নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ অর্থ আত্মসাৎ করেও “অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অনুদান দেওয়া দাতা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লন্ডন প্রবাসী মোঃ নুর মিয়ার নামে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার হলিয়ারপাড়া জামেয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো: মইনুল ইসলাম পারভেজ কর্তৃক করা মানহানির মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। একই সাথে আদালত কর্তৃক করা দুইটি (পিবিআই ও সিআইডি) তদন্ত প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ মঈনুলের অর্থ আত্মসাৎ করে তা থেকে রেহাই পেতে এই মিথ্যা মামলা দায়ের করেন তা প্রমাণিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোস্তাফিজুর রহমান শুনানি শেষে মামলাটি খারিজের আদেশ দেন।
২০২৩ সালের ৫ জানুয়ারি “অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক গল্প-ঘটনা তৈরী করে তাহা পত্র-পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে মান-সম্মানের হানি ঘটিয়ে ও সামাজিক ভাবে হেয় ও অপদস্ত করা হয়েছে” উল্লেখ করে বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিট্রেট, মেট্রোপলিটন আদালত- ০৬. ঢাকায় সিআর মামলা নং-১৫/২০২৩ (হাতিরঝিল), তারিখ-০৫/০১/২০২৩ খ্রিঃ, ধারাঃ-৫০০ পেনাল কোড মামলা দায়ের করেন অধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজ। লন্ডন প্রবাসী মোঃ নুর মিয়াকে ১নং আসামী করে মোট তিনজনের নামে এই মামলা দায়ের করেন তিনি।

মামলাটি প্রথমে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হলে পিবিআই তদন্ত করে ০৪ জুন ২০২৩ ইং তারিখে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে অধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজ মিথ্যা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে মাদ্রাসার অনুদান দাতাকে হয়রানী করতে ও আর্থিক জালিয়াতি করে এবং জালিয়াতি থেকে মুক্তি পেতে এই মামলা দায়ের করেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তবে এই প্রতিবেদনকে একপাক্ষিক দাবি করে আদালতে নারাজি দেয় মো. মইনুল ইসলাম পারভেজ। আদালত পরবর্তীতে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করে সিআইডিকে। সিআইডি তদন্ত করে গত নভেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিলে সেই প্রতিবেদনেও অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি গোপন করতে অর্থদাতার বিরুদ্ধে রাজধানীর একটি ভুয়া বাসার ঠিকানা ব্যবহার করে অর্থদাতাকে হয়রানী করতে মামলা দায়ের করেন অধ্যক্ষ মঈনুল ইসলাম পারভেজ তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সিআইডির প্রতিবেদনকেও এক পাক্ষিক দাবি করে মো. মইনুল ইসলাম পারভেজ নারাজি দিলেও সেই নারাজি গ্রহণ না করে মামলা খারিজ করে দেয় বিজ্ঞ আদালত।
উল্লেখ্য, হলিয়ারপাড়া জামেয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো: মইনুল ইসলাম পারভেজের বিরুদ্ধে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের করা মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের করা তদন্তের আলোকে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে (মাদ্রাসা অধিদপ্তরের চিঠিতে) তার মাসিক বেতন-ভাতা (এমপিও) স্থগিত করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। এছাড়াও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর মইনুল ইসলাম পারভেজের আর্থিক জালিয়াতির নিয়ে তদন্ত করেছে যা এখনো চলমান রয়েছে।
এছাড়াও মাদ্রাসার উন্নয়নে লন্ডন প্রবাসীদের দেওয়া অনুদানের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ১৬ দিনের কারাবরণ করেন (বর্তমানে জামিনে আছেন) এই অধ্যক্ষ। এই মামলা চলমান রয়েছে।
অর্থ আত্মসাৎ ছাড়াও আরও যেসব অভিযোগ রয়েছে মঈনুল ইসলাম পারভেজের বিরুদ্ধে
অর্থ আত্মসাতের মামলায় ১৬ দিনের কারাবরণ করেন অধ্যক্ষ মঈনুল
হলিয়ারপাড়া মাদ্রাসার শিক্ষকদের বেতন, মাদ্রাসার উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সুবিধার্থে এগিয়ে আসা উপজেলার মিরপুর নিবাসী জোহির উল্লাহর ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী নুর মিয়া ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪০ লাখ টাকার যৌথ অনুদান দেন। কিন্তু অধ্যক্ষ মঈনুল ইসলাম পারভেজ অন্যান্যদের সহযোগিতায় সেই টাকার পুরো অংশই আত্মসাৎ করেন।বিষয়টি টের পেয়ে জুডিশিয়াল আদালত সুনামগঞ্জে ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৪/৪৭১ ও ৩৪ ধারায় ৪০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের সি/ আর মামলা -১৫ দায়ের করেন নুর মিয়া। সেই মামলায় ১৬ দিন কারাভোগ করে অধ্যক্ষ জুডিশিয়াল আদালত সুনামগঞ্জে ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৪/৪৭১ ও ৩৪ ধারায় ৪০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের সি/ আর মামলা -১৫ দায়ের করেন নুর মিয়া। যা জগন্নাথপুর থানা কর্তৃক তদন্তে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। আর এই মামলায় গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬ দিনের কারাবরণ করেন তিনি। বর্তমানে জামিনে থাকা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা এই মামলা চলমান রয়েছে।
একই সাথে দুই পদে চাকরি
অধ্যক্ষ পদে মাদ্রাসায় কর্মরত থেকে বেতন-ভাতা নিলেও মাদ্রাসার চাকরির তথ্য গোপন করে মুসলিম বিবাহ তালাক নিবন্ধক ও নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। একই সাথে দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করা এমপিওনীতিমালা পরিপন্থী ও সরকারি কর্মচারী বিধিমালা পরিপন্থী যা অর্থ আত্মসাৎ বলে বিবেচিত।
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা গেছে, মোঃ মঈনুল ইসলাম পারভেজ এই মাদ্রাসায় আরবী প্রভাষক হিসাবে যোগদানের পর সম্পূর্ণ বে-আইনী ভাবে জগন্নাথপুর পৌরসভার ৩, ৪ এবং ৬নং ওয়ার্ডের কাজী হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। কাজীপদে অবৈধ ভাবে, তথ্য গোপন করে নিয়োগ লাভের পর তৎকালীন এক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত হয়। লাভজনক কাজীর পদটি টিকিয়ে রাখার জন্য মোঃ মঈনুল ইসলাম পারভেজ মাদ্রাসার প্রভাষক পদ থেকে ২০০৪ সালের ৯ মে তারিখে পদত্যাগ করেন। ২০০৪ সালের ২৮ মে তারিখে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় থেকে মোঃ মঈনুল ইসলামকে জানানো হয়, যেহেতু তিনি জামেয়া কে.এস, মাদ্রাসার প্রভাষক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সেহেতু তাকে কাজীর পদে থাকতে কোন অসুবিধা নাই। মাদ্রাসায় তিনি মোঃ মঈনুল ইসলাম পারভেজ এবং কাজী পদে তিনি মোঃ মঈনুল ইসলাম নাম ব্যবহার করছেন। অর্থ্যাৎ একই ব্যক্তির দুই নাম দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।
অধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজের বিরুদ্ধে কাবিননামা তৈরিতে জালিয়াতি, বাল্যবিবাহ, দেনমোহরের টাকা কমবেশি করা, বর ও কনে পক্ষকে নানা কায়দায় প্ররোচিত করে বিবাহ দেওয়া এবং বিবাহ বিচ্ছেদকরণ, নারীদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। যা চাকরিবিধি পরিপন্থী এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। এসব অভিযোগে গত ২৫ জুন ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজকে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর পৌর এলাকার কেশবপুর গ্রামের শাহনাজ পারভিন লিসা নামের এক মহিলার কাবিননামায় তার নাম মুছে মোসাম্মৎ সাজেদা বেগম নামের অন্য মহিলার নাম বসিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশ গমণে সহায়তার অভিযোগে শাহনাজ পারভীন লিসা বাদী হয়ে ২০ জানুয়ারি, ২০২৩ ইং তারিখে আদালতে (জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জে, সিআর মামলা নং-৩৮/২০২৩) মামলা দায়ের করেন।
কাবিনামায় বয়স জালিয়াতি করে বাল্যবিয়ে
বর ও কনে পক্ষকে নানা কায়দায় প্ররোচিত করে কাবিনামায় বয়স জালিয়াতি করে বাল্যবিয়ে দেওয়ার অভিযোগে উঠেঅধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজের বিরুদ্ধে। তিনি অনৈতিক এমন আরও অনেক কাজ করেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয় উত্থাপন করে কেনও তার এমপিও বন্ধ করা হবে না তা জানতে চায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর।
২০২৩ সালের ২ জুলাই মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানায়, এসব অভিযোগে গত ২৫ জুন অধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজকে কারণ দর্শাতে নোটিশ করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার হুলিয়ারপুর জামেয়া কাসেমিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজের বিরুদ্ধে কাবিননামা তৈরিতে জালিয়াতি, বাল্যবিবাহ, দেনমোহরের টাকা কমবেশি করা, বর ও কনে পক্ষকে নানা কায়দায় প্ররোচিত করে বিবাহ দেওয়া এবং বিবাহ বিচ্ছেদকরণ, নারীদের সঙ্গে অনৈতিক আচরণসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। যা চাকরিবিধি পরিপন্থী এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।
জালিয়াতির মাধ্যমে ১৭ বছর ধরে অধ্যক্ষ
অধ্যক্ষ পদে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত মো: মইনুল ইসলাম পারভেজ (ইনডেক্স নং— ৩২০৮৫৮) ৩০ এপ্রিল, ২০০০ ইং হলিয়ারপাড়া জামেয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদ্রাসায় আরবি প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এরপর ১ অক্টোবর ২০০৪ ইং তারিখ থেকে ১০ নভেম্বর ২০০৫ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৫ সালের ১১ নভেম্বর তিনি অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান। অর্থ্যাৎ প্রভাষক পদে যোগদানের মাত্র পাঁচ বছর ৬ মাস ১২ দিনের মাথায় তিনি প্রভাষক থেকে সরাসরি অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো ১৯৯৫ অনুযায়ী, আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হতে হলে দাখিল মাদ্রাসায় আট বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অথবা মাদ্রাসায় প্রভাষক পদে আট বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রথম শ্রেণীর কামিল ডিগ্রীসহ সকল পরীক্ষায় ২য় শ্রেণী/বিভাগ, যদি কামিল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ না থাকে সেক্ষেত্রে ইসলামিক স্টাডিজে দ্বিতীয় শ্রেণীর মাস্টার্স ডিগ্রীসহ সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ।
আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হতে হলে দাখিল মাদ্রাসায় আট বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা অথবা মাদ্রাসায় প্রভাষক পদে আট বছরের অভিজ্ঞতা থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও অধ্যক্ষ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে ছিল আরবি প্রভাষক পদে মাত্র পাঁচ বছর ৬ মাস ১২ দিনের। যেখানে কাম্য যোগ্যতা আট বছরের সেখানে মাত্র পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি কিভাবে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেলেন তা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক মো: মইনুল ইসলাম পারভেজকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও পরবর্তীতে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
আলিম মাদরাসায় আরবি প্রভাষক পদে নিয়োগ পেতে হলে অবশ্যই কামিল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ সহ সকল পরীক্ষায় ২য় বিভাগ থাকা বাধ্যতামূলক। অথচ মো. মইনুল ইসলাম পারভেজ ২০০০ সালের ৩০ এপ্রিল নিয়োগ পেলেও তিনি কামিল পাশ করেছেন ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০২ ইং তারিখে। অর্থ্যাৎ নিয়োগের দুই বছর পর কামিল পাশ করেন।
নিয়োগ জালিয়াতির বিষয়ে গত ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশ করার পর ১৬ অক্টোবর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর তাকে শোকজ করে।
ভুয়া আবেদন ও স্বারক ব্যবহার করে গভর্নিং বডির বিদ্যোৎসাহী সদস্য
জগন্নাথপুরের হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কর্তৃক প্রস্তাবিত নামের তালিকায় নাম না থাকলেও, মাদ্রাসা প্রধানের আবেদন উপেক্ষা করে ভুয়া আবেদন এবং মাদ্রাসার ভুয়া স্মারক নম্বর ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে উপজেলার হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কর্তৃক বিদ্যোৎসাহী সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন অধ্যক্ষ মো: মইনুল ইসলাম পারভেজ (ইনডেক্স নং— ৩২০৮৫৮) । ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ইং তারিখে তাকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে মনোনীত করে চিঠি ইস্যু করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক (ঢাকা ও সিলেট বিভাগ) মোহাম্মদ সাজিদুল হক। হবিবপুর কেশবপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে সেই তদন্ত এখনও চলমান।
‘ধার করা’ শিক্ষার্থী দিয়ে চালাচ্ছেন মাদ্রাসা
হুলিয়ারপাড়া আলিম মাদ্রাসার দাখিল শ্রেণি চলছে ‘ভাড়া করা শিক্ষার্থী’ দিয়ে। নামে মাত্র শিক্ষার্থী থাকলেও অনুমোদনহীন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে দাখিলের কার্যক্রম। শুধু দাখিলের পরীক্ষার্থী নিয়ে নয় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে শ্রেণি প্রতি ৬০ থেকে ৭০ জন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী আছে মাদ্রাসাটির।
সর্বশেষ ২০২৪ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে দাখিল পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, হুলিয়ারপাড়া জামেয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদ্রাসার দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৫৯ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার শতভাগ। তবে এই ৫৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৯ জন শিক্ষার্থী ‘ধার করা’। অর্থ্যাৎ তারা হুলিয়ারপাড়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থীই নন। ৫৯ জন দাখিল পরীক্ষার্থীর ৩৯ জন শিক্ষার্থী একই উপজেলার কুবাজপুর শাহজালাল সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসার। কুবাজপুর শাহজালাল সুন্নিয়া দাখিল মাদ্রাসাটির নেই পাঠদানের অনুমোদন, নেই স্বীকৃতি। লন্ডন প্রবাসীদের আর্থিক অনুদানে চলা এই মাদ্রাসাটি গত প্রায় দশ বছর ধরেই শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে হুলিয়ারপাড়া জামেয়া কাদেরিয়া সুন্নিয়া আলিম মাদ্রাসায় নামে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে বসবাস করা শিক্ষককেও স্বপদে বহাল রাখেন অধ্যক্ষ মইনুল
স্থায়ীভাবে বিদেশে বাস করেও টানা ছয় মাস বেতন ভাতা উত্তোলন করেছিলেন হুলিয়ারপারা জামেয়া কাসেমিয়া আলিম মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক মোঃ আলী আসকার (ইনডেক্স নম্বর- N1072104)। শুধু এই শিক্ষক নন একই মাদ্রাসার আরেকজন ইংরেজি শিক্ষক হেলাল উদ্দিন (ইনডেক্স নম্বর M0028115 ) চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরেও আট মাস ধরে বেতন উত্তোলন করেছেন। বিদেশে বসে এবং চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরেও বেতন-ভাতার টাকা উত্তোলনের সুযোগ করে দিয়েছেন খোদ মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ মো: মইনুল ইসলাম পারভেজ এবং গভর্নিং বডির সভাপতি ফয়জুল ইসলাম। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে পরে এই শিক্ষকদের নাম কর্তনের জন্য মাদ্রাসা অধিদপ্তরে নাম প্রেরণ করেন তিনি।
- অর্থ আত্মসাৎ: জগন্নাথপুরের সেই অধ্যক্ষ মঈনুলের এমপিও স্থগিত
অর্থ আত্মসাৎ ও স্বাক্ষর জালিয়াতি: মাদ্রাসা অধিদপ্তরে অধ্যক্ষ মঈনুলকে তলব - ডিআইএ’র তদন্ত: ‘ধার করে’ শিক্ষার্থী এনে দেখালেন অধ্যক্ষ মঈনুল
- অধ্যক্ষ মইনুলের এমপিও বাতিল কেন হবে না জানতে চেয়েছে মাদ্রাসা অধিদপ্তর
- জালিয়াতির মাধ্যমে ১৭ বছর ধরে অধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম পারভেজ!
- শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ প্রকাশ, সেই অধ্যক্ষ মইনুলকে অধিদপ্তরে তলব
- অধ্যক্ষ মইনুলের এমপিও বাতিল কেন হবে না জানতে চেয়েছে অধিদপ্তর
- ভুয়া আবেদন এবং স্মারকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য হলেন সেই অধ্যক্ষ মইনুল
- সেই অধ্যক্ষ মইনুলের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
- জগন্নাথপুর: অধ্যক্ষ মইনুলের জালিয়াতি চিঠি চালাচালিতেই আটকা!
- যুক্তরাজ্যে বসেই বেতন তুলছেন জগন্নাথপুরের মাদ্রাসা প্রভাষক আলী আসকার
- শিক্ষাবার্তা’য় সংবাদ: সেই মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মঈনুলের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য!
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২৭/০২/২০২৫
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.