এইমাত্র পাওয়া

কোটি টাকা কামিয়েছেন অধ্যক্ষ না হয়েও অধ্যক্ষ দাবি করা আ’লীগ নেত্রী রাত্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান না হয়েও তিনি অধ্যক্ষ, একাধারে লেখক, গবেষক একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মরত, পতিত সরকারের আমলের পদধারী নেত্রী, বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী সরকারের প্রভাব বিস্তার করে অবৈধভাবে গড়েছেন কোটি কোটি টাকা। কখনও চাকরি দেওয়ার কথা বলে, নিজে মনোনয়ন চেয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেলেও অন্যকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলে নিয়েছেন মোটা অংকের অর্থ। তবে চাকরি কিংবা মনোনয়ন কোনটাই দিতে না পারলেও সেই টাকা ফেরত দাবি করলে উল্টো মামলা করার ভীতি দেখিয়েছেন, কখনও কখনও করেছেন থানায় লিখিত অভিযোগ, ভুক্তভুগীর নামে এনেছেন ধর্ষণ চেষ্টার মত গুরতর অভিযোগ । আর এত অভিযোগ যার বিরুদ্ধে তিনি হচ্ছেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা অধ্যক্ষ দাবি করা লায়লা আক্তার রাত্রি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার কাটাসূর এলাকার বাসিন্দা লায়লা আক্তার রাত্রির গ্রামের বাড়ী শরীয়তপুর জেলার পালং থানার গঙ্গানগর গ্রামের ঢালি বাড়ী। পিতা আব্দুল মােতালেব। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকার ও রাজনীতি বিভাগে পিএইচডি শেষ করেছেন তিনি। তবে তার বিভিন্ন গবেষণা পত্র এবং পিএইচডি করার নিয়েও সন্দেহ আছে ভুক্তোভুগীদের।  তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য। পতিত সরকারের একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি। তবে মনোনয়ন পাননি তিনি।

ফেসবুকে ব্যক্তিগত প্রোফাইলে লেখা ‘অধ্যক্ষ ড.লায়লা আক্তার রাত্রি” হলেও বাস্তবে তিনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নন। তার রাজনৈতিক ও বিভিন্ন জায়গায় দেওয়া বায়োডাটায় বেসরকারি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ উল্লেখ করলেও বাস্তবে তিনি কোন স্কুল এন্ড কলেজে কর্মরত তা লেখেননি কোথায়। তবে তার ফেসবুকে দেওয়া এক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের নাম পাওয়া গেলেও সেই প্রতিষ্ঠানের সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে জানা গেছে। রাজধানীর লালমাটিয়ার এফ ব্লকে অবস্থিত “NOTA BENE ENGLISH SCHOOL” এর নাম ব্যবহার করে এই স্কুলের অধ্যক্ষ দাবি করেন তিনি। বাস্তবে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই।

জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বাণিজ্য, গভর্নিং বডির সাথে সংশ্লিষ্টতা করে প্রতিষ্ঠানের সাথে ফান্ড থেকে মোটা অংকের অর্থ আত্মাসাৎ করেছেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজধানীর চানখারপুলে অবস্থিত শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ। সাবেক এমপি ও পুরান ঢাকার ত্রাস হাজী সেলিমের সাথে ব্যক্তিগত সখ্যতা থাকায় এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী হওয়ার সুবাধে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ বাণিজ্য ও গভর্নিং বডির ছত্র ছায়ায় কলেজটির অর্থ আত্মসাৎসহ এই প্রতিষ্ঠানে একাধিক অপকর্মে নাম রয়েছে লায়লা আক্তার রাত্রির।

এছাড়াও ‘সােস্যাল ওয়ার্ক এন্ড রিসার্স সেন্টার’ নামে নাম সর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠান খুলে গবেষক হিসেবে নিজেকে দাবি করেন তিনি।আর এই প্রতিষ্ঠান দেখিয়েও অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও পথশিশুদের পাঠদানের জন্য ঢাকার লালমাটিয়া ‘আলোকায়ন বিদ্যালয়’  নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। হাতে  গোনা সামান্য শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চললেও পথশিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার সুবাদে মোটা অংকের অর্থ কামিয়েছেন তিনি।

লায়লা আক্তার রাত্রির অবৈধ টাকায় তার ছেলে অলিন দেশের নামকরা বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ২য় বর্ষে পড়াশোনা করছেন এবং মেয়ে রুপকথা মোহম্মদপুরের নামকরা একটি প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭০ বছর বয়সী এক মার্কিন প্রবাসীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দিবেন বলে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলোভিত করে ৮০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। নিজে শরীয়তপুর-১ আসন থেকে  আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পেলেও তার হাত অনেক লম্বা যে কাউকে তিনি নৌকার মনোনয়ন পাইয়ে দিতে পারেন জানিয়ে এই অর্থ হাতিয়ে নেন (অর্থ নেওয়ার ব্যাংকের চেকের কপি প্রতিনিধির হাতে রয়েছে)। তবে পতিত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে তাকে টাকা ফেরত চাওয়ার সাহস করেননি ভুক্তোভুগি। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের অপকর্মের অন্যতম সঙ্গী এই লায়লা আক্তার রাত্রির কাছে হাসিনা সরকারের পতনের পর অর্থ ফেরত চাইলে তিনি যৌন প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় ঐ মার্কিন প্রবাসী বাংলাদেশীর নামে মোহম্মদপুর থানায় ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করেন।

সাধারণ ডায়রিতে তিনি উল্লেখ করেন, “বিবাদী আমার পূর্ব পরিচিত। এক সময় বিবাদীর সাথে সুসম্পর্ক ছিলো আমার সেই সূত্রে বিবাদীর সাথে আমার আর্থিক লেনদেন ও একসাথে বিভিন্ন কাজকর্ম ও একসাথে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া আসা হয়। বিবাদীর বিভিন্ন কাজকর্মে আমি বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগীতা করি ফলে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী হয় এই সুযোগে বিবাদী আমার সাথে ভিন্ন রকম আচরণ শুরু করে ও কিছু অন্যায় কাজ করতে বলে যা আমাকে বিব্রত করে এবং বিবাদী বিভিন্ন সময় আমাকে  সেক্সুয়াল ভয়েস মেসেজ ও সেক্সুয়াল মেসেজ পাঠিয়ে এবং ফোনকলে সেক্সুয়াল এবিউজ করে মানসিক যন্ত্রনা দেয়। এবং অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে বিবাদী আমার বাসায় এসে আমাকে নানা ভাবে হেনস্তা করে ও ধর্ষণের চেষ্টা করে। বিবাদীর বিভিন্ন অন্যায় কাজে প্রশ্রয় না দেয়ায় ও বিবাদীর নানা অন্যায় আবদার মেনে না নেওযায় বিবাদী আমাকে বিভিন্ন সময় তিনি নিজে ও ভাড়া করা লোকজন দিয়ে আমার জান মালের ক্ষয়ক্ষতি করার চেষ্টা করে। সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দেশের বর্তমান অস্থির অবস্থার সুযোগ নিয়ে বিবাদী ভাড়া করা গুন্ডা আমার বাসায় ও কাটাসুর নিবাসী আমার এক চাচার বাসায় পাঠিয়ে জানমালের ক্ষতিসাধন করিবে মর্মে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন প্রদান করে।”

জানা গেছে এই প্রবাসীর কাছ থেকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলে ৭০ লাখ টাকা নিয়ে পরবর্তীতে মনোনয়ন না পেলে তিনি (প্রবাসী) টাকা ফেরত চাওয়ায় তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ আনেন । জিডিতে বিবাদীকে নিজেই ৭০ বছর উল্লেখ করলেও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার মত গুরুতর অভিযোগ আনেতেও নূন্যতম কর্ণপাত করেননি এই অধ্যক্ষ দাবি করা আওয়ামী নেত্রী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ দাবি করা লায়লা আক্তার রাত্রীর ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভুক্তোভুগীদের দাবি, সমাজের এই ধরণের মানুষের কোন শাস্তি না হলে তারা এই অপকর্ম চালাতেই থাকবে। তার বিচার দাবি করেন তারা।

শিক্ষাবার্তা ডটকম/এএইচএম/১৭/০৯/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.