ঢাকাঃ প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন কে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সরকার। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের আগে তিনি বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
প্রকৌশলী মোঃ রুহুল আমিন এর বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায়। তিনি দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হতে ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজিতে ১৯৯১ সনে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। ১৯৯৬ সনে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আইইউবি অব ওআইসি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৫ সালে।
২০০০ সাল থেকে তিনি খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষকতা দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন। বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের আগে তিনি কুষ্টিয়া এবং চট্টগ্রামে অধ্যক্ষ হিসেবে তার কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। সততা, আন্তরিকতার সহিত কঠোর পরিশ্রম করে তিনি পরপর দুইবার জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ হিসেবে নির্বাচিত হন। এছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হয়ে তার প্রতিষ্ঠানকে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন ২০১৯, ২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে। রত্নগর্ভা মায়ের এই কৃতি সন্তান ১৩ এপ্রিল ২০২৫ সালে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করেন। কারিগরি শিক্ষায় বাংলাদেশের একমাত্র শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে “শিক্ষাবার্তা”য় সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন শিক্ষাবার্তার সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বিন- ই- আমিন ।
সাক্ষাৎকারঃ
শিক্ষাবার্তা: কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদান করায় আপনাকে শিক্ষা বার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে অভিনন্দন।
প্রকৌশলী মোঃ রুহুল আমিন: আপনাকেও ধন্যবাদ। শিক্ষাবার্তার সকলকে ধন্যবাদ।
শিক্ষাবার্তা: কারিগরি শিক্ষার আশানুরূপ সাফল্য না হওয়ার পিছনে কি কারন থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
প্রকৌশলী রুহুল আমিন: আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ এখনও কারিগরি শিক্ষার সুফল জানেনা। তাদের সন্তানদের কারিগরি শিক্ষায় ভর্তি করতে অনিহা প্রকাশ করেন। আমি আগেই সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণা পরিবর্তনের জন্য কাজ করবো। প্রয়োজনে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মাননীয় সচিব মহোদয়কে নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সাথে মতবিনিময় করবো। তাদেরকে কারিগরি শিক্ষার সুফল সম্পর্কে বুঝাতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সপ্তাহে প্রচার ও প্রচারণা চালাবো।
শিক্ষাবার্তা: বিগত কয়েক বছরে আশানুরূপ শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার পিছনে কি কারন থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
প্রকৌশলী রুহুল আমিন: আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ এখনও কারিগরি শিক্ষার পুরোপুরি সুফল পাচ্ছেনা। তাই তাদের সন্তানদের এ শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করাতে পারেনি।
শিক্ষাবার্তা: বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবহারিক ক্লাসের অবস্থা খুব করুন। এ ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা কী হতে পারে?
প্রকৌশলী রুহুল আমিন: আমাদের দেশের বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অধিকাংশ জায়গায় ব্যবহারিক ক্লাসরুম নাই। অবকাঠামো নাই। তাই ব্যবহারিকের কোনো মালামালও নাই। আমি এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি বরাদ্দের ব্যাপারে চেষ্টা করবো।
শিক্ষাবার্তা: সিলেবাসের কোনো পরিবর্তন করবেন কী?
প্রকৌশলী রুহুল আমিন: অবশ্যই। আমরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এবং শিল্প কারখানার চাহিদা অনুযায়ী জনবল তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমি ইতোমধ্যে বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চেহারা পাল্টিয়ে দিয়েছি। আমার সততা ও শ্রমের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষায় পরিবর্তন আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো। আমার মা ২০১৯ সালে “রত্নগর্ভা” মায়ের পুরস্কার পেয়েছিল। আমার ৯ ভাই বোনের মধ্যে মাত্র ২ জন গ্রাজুয়েট। বাকিরা আরো শিক্ষিত। ২ জন ডক্টরেট। সবাই তাদের সততা,মেধা ও শ্রম দিয়ে নিজ নিজ জায়গায় সফল। আমিও আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
শিক্ষাবার্তা: বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে আপনার প্রচেষ্টা কি থাকবে?
প্রকৌশলী রুহুল আমিন: আমি বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষাকে আধুনিক ও বিশ্বমানের গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। এ ক্ষেত্রে আপনাদের (মিডিয়ার) ভূমিকাও জরুরি। আপনারা এ শিক্ষার প্রসারে ইতিবাচক সংবাদ তুলে ধরবেন। গ্রামাঞ্চলের লোকজনকে সচেতন করতে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ শিক্ষার সাথে জড়িত সকলের আন্তরিকতা ও শিক্ষকদের আরো বেশি দায়িত্বশীলতা কারিগরি শিক্ষার প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাই আমি সকলের সহযোগিতায় বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাবো।
শিক্ষাবার্তা: আপনার ইতিবাচক মনোভাব ও কারিগরির শিক্ষার প্রতি আন্তরিকতার জন্য ধন্যবাদ।
প্রকৌশলী রুহুল আমিন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রিয় পাঠক,যেসব দেশ কারিগরি শিক্ষায় উন্নত,সেসব দেশ উন্নত। বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে সঠিক নেতৃত্ব ও কারিগরি বান্ধব নীতিনির্ধারক প্রয়োজন। আমরা আশাবাদী সদ্য যোগদান করা প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন তার সততা,মেধা, আন্তরিকতা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষার আধুনিকায়নে ভূমিকা রাখবেন। তার প্রতি শুভ কামনা রইলো। জনপ্রিয় শিক্ষা বিষয়ক পত্রিকা “শিক্ষাবার্তার” র পক্ষ থেকে তাকে অভিনন্দন।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৪/০৪/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.