নিজস্ব প্রতিবেদক।। রাজধানীর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় বাড়তি সতর্কতা নিয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি রাজধানীর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সঙ্গে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের জেরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ও চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করেছে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
পাশাপাশি চলমান সংঘাত থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ ও জড়িতদের শাস্তির ঘোষণা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
গতকাল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় রাজধানীর পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে অবস্থিত সেন্ট গ্রেগরি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ ছাড়া গতকাল বন্ধ ছিল সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। এর আগে বন্ধ ঘোষণা করা হয় ঢাকা কলেজ ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ।
স্থগিত করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা। এদিকে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও নটর ডেম কলেজ। পাশাপাশি বিশৃঙ্খল ঘটনায় কলেজের কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে নটর ডেম কলেজ।
সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর চালানোর পরিপ্রেক্ষিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল কলেজের ফাদার ব্রাদার প্লাসিড পিটার রিবেরু সিএসসি স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস, পরীক্ষা ও অফিস কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
বিদ্যালয়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মেরামতের কাজ অতি জরুরি এবং সময়সাপেক্ষ। সবকিছু অনুকূলে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম যথারীতি শুরু হবে। রবিবার বন্ধ ছিল সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরীক্ষা। এদিকে গতকাল বন্ধ ছিল সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। রবিবার বিজ্ঞপ্তিতে দিয়ে দুই দিনের ছুটি জন্য কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেন অধ্যক্ষ।
একই দিনে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করে কবি নজরুল সরকারি কলেজ। রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার পরই কলেজ দুটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ২০২৩ সালের ৪র্থ বর্ষ স্নাতক পরীক্ষার ২৬ নভেম্বরের পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। তবে স্থগিত করা পরীক্ষার পরিবর্তিত সময়সূচি শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।
এ ছাড়া পূর্ব ঘোষিত সময়সূচির অন্যান্য পরীক্ষা অপরিবর্তিত থাকবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষ এবং উসকানিমূলক পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংযম প্রদর্শনের নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত কয়েক দিনে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষ এবং উসকানিমূলক পরিস্থিতিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের না জড়িয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলমান বিশৃঙ্খল ঘটনায় জড়িত নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীদের শাস্তির আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। গতকাল কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত কয়েকদিনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংঘটিত অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো দ্রুত ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের কার্যকর ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি। যদি আমাদের কোনো শিক্ষার্থী এসব ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকে, তবে তাকে কলেজের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার অভিযোগে অভিযুক্ত এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
হামলায় ন্যাশনাল হাসপাতালের ১০ কোটি টাকা ক্ষতি : ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালে হামলার ঘটনায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল দুপুরে হাসপাতালটির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক প্রফেসর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. ইফফাত আরা বলেন, হামলা করে ক্যাশ কাউন্টার থেকে নগদ টাকা লুট করে নেওয়া হয়।
পাশাপাশি হাসপাতালের অভ্যন্তরে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থী, সাধারণ রোগী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা হয়েছে। পাশাপাশি হাসপাতালের আর্থিক সেবায় নিয়োজিত পূবালী ব্যাংকের শাখায়ও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। বর্বরোচিত হামলায় প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা : ঢাকার মাতুয়াইলে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলায় ৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজটির অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন। গতকাল কলেজের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী হামলায় ৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
এ ঘটনায় আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করতে হবে।
শিক্ষাবার্তা ডটকম/এ/২৭/১১/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.