এইমাত্র পাওয়া

পারিবারিক কলহে বাড়ছে শিশু নি*র্যাতন

নিজস্ব প্রতিবেদক।।সিলেটের কানাইঘাটের শামীম আহমদের ৬ বছরের মেয়ে মুনতাহা আক্তার জেরিন গত ৩ নভেম্বর নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের ৭ দিন পর মুনতাহার লাশ উদ্ধার করা হয় পুকুরের কাদা মাটিতে পুঁতে রাখা অবস্থায়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মুনতাহার সাবেক গৃহশিক্ষক শামীমা বেগম মার্জিয়াসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার সাবেক গৃহশিক্ষক মার্জিয়া বেগমকে চুরির অপবাদ দেয়া অন্যতম কারণ হিসেবে সন্দেহ করছেন মুনতাহার পিতা শামীম আহমেদ ও পুলিশ।

গতকাল শনিবার রাজধানীর পল্লবীতে বাবার হতাশা ও পারিবারিক কলহের জেরে ২ ছেলে শিশু হত্যার শিকার হয়, যা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এর আগে গত শুক্রবার পুরান ঢাকার আজিমপুরে আট মাসের দুধের শিশুকে অপহরণ করে নিয়ে যায় একই ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকা এক নারী। তবে শিশুটিকে ১৬ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব। সঙ্গে শিশুর অপহরণকারীকেও গ্রেফতার করা হয়। অল্পের জন্য এই শিশুটিও বেঁচে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্রের (আসক) শিশু অধিকার লঙ্ঘনবিষয়ক সংখ্যাগত প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৫৮০ শিশু হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী ২০২৩ সালে সারা দেশে ৪৩১ শিশু হত্যার শিকার হয়েছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাদক সেবন, নৈতিক অবক্ষয়, পরকীয়া, সাইবার দুনিয়ার প্রতি নিয়ন্ত্রণহীন আসক্তি ও পারিবারিক বিশৃঙ্খল জীবনে শিশুরা বেশি আক্রমণের শিকার হচ্ছে। সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা পরিবারের শিশুদের ওপর প্রভাব ফেলছে। প্রতিপক্ষকে ফাঁসানো, প্রতিশোধ কিংবা অপরাধ আড়াল করতে কখনো মা-বাবাসহ আপনজনও হয়ে উঠছেন শিশুদের ঘাতক।

পুলিশ ও অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশার ফলে যে সন্তান জন্ম নিচ্ছে তা সমাজ ও পরিবার মেনে নেয় না। জন্মের পর পরই এসব নবজাতকের ঠাঁই হচ্ছে ডাস্টবিনে। দেশে সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় ডিএনএ ব্যাংক না থাকায় রাস্তায়-নর্দমায় ফেলে দেয়া নবজাতকদের পিতা-মাতার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেলে যাওয়া নবজাতকের মা-বাবার পরিচয় শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনতে পারলে এ ধরনের ঘটনা কমে যেত।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলেন, অপরাধীরা সব সময় দুর্বলকে টার্গেট করে। শিশুরা দুর্বল হওয়ায় লোভ ও স্বার্থের জন্য তাদের হত্যা করা হয়। আগে মুক্তিপণের জন্য অপহরণ ও প্রতিশোধ নিতে শিশুদের খুন করা হতো বেশি। বেশির ভাগ পরিচিতজন ও স্বজনদের দ্বারা এ ধরনের ঘটনা ঘটে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পারিবারিক কলহের জেরে মা-বাবার হাতেও সন্তান খুনের ঘটনা বাড়ছে। পারিবারিক অস্থিরতা ও অসততার কারণে শিশু খুনের ঘটনা বাড়ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক এবং অপরাধ গবেষক ড. তৌহিদুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের সমাজ ও পরিবার শিশুবান্ধব নয়। স্বজনদের হাতে শিশু নির্যাতন এ দেশে খুবই স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয়। হত্যার দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় শিশুহত্যা দিন দিন বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, নৈতিক, মানবিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবের কারণে রাস্তা-নর্দমায় নবজাতক উদ্ধারের ঘটনা কমছে না। বিশেষ করে পর্নোগ্রাফি, নরনারীর সম্পর্কের মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি, দায়িত্বের অবহেলার কারণে এসব ঘটনা বাড়ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকেও।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এ/১৭/১১/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.