ঢাকার অদূরে ধামরাই থানার সোমভাগ কুল্লা ইউনিয়নের মধ্যবর্তী বংশী নদীর ওপর কোন সেতু না থাকায় ছোট নৌকা দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষকে পার হতে হয় নদী। আর নদী পার হওয়ায় সময় মাঝে মাঝেই ঘটে নৌকা ডুবির ঘটনা। এর ফলে ভীত হয়ে পড়েছে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ধামরাই থানার সোমভাগ ইউনিয়নের সোমভাগ কাটাখালি কাটাখালি এলাকার জনগন সব সময় এ বংশী নদীর ওপর দিয়ে যাতাযাত করে থাকে। এই দুটি এলাকার প্রায় ২৫০টি পরিবার রয়েছে। সোমভাগ ও কাটাখালি এলাকা দুটিতে প্রায় ৪ হাজার লোক স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। আবার পাশ্ববর্তী এলাকা আশুলিয়া, শরীফবাগ ও নওগাও এলাকার প্রচুর লোকজন রাস্তার দূরত্ব কমানোর জন্য এই নদীর ওপর দিয়ে খেয়া পার হয়ে ধামরাই সদরে বিভিন্ন কাজে আসে। এতে বেশিরভাগ সময়ই তাদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।
একটি মাত্র ছোট খেয়া দিয়ে নদী পার হতে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। আবার অনেক সময় দেখা যায় এর ভিন্ন চিত্র। সকাল বেলা নদী পার হওয়ার সময় চাকরিজীবী ও বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের ভিড় জমে যায়। চাকরিজীবী বা স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা প্রায়ই তাদের কাজে পৌঁছাতে দেরি করে এ খেয়া কারণে।
নৌকার মাঝি রহিম বাদশা বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমি প্রতিদিন ভোরে ঘাটে চলে আসি। এসেই দেখি যাত্রীদের ভিড়। আমি একা কি করবো, তাড়াতাড়ি করে অনেকে নৌকায় উঠতে পারে আবার অনেকে উঠতেও পারে না। তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে যায়। অনেকে আবার আমার সাথে রাগারাগিও করে। প্রায় স্কুল কলেজের ছেলে-মেয়েরা যখন ঘাটে একত্রে চলে আসে তখন আমার একার পক্ষে তাদের সকলকে পার করা সম্ভব হয় না। তাই অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। বেশি যাত্রী নেওয়ায় নৌকাও ডুবেছে অনেকবার।
কাটাখালি এলাকার বাসিন্দা মহর আলী (৫৫) বলেন, আমরা অনেক কষ্টে আছি। আমরা বাজার থেকে কোন মালামাল ক্রয় করে নিয়ে আসি তখন সেই মাল নিয়ে অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে ধামরাই আশলিয়া-শরীফবাগ এলাকা দিয়ে প্রায় ৫ কি.মি ঘুরে বাড়ি আসতে হয়। তাই আমাদের মতো সাধারণ জনগনের সুবিধার জন্য সোমভাগ-তেলিয়া সংযুক্ত বংশী নদীর উপর দিয়ে একটি ব্রিজ হলে আমাদের আর কোন কষ্ট থাকবে না। আমাদের ভোগান্তিরও অবসান ঘটবে।
কাটাখালি গ্রামের শেফালি বেগম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমার ছেলে প্রায়ই স্কুলে যেতে দেরি করে। কয়েকদিন আবার মনোক্ষুণ্ন হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। কারণ সঠিক সময়ে নৌকা ধরতে না পারায় সে স্কুলে গিয়ে শাস্তি পেয়েছে। তাই এই বিড়ম্বনার হাত থেকে বাঁচার জন্য এই নদীর ওপর দিয়ে একটি ব্রিজ অতি জরুরি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন এলাকাবাসী বলেন, আমাদের এলাকার জনপ্রতিনিধিদের শুধু ভোটের সময় দেখা যায়, তাছাড়া আর কখনোই তাদের চোখে পড়ে না।
সোমভাগ এলাকায় অবস্থিত আয়েশা ক্যাডেট একাডেমি এন্ড হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নদীর দক্ষিণ পাড় কেলিয়া ও ফুকুটিয়া এলাকা থেকে অনেক শিক্ষার্থী আসতো। এখন তারা আমাদের প্রতিষ্ঠানে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমাদের সন্তানদের স্কুলে দিতে আমরা ভয় পাই। নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। তাই বাধ্য হয়ে দূরে হলেও অন্য স্কুলে দিয়েছি।
এ বিষয়ে সোমভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাহার আলী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমি অনেক চেষ্টা করছি যাতে ওই নদী ওপর দিয়ে একটি সেতু নির্মাণ হয়। শুধু সোমভাগ, কাটাখালি এলাকার মানুষই ওই নদীর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে না। পাশ্ববর্তী আশুলিয়া, শরীফবাগ, নওগাও এলাকার লোকজনও তাদের অন্যত্র পৌঁছাতে কম সময় লাগবে ভেবে ওই এলাকার দিয়ে যাতায়াত করে। তাই আমি আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদের সাথে এ বিয়য়ে কথা বলব। তবে আপাতত পাশে একটি সেতু হচ্ছে- এতে এলাকাবাসীর কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.