ঢাকাঃ জুলাই আন্দোলনে আহত অনেক রোগী ছাড়পত্র পাওয়ার পরও হাসপাতাল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও তারা সরকারি কেবিন দখল করে আছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ রোগীরা।
তিনটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জুলাই আন্দোলনে আহত ১,৪০০ জনের মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে প্রায় ৮১ জন এই তিন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এসব রোগীর দাবি, পর্যাপ্ত সেবা না পাওয়ায় তারা এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি। এ কারণে তারা হাসপাতাল ছাড়ছেন না। এদিকে তাদের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ রোগীরা।
সেবা নিতে আসা এক সাধারণ রোগী বলেন, ভর্তি হতে চাইলে বলে আজকে সিট খালি নাই, পরে আসেন। পরের দিন গেলে, তা-ও বলেন নাই। তারপরের দিনও একই কথা।
তবে জুলাই আন্দোলনের এক রোগী বলেন, তারা আমাদের দেখছেই না ভালোভাবে। একজন সাধারণ রোগীকে যেভাবে দেখে আমাদেরও সেভাবেই দেখে। যদি তারা আমাদের ঠিকভাবে দেখত, উন্নতমানের চিকিৎসা দিত, তাহলে এত দিন তো হাসপাতালে থাকার প্রশ্ন থাকত না।
এসব বিষয়ে হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকরা জানান, এদের অধিকাংশেরই হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই। একাধিকবার ছাড়পত্র দেওয়া হলেও তারা হাসপাতালে রয়ে গেছেন। ঈদুল আজহার ছুটিতে যারা বাড়ি গিয়েছিলেন, তারাও আবার ফিরে এসেছেন। এই পরিস্থিতির ফলে সাধারণ রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।
হাসপাতালের কর্মীদের অভিযোগ, আহতরা চিকিৎসক, নার্স ও অন্য কর্মীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করছেন, যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমস্যার কথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েও সমাধান করতে পারছে না।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কেনান বলেন, তাদের সবার অবস্থা স্থিতিশীল। তাদের যে ফলোআপ চিকিৎসা তার জন্য হাসপাতালে থাকা জরুরি না। এটার জন্য তারা চাইলে বাড়ি থেকে এসে ফলোআপে পরবর্তী পরামর্শ নিতে পারে।
এদিকে আহত হিসেবে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি আছে চারজন। তারা বলছেন, বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসা করা না হলে তারা হাসপাতাল ছাড়বেন না।
জুলাই আন্দোলনে আহত নুর আলম বলেন, আমাকে দিয়ে পাসপোর্ট বানিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমাকে রেফার করে বিদেশে সুচিকিৎসার জন্য পাঠানো হোক- এটাই আমার চাওয়া। অন্যদিকে ভর্তি ছাড়াই হাসপাতালে থাকছেন জুলাই আন্দোলনে আহত ইমরান। তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন সিঙ্গাপুরেও।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. বদিউজ্জামান বলেন, ওরা মনে করে যে এখান থেকে যদি আমি চলে যাই তাহলে তো সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হব। এমন একটা ধারণা ওদের মধ্যে কাজ করছে। এ কারণে তারা হাসপাতাল ছাড়তে চাইছে না। কিন্তু জুলাই যোদ্ধাদের জন্য আলাদা স্বাস্থ্য কার্ড আছে। দেশের যেকোনো সরকারি হাসপাতালে তারা বিনা মূল্যে সেবা নিতে পারেন।
এদিকে ২৮ মে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞানে সংঘর্ষে আহত হন কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স। হাসপাতাল বন্ধ থাকে ১৮ দিন। এরপর বাড়ানো হয় নিরাপত্তা। পঙ্গু হাসপাতালে পুলিশ পাহারায় জুলাই আন্দোলনে আহত রোগীদের দেখছেন চিকিৎসকরা।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৯/০৬/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.