এইমাত্র পাওয়া

উত্তীর্ণ হয়েও স্কুলে ভর্তি হতে না পেরে বিপাকে শতাধিক শিক্ষার্থী

সুনামগঞ্জঃ নতুন বছরের ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে পঞ্চম শ্রেণি উত্তীর্ণ হয়েও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে না পেরে বিপাকে পড়েছে শতাধিক শিক্ষার্থী। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাতে অভিভাবকরা দিশাহারা হয়ে ইউএনওর কাছে দৌড়াচ্ছেন ভর্তির আবেদনে সুপারিশ নিতে।

জানা যায়, উপজেলা সদরে বালকদের জন্য একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বর্তমান সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রতি শিফটে অনলাইন লটারির মাধ্যমে ৫৫ জন ভর্তি করার সুযোগ আছে। ফলে লটারিতে বাদ পড়া শতাধিক ছাত্রের এই স্কুলে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাহিরপুর সদরে বালক ছাত্রদের জন্য বিকল্প কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকরা। শতাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক দিশেহারা হয়ে ভর্তির আবেদনে সুপারিশ নিতে বিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সভাপতি ইউএনওর কার্যালয়ে দৌড়াচ্ছেন।

তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরগুলোতে এক শিফটে এ বিদ্যালয়ে প্রতি বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১৪০ থেকে ১৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। হঠাৎ করে গত বছর থেকে প্রতি শিফটে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না। এমন সিদ্ধান্তের কারণে আমরা ৫৫ জনের বেশি ছাত্র ভর্তি করতে পারছি না। এ বছর লটারির মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হয়েছে ইতোমধ্যে তাদের ভর্তি করা হয়েছে। একজন ছাত্র ভর্তি না হওয়ায় একটি সিট খালি আছে। তাছাড়া গেল বছর এমনিভাবে লটারিতে বাদ পড়ে যারা অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিল তাদের তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও সব বালকদের দ্বিতীয় শিফটে ভর্তি করেন।

তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্রের অভিভাবক তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের রতনশ্রী গ্রামের উজ্জল মিয়া বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমার ছেলে এই স্কুলে ভর্তি হতে না পারলে জেলা শহরে বা অন্য জায়গায় রেখে পড়ানোর সামর্থ্য আমার নাই। ফলে এবছর ছেলের পড়ালেখা স্থগিত করা ছাড়া উপায় নেই।

আরেক ছাত্রের অভিভাবক ভাটি তাহিরপুর গ্রামের সোহেল মিয়া জানান, আমরা হাওর এলাকার মানুষ। বহুকাল থেকেই আমাদের ছেলেমেয়েরা তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে আসছে। বালকদের জন্য সদরে আর কোনো বিদ্যালয় না থাকায় বাধ্য হয়েই তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতেন। নীতিমালার কারণে লটারির বাইরে কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হচ্ছে না। শুনেছি গত বছর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই সমস্যার সমাধান করেছিলেন। এবারও অনুরোধ করবো বাকি ছাত্রদের ভর্তি করে সমস্যার সমাধান করার জন্য।

ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তৌফিক আহমদ বলেন, তাহিরপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত ছেলেদের লেখাপড়ার জন্য তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। মেয়েরা লটারিতে না টিকলে তারা পার্শবর্তী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হতে পারে। কিন্তু ছেলেরা ভর্তি হতে না পারলে লেখাপড়া বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এর মধ্যে বিত্তশালী যারা রয়েছেন, তারা জেলা শহরের স্কুলগুলোতে তাদের সন্তানদের ভর্তি করেন।

তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, এবছর যারা লটারিতে সিলেক্ট হয়েছে তাদের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভর্তি করা হয়েছে। গত বছরের মতো দ্বিতীয় শিফটে বাকিদের ভর্তি করা হবে কিনা ইউএনওর সঙ্গে পরামর্শ করে বলা যাবে।

তাহিরপুরে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম কালবেলাকে জানান, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে নীতিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হাসেম বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিষয়ে সরকার কর্তৃক নীতিমালা করে দেওয়ার কারণে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে না পারা শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা আবেদনে সুপারিশ নিতে আমার কাছে আসছেন। তবে বিষয়টি নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও ভর্তি কমিটির সকলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/২০/০১/২০২৫


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading