নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় বেতন বন্ধ (এমপিও স্থগিত) থাকা মাদ্রাসার অধ্যক্ষের স্বাক্ষরেই শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গভর্নিং বডির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদ্রাসার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলাধীন হুলিয়ারপাড়া জামেয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো: মঈনুল ইসলাম পারভেজ (ইনডেক্স- S320858) এর মাসিক বেতন-ভাতা (এমপিও) স্থগিত করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। নিয়মানুযায়ী, আর্থিক অনিয়মের দায়ে কোনো দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের এমপিও স্থগিত হলে সাময়িক বরখাস্ত করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ড পরিচালনার কথা থাকলেও তা না করে মাদ্রাসাটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিরোদা রানী রায় অধ্যক্ষ মঈনুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত না করে তাকে স্বপদে বহাল রেখেছেন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যক্ষ মঈনুল ইসলাম পারভেজের এমপিও স্থগিত করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। বিষয়টি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসী জানতে পারলে তারা গত ৪ মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাসাটির সভাপতি ও সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিরোদা রানী রায় বরাবর অধ্যক্ষ মঈনুল ইসলাম পারভেজকে অপসারণ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদানের জন্য লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

গ্রামবাসীর লিখিত অভিযোগ আমলে নিয়ে মাদ্রাসাটির সভাপতি ও এডিসি বিরোধা রানী রায় জগন্নাথপুরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞা সা-আধ কে গত ৬ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে নির্দেশ দেন। এডিসির নির্দেশে সহকারি কমিশনার (ভূমি) অভিযোগকারী এবং অধ্যক্ষ মঈনূল ইসলাম পারভেজকে গত ১০ এপ্রিল তার দপ্তরে শুনানীর জন্য ডাকেন। গত ১০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল দশটায় প্রথমে অধ্যক্ষ মঈনূল ইসলাম পারভেজের সাথে কথা বলেন এসিল্যান্ড এরপর অভিযোগকারী ১৪ ব্যক্তির সাথে কথা বলেন।
জনতা ব্যাংক জগন্নাথপুর শাখা, মাদ্রাসা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বেতন বন্ধ থাকা অধ্যক্ষ মঈনুলের অধ্যক্ষ পদে থাকা না থাকার সিদ্ধান্তের শুনানীর দিনই অধ্যক্ষ মঈনুল ইসলাম পারভেজ এবং সভাপতি এডিসির যৌথ স্বাক্ষরে এমপিও শীট জনতা ব্যাংকে পাঠানো হয়। এবং জনতা ব্যাংক আজ রবিবার (১৩ এপ্রিল) অধ্যক্ষ মঈনুল ইসলামের স্বাক্ষরেই শিক্ষকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ছাড় করে।
এ বিষয়ে অভিযোগকারীরা বলেন, একটা দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ যখন আর্থিক জালিয়াতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তার বেতন বন্ধ করে দিয়েছে তিনি কিভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে পারেন ? আমরা সেই জায়গা থেকে মাদ্রাসাটির সভাপতি ও এডিসি সুমানগঞ্জ বরাবর লিখিত দিয়েছি। অথচ যেদিন আমাদের শুনানীর জন্য ডেকেছেন সেদিনই অধ্যক্ষ মঈনুল ইসলাম পারভেজ এবং এডিসির যৌথ স্বাক্ষরে বেতন শীট ছাড় করেছেন। এখানে এডিসি এই জালিয়াতি অধ্যক্ষের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন। আমরা সভাপতির পদ থেকে তার অপসারণের দাবি জানাই।
তারা আরও বলেন, অনিয়ম প্রমাণিত হলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এমপিও বন্ধ করে। যেখানে অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় এই অধ্যক্ষের এমপিও বন্ধ তিনি যদি দায়িত্বে বহাল থাকেন এবং এসময় আরও বেপরোয়া হয়ে অনিয়ম করেন তখন এর দায় কে নেবে ? যেখানে এডিসি সরাসরি তার পক্ষে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি তারা যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেন।
বেতন বন্ধ থাকা অধ্যক্ষের স্বাক্ষরে কিভাবে বেতন দিলেন জানতে চাইলে জনতা ব্যাংক জগন্নাথপুর শাখার ব্যবস্থাপক ইমন চন্দ্র দাস মিটিংয়ে ব্যস্ত থাকায় সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা আরাফাতের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। কর্মকর্তা আরাফাত বলেন, সভাপতি এডিসি এবং অধ্যক্ষ মঈনুল ইসলাম পারভেজের স্বাক্ষরে ফেব্রুয়ারি বেতন দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসাটির উপাধ্যক্ষ নুরুল হক সভাপতি অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরে বিলের কপি নিয়ে আসছিলেন। আমাদের কাছে অন্য কোনো নির্দেশনা না থাকায় বেতন ছাড় করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, অধ্যক্ষ এবং উপাধ্যক্ষের নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ গভর্নিং বডি। কারও অনিয়ম প্রমাণিত হলে আমরা তার বেতন বন্ধ করে দেই। তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব গভর্নিং বডির।
একটি দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের আর্থিক জালিয়াতি তদন্তে প্রমাণিত হবার পরেও কিভাবে তাকে স্বপদে বহাল রাখলেন এবং তারই স্বাক্ষরে বেতন বিল ছাড় হলো জানতে চাইলে, মাদ্রাসাটির গভর্নিং বডির সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিরোধা রানী রায় শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, তার বেতন আগেই ছাড় করা উচিত ছিল। বেতন বন্ধ হলে কেউ দায়িত্ব পালন করার বিধান নেই এমন কোনো নির্দেশনা আমার জানা নাই তাই তার স্বাক্ষরেই বেতন ছাড় করা হয়েছে। তাকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য শুনানী ডাকা হলেও সেদিনই কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো জিজ্ঞেস করলে তিনি রাগান্বিত হয়ে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খান মোঃ রেজা-উন-নবীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৩/০৪/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.