কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষার আসন বিন্যাসকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) উপাচার্যপন্থি শিক্ষক হিসেবে পরিচিত দুই সহকারী প্রক্টরের মধ্যকার দ্বন্দ্বের জেরে পদত্যাগ করেছেন এক সহকারী প্রক্টর। সিনিয়র হওয়া সত্ত্বেও জুনিয়র শিক্ষক কর্তৃক হেনস্তার যথাযথ বিচার পাননি দাবি করে তিনি পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগকৃত শিক্ষক হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) কাজী এম. আনিছুল ইসলাম। এবং অন্য সহকারী প্রক্টর হলেন মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক আবু ওবায়দা রাহিদ।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) রেজিস্ট্রার দপ্তর বরাবর প্রেরিত কাজী এম. আনিছুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পদত্যাগ পত্রে এটি জানা যায়।
পদত্যাগপত্রে আনিছুল ইসলাম দাবি করেন, আবু ওবায়দা রাহিদ অনুমতি ছাড়াই আমাদের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নির্মিতব্য সংরক্ষিত কক্ষে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আসন বিন্যাস পরিকল্পনা করেন এবং তা কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠিয়ে দেন। অনুমতি ছাড়া ল্যাবে প্রবেশ ও আসন পরিকল্পনা করার কথা জানতে চাইলে তিনি কাজী আনিছের সাথে উদ্ধত আচরণ করেন। ঈদের ছুটি শেষে ‘অনুমতি নেওয়ার’ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের গোল চত্বরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ফের বাকবিতণ্ডা হয়। পরবর্তী সময়ে ‘সমঝোতা বৈঠকে’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও একজন অধ্যাপকের সামনে তিনি আমাকে মারতে উদ্যত হন এবং আমার পরিবার নিয়ে অশালীন কথাবার্তা বলেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কাজী আনিছুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইনফরমালি বিচারের জন্য বসেছিলাম। সেখানে প্রক্টর ও মিজান স্যার ছিলেন। সেখানে আমি বিচার পাইনি। অথচ ঐ সময়ে রাহিদ আমার উপর চড়াও হয়েছে। উপাচার্য স্যারকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। স্যারের বাংলোতেও আমি গিয়েছি। সেখানে আমি সবকিছু খুলে বলেছি। আমি স্যারকে বলেছি, যেহেতু উনি বারবার হুমকি দিচ্ছেন, প্রক্টরিয়াল বডির একটা শক্তি দেখাচ্ছেন, সেজন্য আমি শঙ্কিত বোধ করছি। আমি যদি এখন উনার সাথে বসে প্রক্টরিয়াল কাজ করি তাহলে পরিবারের প্রতি অশ্রদ্ধা হয়। সেজন্য আমি পদত্যাগ করেছি। এর আগে উপাচার্য স্যারকে আমি একটা দাবি দিয়েছিলাম, তাকে এ জায়গা সরিয়ে আমাকে রাখেন।”
এ বিষয়ে আবু ওবায়দা রাহিদ জানান, আমি ওনাকে মারতেও যাইনি, ওনার পরিবার নিয়েও কোনো বাজে কথা বলিনি। বরং উনি কথায় কথায় আমাকে অনেক খোঁচা দিয়ে কথা বলেছেন। আমাকে বলেছেন আমার মুখের কথা নাকি আমার জুতার মতো সুন্দর। এরকম অনেক উস্কানিমূলক কথা বলেছেন। উপস্থিত শিক্ষকদের কেউ যদি বলে আমি ওনার সাথে আমি বাজে আচরণ করেছি আমি মেনে নিব। আর ঐ ল্যাবের রুম ফাঁকা থাকায় ও ল্যাবের যন্ত্রপাতি প্যাকেট বন্দি থাকায় আমরা কক্ষটি নিয়েছিলাম। তাছাড়া রুমটি পেতে কাজী আনিছ স্যার কে মেইল করেছি এবং মেইলের কোনো উত্তর পাইনি। দীর্ঘদিন একসাথে কাজ করার পর তিনি হুট করেই নিজের কথা বলার সুর পাল্টে ফেলেছেন।
তিনি আরও বলেন, ওনার এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করার কারণে উনাকে বলেছিলাম, যারা এই গ্রুপটাকে ঔন করত, তারা আপনার জন্য চলে গেছে। আপনি আইনুল স্যার, লতা ম্যাডাম, হাসিনা ম্যাডাম, আইন বিভাগের শিক্ষকদের সাথে বাজে আচরণ করার কারণে উনারা চলে গিয়েছেন।
উপাচার্যপন্থি শিক্ষকের এমন পদত্যাগের বিষয়ে এক শিক্ষক জানান, ঈদের আগে থেকেই শুনে আসছি উনি পদত্যাগ করবেন।তিনি মূলত পদত্যাগ করার একটা সুযোগ খুঁজছিলেন। যখন যেদিকে সুযোগ আসে, তিনি ঐদিকেই চলে যান।
এদিকে উপাচার্যের বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে ৩ দফায় ক্লাস বর্জন করে উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকরা। এছাড়া বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে প্রায় ১২ জন শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। এবার নতুন করে পদত্যাগ করছেন উপাচার্যপন্থি শিক্ষকরাও।
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/২৪/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.