান। তিন জনের মধ্যে এক নম্বরে আলী ইমাম (সাবেক এডহক সভাপতি), দুই নম্বরে অধ্যক্ষের আপন চাচা তাজনুর ইসলাম এবং তিন নম্বরে অধ্যক্ষের আপন ছোট ভাই মোফাজ্জল হোসেন।আলী ইমামের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড এই নির্বাচনকে স্থগিত করে রাখে। পরবর্তীতে আলী ইমাম হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন যা এখনও চলমান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির সভাপতি পদে বর্তমানে কেউ না থাকলেও সে পদে অঘোষিতভাবে বহাল আছেন আলী ইমাম ইনোকী। তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বিলে স্বাক্ষর, প্রতিটি জাতীয় অনুষ্ঠানের ব্যানারে দাওয়াত পত্রে তার নাম। কলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, স্বাধীনতা দিবস, বৈশাখী উদযাপন সব জায়গায় তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, অত্র প্রতিষ্ঠানের দুইটি পুকুর পত্তনির জন্য আলী ইমাম এবং অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন- গত ১ ও ২ মার্চ, ২০২৩ তারিখে মাইকিং করে প্রচারের মাধ্যমে পুকুর পত্তনির সিডিউল বিক্রি করছে, যার শেষ তারিখ ছিল ১২ মার্চ। কমিটি শূন্য একটি প্রতিষ্ঠানে সভাপতি না হয়েও অধ্যক্ষ এবং আলী ইমাম যৌথভাবে এই পুকুর পত্তনির সিডিউল বিক্রি করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এনিয়ে গত ০৩ মার্চ ২০২৩ তারিখে তিন জন অভিভাবক সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দেন। পরে ইউএনওর হস্তক্ষেপে পুকুর পত্তনির সিডিউল বিক্রি ভেস্তে যায়। ইউএনও জানান, কমিটি ছাড়া কোনভাবেই পুকুর পত্তনির সিডিউল বিক্রি করা যাবে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোহাইল ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেনের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার কল করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে আলী ইমাম ইনোকীর দাবি, ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধিমালা ২০০৯ অনুযায়ী, গভর্নিং বডি গঠন ও নবগঠিত গভর্নিং বডির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবার আগ পর্যন্ত পূর্বের গভর্নিং বডির সভাপতি, সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। এমন বিধান থাকার ফলে সেই দায়বদ্ধতার যায়গা থেকেই আমি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছি। আর যেহেতু আমাদের গভর্নিং বডির নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত আমি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাব ঐ বিধিমালা অনুযায়ী।
কী আছে প্রবিধিমালা ২০০৯'এ
প্রবিধান ৩৮ এর বিধিতে গভর্ণিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির মেয়া সম্পর্কে বলা আছে, —প্রবিধান ৩৮ এর বিধান অনুসারে পূর্বে বাতিল করা না হইলে গভর্ণিং বডি বা, ক্ষেত্রমত, ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ হইবে উহার প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ হইতে পরবর্তী দুই বৎসর: তবে শর্ত থাকে যে, কোন গভর্ণিং বডি বা, ক্ষেত্রমতে, ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও উহার উত্তরাধিকার গভর্ণিং বডি বা, ক্ষেত্রমত, ম্যানেজিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত প্রথম গভর্ণিং বডি বা, ক্ষেত্রমত, ম্যানেজিং কমিটি উহার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখিবে।
উল্লেখ্য, এখানে গভর্নিং বডি কিংবা ম্যানেজিং কমিটির কথা বলা আছে। তবে আলী ইমাম ইনোকী যে দাবি করছেন সেটা গভর্নিং বডির ক্ষেত্রে ঠিক আছে। তবে এডহক কমিটির ক্ষেত্রে ঠিক নেই। এডহক কমিটি সম্পর্কে প্রবিধিমালায় বলা আছে, দুই বছর মেয়াদি কোন গভর্নিং বডি কিংবা ক্ষেত্রমতে ম্যানেজিং কমিটি যদি তার মেয়াদের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে নির্বাচন করার লক্ষে ৬ মাসের জন্য এডহক কমিটি গঠন করা যাবে। এই কমিটির লক্ষ থাকবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা এবং এই ছয় মাসে শুধু মাত্র রুটিন দায়িত্ব পালন করা। ছয় মাস অতিক্রম করলে এই কমিটির কোন কার্যকারিতা থাকবে না। যেদিন এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হবে সেদিনই এর কার্যকারিতা শেষ।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা সাথে কথা হয় শিক্ষাবার্তা'র। তারা বলছেন, উত্তরাধিকার গভর্ণিং বডি বা, ক্ষেত্রমত, ম্যানেজিং কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত উক্ত প্রথম গভর্ণিং বডি বা, ক্ষেত্রমত, ম্যানেজিং কমিটি উহার দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবেন মর্মে প্রবিধানমালায় যা উল্লেখ আছে সেটা গভর্নিং বডির ক্ষেত্রে। এডহক কমিটির জন্য এটা প্রযোজ্য নয়। যদি এডহক কমিটি কর্তৃক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই নির্বাচনে কোন কারণে বোর্ডে অনুমোদনের জন্য কালক্ষেপণ হয় কিংবা মামলা জনিত জটিলতা থাকে সেক্ষেত্রে উপজেলা পর্যায়ে এর দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা পর্যায়ে কিংবা মহানগর পর্যায়ে এর দায়িত্ব পালন করবেন জেলা প্রশাসক বা তার প্রতিনিধি।
এ বিষয়ে হাইকোর্টের শিক্ষা বিষয়ক মামলা কিংবা কোন শিক্ষা সংক্রান্ত কোন জটিলতায় রিট পিটিশন দায়ের করেন এমন কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয় শিক্ষাবার্তা'র। তারা বলেন, যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি বা ক্ষেত্রমতে গভর্নিং বডির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে বা পুনঃ ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি অথবা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত আছে কিংবা মামলা জনিত কারণে আটকে আছে সে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা উত্তোলনের স্বার্থে প্রতিষ্ঠানের বিল সংশ্লিষ্ট উপজেলার ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং জেলা সদরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক-এর প্রতিস্বাক্ষরে বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে হবে।
সম্প্রতি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও কলেজ পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমানকে পিআরএলে গমনের সুবিধার্থে বোর্ড থেকে প্রেষণ প্রত্যাহার করে তাকে ওএসডি করে মাউশিতে সংযুক্ত করার আদেশ জারি হওয়ায় তার মুঠোফোনে বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডটির কয়েকজন কর্মকর্তা শিক্ষাবার্তা'কে বলেন, এডহক কমিটির মেয়াদ ছয় মাস অতিক্রম করলে কোনভাবেই সেই কমিটির আর কোন কার্যকারিতা থাকে না। এই প্র্যাকটিসটাই আমরা করি। প্রবিধিমালাতেও সেটা স্পষ্ট করা আছে।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৬/০৪/২০২৩
দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়