রাজশাহীঃ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অনুমতি ব্যতীত বহিরাগত এনে হলের নারিকেল গাছ থেকে শতাধিক ডাব পেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টিকে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ উল্লেখ করে এ ঘটনায় জড়িতদের আবাসিকতা কেন বাতিল করা হবে না, তার সুস্পষ্ট কারণ দর্শাতে নোটিশ দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।
হল প্রাধ্যক্ষ বলেছেন, হলের ফল-ফলাদি ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী সবার অধিকার। বিগত সময়েও এসব ফল চুরির ঘটনা হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। পুনরায় যাতে আর কেউ এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, এজন্য তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন, হলের ১৩৬ নম্বর কক্ষের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া, বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিব মোল্লা, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সিয়াম, ১৩৯ নম্বর কক্ষের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত উৎস এবং ৩২৮ নম্বর কক্ষের উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী সবুর আলী। তবে, বহিরাগতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে অভিযুক্তদের আগামী ৮মে তারিখের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
হল প্রাধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, হলের আওতাধীন ফলবান গাছসমূহ পরিচর্যা ও তদারকির জন্য বর্তমান হল প্রশাসনের উদ্যোগে আবাসিক ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে একটি তদারকি কমিটি কার্যকর আছে। গাছগুলো পরিচর্যায় বিগত কয়েক মাসে মোটা অংকের অর্থ ব্যয় হয়েছে। অথচ গত ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাত দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে হলের পূর্ব ব্লকের কয়েকজন আবাসিক ছাত্র কিছুসংখ্যক বহিরাগত নিয়ে হলের কয়েকটি নারিকেল গাছ থেকে প্রায় শতাধিক ডাব পেড়ে নিয়েছে। এটি যেকোনো বিচারে আবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত আচরণের পরিপন্থি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সেখানে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অনাকাঙ্ক্ষিত কাজে জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। হল প্রশাসনের গত ২৭ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বহিরাগতদের নিয়ে গভীর রাতে হলের নারিকেল গাছসমূহের ডাব পেড়ে অন্যের অধিকার হরণের মত গর্হিত কাজ করায় কেন তাদের বিরুদ্ধে হলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে সম্পৃক্ততার জন্য আবাসিকতা বাতিল করা হবে না, তা প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানাতে বলা হচ্ছে।
অভিযুক্ত সুমন মিয়া বলেন, আমরা মজা করে বন্ধুরা মিলে একটি গাছ থেকে অল্প কিছু ডাব পেড়েছিলাম। কিন্তু স্যার যেভাবে শতাধিক ডাব পাড়ার অভিযোগ করেছে, সেটা ভিত্তিহীন। আমাদের কাছে সেদিন রাতের ছবি ও ভিডিও আছে। যেহেতু রাতের বেলায় আমরা এ কাজ করেছি, সেজন্য দোষ স্বীকার করে প্রাধ্যক্ষ স্যারের কাছে বার বার ক্ষমা চেয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের ক্ষমা না করে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে অন্যদের মুঠোফোনে যোগাযোগ চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, আমি দায়িত্বে এসে হলের ফলজ গাছসমূহ পরিচর্যা ও তদারকির জন্য আবাসিক ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে একটি তদারকি কমিটি গঠন করেছি। গাছগুলোর পরিচর্যার জন্য হল প্রশাসন থেকে মোটা অংকের ব্যয় বহন করা হয়। ফলগুলো সবাইকে ভাগ করে দেওয়া হবে এবং কেউ যেন নিজে থেকে কোনো ফল না পাড়ে, সেবিষয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় বারবার বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হঠাৎ একদিন আমরা লক্ষ্য করি, হলের অনেকগুলো নারিকেল গাছে ডাব নেই। পরে আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে হলের পাঁচ শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করি। তাদের সঙ্গে বহিরাগত দুইজনও জড়িত ছিল। আমরা জানতে পেরেছি, তাদের মধ্যে একজন পূর্বেও হলে এমন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। পুনরায় যাতে আর কেউ এমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, এজন্য তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/০৭/০৫/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.