এইমাত্র পাওয়া

এদেশের প্রকৃত ইতিহাস জানা ও জানানোর উদ্যোগ কোথায়?

।। ড. হাসনান আহমেদ।। 

জীবনের এই পড়ন্ত বিকেলে এসে অতীতের কথা বেশি ভাবতে ও বলতে dইচ্ছে করে। ছোটবেলা থেকে এদেশের ইতিহাস কতভাবেই-না শুনি! সেই বৈদিক যুগের ইতিহাস থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অনেক ঘটনা ও তার বর্ণনার মধ্যে অনেক ফারাক চোখে পড়ে। ব্রাহ্মণ (আর্য) ও মুসলমানদের এ উপমহাদেশে আগমন, বর্ণবৈষম্য, ধর্মপ্রচার ইত্যাদি ভারতবর্ষে দেখেছি বিকৃতভাবে প্রচার করতে।

পারস্পরিক প্রতিহিংসাপরায়ণতার কারণে সত্যানুসন্ধানের তুলনায় রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্ব করে নিজের কোলে ঝোল টানার প্রবণতা বেশি দেখেছি। আমাদের নতুন প্রজন্মের অতীত অনেক কিছুই আত্মানুসন্ধানে জানা প্রয়োজন। এদেশের আওয়ামী লীগের কথা বলতে গেলে সেই ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু করতে হয়, যখন প্রথম নাম পরিবর্তন করেছিল। বেশি কথা এখন থাক। ’৭১ সালের অল্প আগে ও পরের কথা বললেও শেখ মুজিবের কোনো সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশক ভাবনা ছিল বলে মনে হয় না।

তার অপ্রকাশিত বিপরীতমুখী কর্মকান্ড আমাদের অনেকের জানা। ’৭১-এর ৭ই মার্চের অনেক কথাই ছাত্র নেতারা তাকে দিয়ে জোর করে বলিয়েছিল বলে জানা যায়। তিনি একবার বলছেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’, আবার এর পর-পরই পশ্চিম-পাকিস্তানীদের সাথে দেন-দরবারে বসছেন অবিভক্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হবার জন্য। ২৫শে মার্চে গণহত্যার পর হরতাল ডাকছেন; আবার বলছেন, ‘যা, নাকে তেল দিয়ে ঘুমোগে’। এ ছাড়া আরো অনেক স্ববিরোধীতার কথা ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যায়।

স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়েও একই অবস্থা। একবার তাজুদ্দীন আহমেদ সাহেবকে স্বাধীনতার ঘোষণা রেকর্ড না করে ফিরিয়ে দিচ্ছেন, আবার আত্মগোপনে না গিয়ে স্যুটকেসে কাপড়চোপড় গোছানো চলছে পাকিস্তানের কারাগারে যাবার জন্য এবং বলছেন, ‘তোরা যা, ওরা আসছে’। পুরোটাই দ্বিচারিতা। তাই নতুন বাংলাদেশের ইতিহাসকে দু-চোখ মেলে নির্মোহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে লিখলে কেমন হয়? অনুসন্ধিৎসুজনের প্রশ্ন, তার সাথে ভারত সরকারের আগ থেকেই কি একটা অলিখিত সমঝোতা ছিল? সব কাজেই ভারত তাকে অতি বিশ্বস্ত, আস্তাভাজন ও নির্ভরযোগ্য বলে খুঁজে পেয়েছে।

একটু পেছনের কথা বলি:
ইতিহাস বলে, এ উপমহাদেশ ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসার পর থেকেই উগ্র হিন্দুত্ববাদ মুসলিমবিরোধী হয়ে ওঠে। আমি ভারতে থাকতে যুবসমাজের জন্য তাদের তৈরি অনেক মুসলিমবিদ্বেষী ডকুমেন্টারি ফিল্মও দেখেছি। সে-দেশের ছাত্র-যুবসমাজকে তারা সেভাবেই শিক্ষা দিয়ে গড়ে তুলছে, মনের গভীরে অনেক মিথ্যা গেঁথে দিচ্ছে। মুসলমানদের তারা বরাবরই বহিরাগত শত্রু হিসেবে গণ্য করে। বইপত্রে অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়, মুসলিমবিদ্বেষী হিন্দুত্ববাদী ব্রাহ্মাণ্য-শক্তি ব্রিটিশ শাসকদের সহযেগিতা করে মিলেমিশে উপমহাদেশে কর্তৃত্ব করতে থাকে। দ্বি-জাতি তত্বের ভিত্তিতে ’৪৭-এ পাকিস্তান নামে দেশের স্বাধীনতা তারা মন থেকে মানতে প্র¯‘ত নয়। তারা উপমহাদেশকে চেয়েছিল ‘হিন্দুস্তান’ হিসেবে দেখতে।

আওয়ামী লীগের মধ্যেও এ প্রবণতা লক্ষণীয়। এর পর থেকেই ভারত ‘পাকিস্তান’ শব্দটাকে সহ্য করতে পারে না। এ প্রতিহিংসা আজ পর্যন্ত বহাল আছে। পূর্ব-পাকিস্তানের সাথেও তাদের সম্পর্ক তাই একই ছিল। এখানেও জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মুসলমান। এসব জানতে ’৪৭-এ হিন্দু নেতাদের বক্তৃতা ও লেখালেখি মনোযোগ দিয়ে পড়তে হয়। তখন থেকেই পূর্ব-পাকিস্তানকে পশ্চিম-পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার গোপন প্রচেষ্টা তারা চালিয়ে যাচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী পূর্ব-পাকিস্তানের প্রতি অবহেলা, বৈষম্য ও শোষণ ভারতের কু-মতলব বাস্তবায়নে আরো সহায়তা করে।

’৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও ভারত সে স্বাধীনতাকে মেনে নেয় না, এদেশকে তারা তাদের একটা আশ্রিত রাজ্য হিসেবেই গণ্য করে এবং সেবাদাস দিয়ে শাসন করে। ’৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা শব্দটা মনে হলেই ভারতের বুকটা আজো ধড়াস করে ওঠে, এই বুঝি এত কুটবুদ্ধি করে বিভাজিত বাংলাদেশটা মুসলমানদের দেশ হয়ে গেল! তাদের রক্ত মাথায় উঠে যায়।

তাদের আশা ও চেষ্টা, এদেশে যারা টিকে থাকবে তারা হবে ভারতের নির্ভেজাল হুকুম বরদার ও মুসলিমবিদ্বেষী। এজন্য আগে প্রয়োজন মুসলমানি চিন্তাধারায় পুষ্ট লোকজনকে বিভিন্ন ঠুনকো অজুহাতে দমিয়ে রাখা, খতম করা; নামের সাথে জঙ্গিবাদের ট্যাগ লাগিয়ে বিশ্বব্যবস্থা থেকে একঘরে করে ফেলা। দেশটাকে লুটপাট করে খাওয়া, পশ্চাৎ ভুমি হিসেবে ব্যবহার করা। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে ’৪৭ সাল পর্যন্ত ভারতের হিন্দত্ববাদী শাসক-সহায়ক গোষ্ঠী এবং ’৪৭ সাল থেকে ’৭১ সাল পর্যন্ত ভারতের শাসক গোষ্ঠী এ উপমহাদেশ থেকে মুসলমানদের নাম-নিশানা বিলীন করার মতলবে নিয়োজিত।

’৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকেই আওয়ামী শাসকদের সঙ্গে নিয়ে এ প্রক্রিয়া পুরাদমে চলে আসছে। এসব কাজে এদেশের বেশকিছু তথাকথিত মুসলমান নামধারী ‘মীর-জাফর’, জার্নালিস্ট, বুদ্ধিজীবী, প্রগতিবাদী গোলামদের মগজ ধোলাই করে ইসলামবিদ্বেষী চাটুকার তৈরি করার প্রয়োজন ভারতের নীলনক্সার অংশ ছিল। সে-কাজে তারা বেশদূর সফলকামও হয়েছে। এখন এদেশে ব্রিটিশও নেই, পাকিস্তানও নেই। ভারতের পোষা দাসও স্বদেশে ফিরে গেছে। এখন এদেশের স্বাধীন বাতাসে বুকটান করে নিশ্বাস নেওয়া দেশ-সচেতন মানুষ এদেশকে আর দিল্লীর অবাধ চারণভ‚মি হতে কোনোক্রমেই দেবে না।

এ চিন্তাধারার বিপরীত কিছু হলেই জাগ্রত স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ তার সমূচিত জবাব দেবে। ভারতের পরিকল্পনায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনাবাহিনীর অফিসার নিধন, শাপলা চত্ত¡রে গণহত্যা, সাধারণ প্রতিবাদী মানুষ ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অমানবিক নির্যাতন, হত্যা-গুম, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নির্বিচার হত্যা তাদের সফলতার অংশ। শেষে গণহত্যা করেও সাধ মেটেনি, হাজার হাজার সেবাদাস সঙ্গে নিয়ে প্রভুর সেবাদাসী হয়ে চরণে জীবন সঁপে দিয়েছে। সেখানে বসে প্রভুর সঙ্গে যোগসাজশে এখনও মুসলিম নিধন ও দেশ-দখলের গোপন ষড়যন্ত্র অবিরাম চলছে। একটা শেণি কত অবিবেচক, সীমারতুল্য নির্মম-পাষন্ড হৃদয়ের সেবাদাস হলে এত কিছু করেও এক বিন্দু পরিমাণ অনুশোচনার গন্ডি তাদের আত্মসচেতনতাকে ষ্পর্শ করে না! ভারতের এই মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব থেকে এদেশ কখনোই মুক্তি পাবে কিনা আমার কোনো দ্বিধাদ্ব›দ্ব নেই।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে অজও আওয়ামী-লীগারের মনের ভাবধারা আমি পর্যবেক্ষণ করেছি, এটা আমার পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা। তাদের অধিকাংশ অবিভক্ত ভারতে বিশ্বাসী। এ কারণেই ভারতের সাথে এদের এত গাঁটছড়া, নিজের দেশকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার আপ্রাণ প্রচেষ্টা; এমনকি এদেশের সবকিছু ভারতের নামে লিখে দিলেও তাদের তৃপ্তি মেটে না। আমার মনে খটকা লাগে, বাপের অস্তিত্ব না থাকলে আমার অস্তিত্ব থাকে না, আবার দাদার অস্তিত্ব না থাকলে বাপের অস্তিত্বও থাকে না; এ বুঝটুকু কি বাংলাদেশী নামধারী ভারতীয় দাসদের মাথায় নেই? এদের কাছে স্বাধীনতা শব্দটা অর্থহীন। এরা ক্ষমতা ও স্বার্থলোভী। আবার অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও আত্মকলহে মত্ত। কেউ আবার অতীতের স্বকীয় কুলগৌরব ও কুলধর্ম বিসর্জন দিয়ে মতাদর্শে সেবাদাসদের ¯’লাভিষিক্ত হতে চায়। এটা আত্মবিনাশক ও কুলনাশক।

’৭১-কে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। ’৭১-এর স্বাধীনতা এসেছিল বলেই জুলাই’২৪-এ ছাত্র-জনতার অসমাপ্ত বিপ্লবের জন্ম হয়েছিল; ’৪৭-এ পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল বলেই ’৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগ যে ভারতের স্বার্থ রক্ষা, নিরঙ্কুশ-নির্লজ্জ দালালী, অবিভক্ত ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও তাদের স্বার্থ দেখভালের জন্য এদেশে জন্ম নিয়েছিল, এ বুঝ এতটা বছরে আক্কেলজ্ঞানসম্পন্ন সবার কাছেই এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে। বাংলাদেশে আওয়ামী শাসনের বরাবরের ইতিহাস ঠিক এমনটিÑ “এই হোক মোর শেষ পরিচয়। মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি ‘ভারতেরই’ লোক।” তাই শেখ মুজিবের অসমাপ্ত অনেক সেবাদাসের কাজ শেখ হাসিনার হাতে সমাপ্ত হয়েছে।

আওয়ামী লীগও এদেশ থেকে নিঃশেষ হয়েছে। তাদের এসব কর্মপদ্ধতি ও কর্মকৌশল, গুম-হত্যা, ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষ, রিলিফ লুটপাট, মুজিববাদী শাসন, রক্ষিবাহিনীর জুলুম, বাকশাল কায়েম, অবশেষে ১৫ বছরের হত্যা-গুম, কোষাগার চাটাচাটি, ব্যাংক লুট, টাকা পাচার, গণহত্যা ও সবশেষ সদলবলে পলায়ন বিশ্লেষণ করলে আওয়ামী লীগকে এদেশের কোনো রাজনৈতিক দলীয় সংগঠন বলা যায় না; একটা ভীনদেশী-আজ্ঞাবাহী উগ্রবাদী বর্গী-সদৃশ লুটেরা-গোষ্ঠী বলা যায়। এদেশে তাদের রাজনীতির নামে দস্যুবৃত্তি সমূলে শেষ, যদি বাংলাদেশীদের স্বদেশী চৈতন্যোদয় হয়। তবে এখন থেকে ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস, ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং ৫ই আগষ্ট স্বাধীনতাবিরুদ্ধ উগ্র হিন্দুত্ব-আধিপত্যবাদের সেবাদাসমুক্ত দিবস বলে পালন করা যায়।

ভাবনা অন্যখানে। এই লুটেরা গোষ্ঠী সুদীর্ঘ বছর ধরে এদেশের জনগোষ্ঠীকে দুর্নীতি-দুরাচারবৃত্তি, অপমানসিকতা ও সেবাদাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে পালিয়ে গেল, এখন এই সামাজিক জন-আপদের কী দশা হবে? এই জন-আপদকে সুশিক্ষিত ও জনসম্পদে পরিণত করার কাজটা কি এতই সহজ? এর জন্য অবশিষ্ট দলগুলোর মধ্যে যে দেশাত্ববোধ, মতৈক্য, সততা থাকা অপরিহার্য, তা কি এদের মধ্যে আছে?

এতটা বছরে সে বোধোদয় দেশপ্রেমী দলগুলোর মধ্যে জন্ম নেওয়া অবশ্যম্ভাবী ছিল, তা কি এদের মধ্যে জন্মেছে? এদেশের ক’জন এ বিষয়টা নিয়ে ভাবছেন? এরা দুরাচার-দুর্বৃত্তায়ন-চাঁদাবাজ প্রতিপালন করবে, না-কী ইতিহাসের সত্য নিয়ে, স্বকীয়-স্বাধীন অস্তিত্বের কথা ভেবে সেমতো দেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করবে? জুলাই ’২৪ এর পর এই সাত মাসে কোনো রাজনৈতিক দল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কারো প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা এ জনগোষ্ঠীকে সচেতন, সুশিক্ষিত ও মানবসম্পদে পরিণত করার এবং স্বাধীন দেশোপযোগী ব্যাপক শিক্ষা-সংস্কারের কোনো কার্যকর উদ্যোগ তো চোখে পড়লো না।দায়ী শিক্ষা-কমিশন প্রতিষ্ঠার দাবিও অনেক লেখায় করেছি।

এ বিষয়ে অন্তর্নিবিষ্ট সব সমস্যাগুলো সঠিকভাকে চিহ্নিত হয়েছে কিনা সন্দেহ। সমাজ পচে দুর্গন্ধ বেরোচ্ছে। আবার ভবিষ্যৎ আশার আলোও তেমন চোখে পড়ে না। প্রায় সবাই ক্ষমতায় গিয়ে দেশের কোষাগার চাটার চিন্তায় বিভোর। তাহলে পরিণতি কী? ‘আকলমন্দ কে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়। সত্য কথাগুলো শুনতে তিক্ত ও বিস্বাদ লাগে তো বটেই।

প্রয়োজন ছিল এদেশের বাদবাকি রাজনৈতিক দল, নেতা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ ও স্বনিয়ন্ত্রিত হয়ে দেশকে টিকিয়ে রাখা ও দেশের উন্নতির পরিকল্পনা করা। সুশিক্ষা, শিক্ষার মান, সামাজিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম নষ্ট করে দিয়ে দেশ ধ্বংসের সকল উপাদান এদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থবাদী একটা মহলের উদ্ভব হয়েছে, যারা দেশের উন্নতি, ইন্টিগ্রিটি, মূল্যবোধ, জনসেবা বিসর্জন দিয়ে বিভিন্ন খোঁড়া অজুহাত দেখিয়ে ‘চাটার দল’ নামে খ্যাত হয়েছে এদেরকে চিহ্নিত করা। নিরপেক্ষ নির্বাচন এদের মুখের বুলি। ’৯১, ’৯৬ ও ২০০১-এ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছিল বলে ধরে নেওয়া যায়।

গণতন্ত্রের উত্তোরণে সুষ্ঠু নির্বাচন ছাড়া লুটপাট, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজী, হাট-মাঠ দখল, শোষণ ও আইনহীনতার তেমন কোনো উন্নয়ন হয়েছে কি? অনেক বড় দলও তাদের দলীয় আদর্শ ও অবস্থা থেকে অনেকটা সরে এসেছে বলে দেশপ্রেমী মানুষদের বলতে শোনা যায়। এদের অনেক দলে অনেক প্রগতিবাদী-ইসলামবিদ্বেষী নেতা জায়গা দখল করে নিয়েছে।

নিজের বাপ-দাদার অস্তিত্বকে বিষর্জন দিয়ে তারা প্রগতিবাদী হয়েছে। আমার জানা মতে, যে জাতি তার অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ভুলে গিয়ে অসার আদর্শের চরণে জীবন ও কর্মকে সঁপে দেয় তারা পরজীবী ও নিঃস্ব ছাড়া আর কী হতে পারে! তাদের বাপ-দাদার ধর্ম ও নিজের নাম যদি এতই অ”ছুৎ ও জঙ্গীমনা হয়ে থাকে, তাহলে তারা এদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে ধর্মীয় সত্তা বজায় রেখে কিভাবে সুশিক্ষিত মুসলমান বানানো যায়, সে পরামর্শ খয়রাত করতে পারে, দোষত্রুটি সংশোধন করিয়ে নিতে পারে; তাদেরকে গড়ে তুলতে পারে। তবে এদেশের বিশাল একটা সম্প্রদায়কে অজ্ঞতা ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এদেশ (জন্মভ‚মি) থেকে বিতাড়িত করা বা ধ্বংস করার মানসিকতা নিয়ে দেশব্যাপী  হিন্দুত্ব-আধিপত্যবাদের তালিম দেওয়াকে তো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

অনেকের ভাবা প্রয়োজন যে, নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক নির্বাচন মানে উন্নতি নয়, উন্নয়নের পূর্বশর্ত মাত্র। দেশের অব্যবস্থা, দুঃশাসন, দুর্নীতি, অপশাসন ইত্যাদির খোল-নলচে বদল করার এখনই সময় এসেছে। এ সুযোগ হাতছাড়া করা কোনোক্রমেই সংগত হবে না। ক্ষমতালোভী অনেকেই ইনিয়ে-বিনিয়ে পরিবেশকে নষ্ট করে দিতে চাইবে। তাতে নির্দিষ্ট কোনো দল বা গোষ্ঠী লাভবান হবে নিশ্চয়ই, তবে দেশ গড়ার উপযুক্ত সময় হারাবে জনসাধারণ।

ক্ষুদ্র স্বার্থান্বেষী মহলের কি এত তাড়াতাড়ি চৈতন্যোদয় হবে? সত্য তথ্য লিখে সংরক্ষণ করারও এখনই উপযুক্ত সময়। বাংলাদেশে ’৭২ সাল থেকে আওয়ামী শাসন সম্পর্কীত দুঃশাসন, নির্বিচার-হত্যা-গুম ও লুটপাট-গণহত্যার বিষয় এবং অগণিত মানবতাবিরোধী লোমহর্ষক ঘটনা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো মন্ত্রণালয়কে কোনো ইতিহাসভিত্তিক প্রজেক্ট হাতে নিতে এখনোও দেখিনি।

এ বিষয়ে কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, ইতিহাস, স্মৃতিকথা, প্রামাণ্য রচনা, প্রকাশিত খবর একত্রিকরণসহ অনেকেই অনেক কিছু লিখতে ও সংরক্ষণ করতে পারেন। একটা কমিটি করে যাচাই-বাছাই করে প্রজেক্টের পক্ষ থেকে প্রকাশের ব্যবস্থা করা যায়। রচয়িতাকে কিছু সম্মানীও দেওয়া যায়। বর্তমান প্রজন্মও অতীত জানতে পারে, শিখতে পারে। এতে জাতীয় সম্পদ গড়ে ওঠে। বিষয়টা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিধায় সংশ্লিষ্ট পক্ষ ভেবে দেখতে পারেন।

লেখক: অধ্যাপক ড. হাসনান আহমেদ

সাহিত্যিক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ

প্রেসিডেন্ট, জাতীয় শিক্ষা-সেবা পরিষদ।

শিক্ষাবার্তা /এ/২৭/০৩/২০২৫

দেশ বিদেশের শিক্ষা, পড়ালেখা, ক্যারিয়ার সম্পর্কিত সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম, ছবি, ভিডিও প্রতিবেদন সবার আগে দেখতে চোখ রাখুন শিক্ষাবার্তায়


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading