টাঙ্গাইলঃ জেলার ঘাটাইল উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের প্রধান খন্দকার জাকিয়া শামছির বিরুদ্ধে শিক্ষক প্রশিক্ষণের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের সঙ্গে অশালীন আচরণ, পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। শিক্ষকরা এসবের প্রতিবাদ করায় গত সোমবার আধাবেলা প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। বাড়তি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন শামছি। তবে অন্যসব বিষয় অস্বীকার করেন তিনি।
শিক্ষক ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টার থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গত সোমবার পর্যন্ত শিক্ষকদের ৩৮টি দলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দলে ৩০ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষাক্রম বিস্তরণ প্রশিক্ষণে ২৮ দলে ৮৪০, একীভূতকরণের কৌশল, শিখন শেখানো এবং মূল্যায়ন শীর্ষক প্রশিক্ষণে চার দলে ১২০, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণে তিন দলে ৯০ এবং প্রাক-প্রাথমিকের তিন দলে ৯০ শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে প্রশিক্ষণ নেওয়া শিক্ষকের সংখ্যা ১ হাজার ১৪০।
শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রত্যেক শিক্ষকের কাছ থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে ৮০ টাকা। মোট হিসাবে যার অঙ্ক দাঁড়ায় ৯১ হাজার ২০০ টাকা। শিক্ষক প্রতি ১ হাজার টাকা করে প্রতিটি দলে শিক্ষা উপকরণ বাবদ বরাদ্দ ৩০ হাজার। কিন্তু শিক্ষকদের অভিযোগ, তাদের যা দেওয়া হয়, তার মূল্য ৩০০ টাকাও হবে না। সেই হিসাবে এক দলে খরচ সর্বোচ্চ ৯ হাজার টাকা। উদ্বৃত্ত থাকে ২১ হাজার টাকা। শিক্ষকদের দেওয়া হিসাবে ৩৮ দলে শুধু উপকরণ বাবদ উদ্বৃত্ত টাকার অঙ্ক ৭ লাখ ৯৮ হাজার।
গত সোমবার এসব অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করেন প্রশিক্ষণরত শিক্ষকরা। এতে তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর।
ঝুনকাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান জানান, আধাবেলা বন্ধ থাকে প্রশিক্ষণ। শিক্ষকদের থেকে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ঘাটাইল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান। নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা কাটার বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাঁর সঙ্গেও খারাপ আচরণ শুরু করেন রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর খন্দকার জাকিয়া শামছি।
প্রতিবেদকের কথা হয় প্রশিক্ষণরত বেণীমাধব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর জন্য শিক্ষা উপকরণ বাবদ বরাদ্দ ১ হাজার টাকা। সেখানে আমাদের যে উপকরণ দেওয়া হয়, তার মূল্য ৩০০ টাকার বেশি হবে না। অর্থাৎ একটি ব্যাগ, যার মূল্য ২৫০ টাকা এবং একটি কলম ও প্যাড, যার মূল্য ৫০ টাকার ওপরে হবে না। অথচ দেওয়ার কথা রাইটিং প্যাড, কলম, নেইম ব্যাজ, পেন্সিল, শার্পনার, ইরেজার, কিটব্যাগ, জালিব্যাগ ও তথ্যপত্র।’
আবুল কালামের তথ্য অনুসারে কথা হয় প্রশিক্ষণ নেওয়া আরও ৫০ শিক্ষকের সঙ্গে। তারাও আবুল কালামের সুরে কথা বলেছেন।
কাজলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষক থেকে ৮০ টাকা করে কেটে রাখা হয়। তাঁর অভিযোগ, কেন বাড়তি টাকা কেটে রাখা হচ্ছে? এমন প্রশ্ন শুনে তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
ঘাটাইল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এমরান হোসেন জানান, জাকিয়া শামছি শিক্ষকদের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলেন তা মুখে উচ্চারণ করার মতো নয়। তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ শিক্ষকরা।
টাকা কেটে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ইনস্ট্রাটর খন্দকার জাকিয়া শামছি। তাঁর ভাষ্য, অডিট ফেস করতে হয় এবং প্রশিক্ষণের বিল উত্তোলন করতে গেলে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসেও টাকা দিতে হয়। তবে শিক্ষকদের সঙ্গে অশালীন আচরণের কথা অস্বীকার করেন তিনি।
বিল উত্তোলন করতে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন। তাঁর দাবি, এসব মনগড়া কথাবার্তা। সূত্রঃ সমকাল
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.