এইমাত্র পাওয়া

জাতির পিতার আদর্শ জানতে তার লেখা পড়তে হবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ সম্পর্কে জানতে হলে তার লেখা বই এবং তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রকাশিত নথিপত্র পড়ার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গণভবনে শনিবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন। আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নীতি-আদর্শ না থাকলে নেতা হওয়া যায় না। হওয়া গেলেও তা সাময়িক। সেই নেতৃত্ব দেশকে কিছু দিতে পারে না। মানুষের ভালবাসা-আস্থা অর্জন করতে হবে। এটিই রাজনীতিকের জীবনের একমাত্র সম্পদ।

তিনি বলেন, শোককে বুকে নিয়ে, ব্যথা-বেদনা বুকে চেপে রেখে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছি আমরা। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া রাখিনি। যে জাতির জন্য বাবা জীবন দিয়ে গেছেন, তাদের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি, সেই বিবেচনা করেছি। যদি নিজেকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হয় তাহলে তার মতো ত্যাগী কর্মী হিসেবে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যাদের ভালোবাসতেন তাদের কল্যাণ করা সন্তান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। ৩২ নম্বরে যখন বাবাকে হত্যা করা হয়, খুনিরা মাকে বলেছিল, চলেন। তিনি একপাও নড়তে রাজি হননি, জীবন ভিক্ষা চাননি। বীরের মতো বুক পেতে দিয়েছিলেন বুলেটের সামনে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় সন্তান হিসেবে বাবার স্বপ্ন, লক্ষ্য আমি জানতাম। সেগুলো সামনে নিয়েই আমার পথচলার শুরু। স্বাধীনতার পর অনেকেই বলেছিল, এদেশের কোনও ভবিষ্যত নেই, ব্যর্থ রাষ্ট্র হবে। আমার জেদ ছিল বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলবো যাতে বিশ্ববাসী বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে দেখে!

বঙ্গবন্ধুর লেখা ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রকাশিত নথিপত্র ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পড়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা বই কারাগারের রোজনামচা বের করা হয়েছে। তার আদর্শ সম্পর্কে জানতে হলে তার লেখা বইগুলো পড়তে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গোয়েন্দা নথির বঙ্গবন্ধু বই বের করেছি। আরও একটা নতুন খণ্ড বের করার কাজ চলছে। আমি বিশটা বছর এই রিপোর্টগুলো নিয়ে কাজ করেছি। আমার সঙ্গে কাজ করেছে আমার বান্ধবী বেবী মওদুদ। কিন্তু দুঃখের বিষয় বেবী মওদুদ আমাদের মাঝে আর নেই।

তিনি বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই রিপোর্টগুলো তৈরি করা। এই রিপোর্টগুলো তার বিরুদ্ধে। এইগুলো পড়লেই বোঝা যাবে দেশের মানুষ, দেশের জন্য বঙ্গবন্ধু কীভাবে কাজ করে গেছেন। এই রিপোর্টগুলো পড়লে তার সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরও একটি বইয়ের কাজ চলছে। ১৯৫২ সালে শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু চীনে গিয়েছিলেন। পুরো পাকিস্তান থেকে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশ কীভাবে সেখানে বিপ্লব করেছে, সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা তিনি দেখেছেন, অনুভব করেছেন এবং লিখেছেন।

দীর্ঘ সংগ্রামের পথে অনেক দালাল ছিল, যারা পাকিস্তানপ্রেমী ছিল, তারা বাংলার মানুষের ভালো চায়নি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের একাত্তরের ভূমিকা সবার জানা। তাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে ১০ বছরের মধ্যে উন্নত ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠতো।

বাকশাল কেন জরুরি ছিল তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ অনেকে বাকশাল-বাকশাল বলে গালি দেয়, আসলে বাকশালটা কী ছিলো? এটা ছিলো কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। এই বাংলাদেশ ছিলো কৃষি প্রধান দেশ। কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করে আর শ্রমিকের শ্রমের মধ্য দিয়ে এদেশের অর্থনীতি গড়ে ওঠে। এই কৃষক-শ্রমিককে এক করে সমগ্র বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করে অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে ১৯টা জেলা ছিলো। এই ১৯টা জেলাকে ভাগ করে তিনি ৬০টি জেলায় রূপান্তর করেন। তারমানে প্রতিটি মহকুমা পর্যায়ক্রমে জেলায় রূপান্তর করা হয়। এই মহাকুমাগুলোকে জেলায় রূপান্তর করা হয় যেন, সেগুলো অর্থনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে ওঠে এবং তৃণমূলের মানুষ সেটার সুফল পায়। সে পদক্ষেপ তাই তিনি নিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতন্ত্রকে-ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে একদম তৃণমূল পর্যন্ত যেন সেটা পৌঁছে যায় সে ব্যবস্থা করেছিলেন। একজন সাধারণ মানুষ তার যেন বলার সুযোগ থাকে, কাজ করার সুযোগ থাকে সে পদ্ধতি তাই তিনি বেছে নিয়েছিলেন। যারা জমিতে শ্রম দিবে তারা উৎপাদিত পণ্যের একটি অংশ পাবে, যারা জমির মালিক তারা একটা অংশ পাবে এবং কো-অপারেটিভের মাধ্যমে সরকারের কাছে একটা অংশ আসবে। যেন কখনো কেউ বঞ্চিত না হয়। অন্তত যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলায় তারা যেন ন্যায্য মূল্য পায়, তারা যেন ভালোভাবে বাঁচতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কৃষি পদ্ধতিটাকে যান্ত্রিকীকরণ করে আধুনিকীকরণ করার কথাই তিনি বলেছিলেন। সাথে সাথে শিক্ষাকে তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। প্রাইমারি শিক্ষাকে অবৈতনিক করেছিলেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি বিশেষ সুযোগ এর ব্যবস্থা এবং নীতিমালা প্রণয়ন করেছিলেন। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ যেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে, তিনি সে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। প্রত্যেকটা ইউনিয়নে ১০ বেডের হাসপাতাল করে প্রত্যেকের দোরগোড়ায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার কাজ তিনি শুরু করেছিলেন।

জাতির পিতা যে কর্মসূচিগুলোর ঘোষণা দিয়েছিলেন, এগুলো যদি তিনি বাস্তবায়ন করে যেতে পারতেন তাহলে বাংলাদেশে অনেক আগেই বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে আসীন হতো বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

৭৫-এর হত্যাকাণ্ড স্মরণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন তারা ছোট্ট রাসেলকেও ছাড়েনি, যাতে রক্তের উত্তরাধিকারী একজনও জীবিত না থাকে। আমার ভাড়াবাসাতেও আক্রমণ চালিয়েছিল তারা। আমরা অল্প সময়ের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য একই দিনে আমরা পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি।

বাঙালি জাতি ছিল চিরদিন শোষিত-বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাংলাদেশ সবসময় অবহেলিত ছিল, ক্ষুধার অন্ন পেতো না, শিক্ষা-চিকিৎসা পেতো না, থাকার ঘরবাড়ি ছিল না, সেই মানুষগুলোর জীবন বদলে দিতে চেয়েছিলেন শেখ মুজিব। ছাত্রাবস্থায় গরীব ছাত্রদের সহায়তা করতেন। সবসময় দেশকে স্বাধীন করে মানুষের উন্নয়নের চিন্তা করতেন।

বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অবদান বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার (বঙ্গবন্ধু) পাশে আমার মা সবসময় ছিলেন। প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসেননি, ছবি তোলেনি, নাম ছাপেননি। বাবার সঙ্গে থেকে প্রতিটা কাজে সহায়তা করেছেন। সাধ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছেন। বছরের পর বছর বাবা যখন কারাগারে, মা অপেক্ষা করেছেন। পাশে থেকে সহযোগিতাও করেছেন। এমনকী ছদ্মবেশে ছাত্রনেতাদের কাছে নির্দেশ পৌঁছে দিতেন, নির্দেশনাও দিতেন। তিনি ছিলেন সবচেয়ে বড় গেরিলা। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা গোয়েন্দা সংস্থার লোক থাকতো। তারা কোনোদিন ধরতে পারেনি আমার মা কোথায় কীভাবে যাচ্ছেন। প্রত্যেক আন্দোলন কীভাবে সফল করতে হয় মায়ের কাছ থেকে শিখেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading