এইমাত্র পাওয়া

স্কুল ফিডিং কর্মসূচিতে বরাদ্দ ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা

শিক্ষাবার্তা ডেস্ক, ঢাকা: গত বছরের তুলনায় এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৯৩৪ কোটি টাকা। এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯৫ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। অন্য দিকে গত অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে এবার শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে। বাজেটের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে- নতুন অর্থবছরের বাজেটে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য স্কুল ফিডিং প্রকল্প চালু করা হচ্ছে এবং একই সাথে মাদরাসা এমপিওভুক্তিতেও অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বাজেটে শিক্ষকদের বোনাস ও গ্রাচ্যুইটিও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার বাজেটে শুল্ক প্রত্যাহার করায় কমবে শিক্ষার অন্যতম প্রধান উপকরণ কলমের দাম।

গতকাল সোমবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪৭ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ প্রস্তাব করেন, যা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ছিলো ৪৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। একই সাথে নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা, যা আগের চেয়ে তিন হাজার ৪১৬ কোটি টাকা কম। গত অর্থবছরে এই বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। এ ছাড়াও কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এই বাজেট ছিল ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।

প্রাথমিকের ফিডিংয়ে ২ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ : এবারের বাজেটে দেশের সাড়ে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচির জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত দুই হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এতে খুব শিগগির প্রাথমিকের শতভাগ শিশু শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে গিয়ে খাবার পাবে। নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেটে অর্থ উপদেষ্টা প্রাথমিক স্কুল ফিডিংয়ের জন্য এ অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি ও মানসম্পন্ন শিক্ষা দেয়া। প্রাথমিক শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে চলতি অর্থবছরে সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঁচ হাজার ৯৪৬টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, ১৭ হাজার ১৬৪টি ওয়াশব্লক নির্মাণ, চার হাজার ৪৫০টি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার ৪৯২টি বই বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে শতভাগ শিক্ষার্থীকে ইএফটির মাধ্যমে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ খাতে ৩৫ হাজার ৪০৩ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

মাদরাসা এমপিওভুক্তিতে ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ : মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে এক হাজার ১৩৫টি মাদরাসা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং ৫১৩টি বহুতল ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। ৪৯৩টি মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ইবতেদায়ি পর্যায়ে বৃত্তি প্রদান এবং মাদরাসাগুলো এমপিওভুক্তি বাবদ ৭২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সাথে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১২ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে মাদরাসায় শিক্ষার্থী ভর্তি বেড়েছে। এ খাত দীর্ঘ দিন অবহেলিত ছিল। ফলে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির সবশেষ ২০২৩ সালের তথ্যমতে, প্রাথমিক স্তরের (প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত) শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটি ৯৭ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৫ জন। তার আগের বছর ২০২২ সালে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ছিল দুই কোটি পাঁচ লাখ ৪৬ হাজার ৯১ জন। ব্যানবেইসের ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোট মাদরাসার সংখ্যা ৯ হাজার ২৫৬টি। মাদরাসায় ভর্তি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪১ লাখ ২৬ হাজার ৬২৬ জন, যা দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফলে মাদরাসা শিক্ষা খাতে এবার বরাদ্দও বাড়ল।

শিক্ষকদের বোনাস গ্রাচ্যুইটিও বাড়ছে : ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষকদের আর্থিক সুরক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বোনাস বাড়ানো হচ্ছে। একই সাথে গ্রাচ্যুইটির সুবিধাও সম্প্রসারিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বাজেট প্রস্তাব ঘোষণায় এসব তথ্য জানান তিনি। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শিক্ষকদের মানবসম্পদ উন্নয়নকে বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বোনাস ও গ্রাচ্যুইটির পরিমাণ বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের আওতায় মোট ৬২টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় এক হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ৫১ লাখ, উচ্চ মাধ্যমিকে আট লাখ এবং স্নাতক পর্যায়ে এক লাখ ৬৫ হাজার অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।

উপদেষ্টা বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা, যা আগের বছরের ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকার থেকে বাড়ানো হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং তাদের আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধিতে আরো কাজ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। শিক্ষকদের প্রণোদনা বাড়ানো এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করার মাধ্যমে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা আরো উন্নত ও গতিশীল হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৩/০৬/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading