শেখ মোহাঃ শাহিনুল আলম: উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত ছাত্র রাজনীতির অতীত থাকলেও কয়েক দশক ধরে দৃশ্যমান ভূমিকা খুবই নগণ্য। তাছাড়া ছাত্রনেতা তৈরি হচ্ছে মূল রাজনৈতিক দলীয় সিদ্ধান্তে। চলমান ছাত্র রাজনীতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা নিয়ে কথা নেই, শিক্ষায় জীবন-জীবিকায় সমাজে প্রভাব এবং শিক্ষার বাস্তবতার সাথে যথেষ্ট অসংগতি ক্রমবর্ধমান। শিক্ষার সর্বস্তরে শৃঙ্খলার ঘাটতি চরম পর্যায়ে। পৃথিবীর ক্রমবিকাশমান দেশে ছাত্র রাজনীতি আদৌ আছে কি না, থাকলে সেটার রূপ কেমন? প্রচলিত ছাত্র রাজনীতি প্রত্যক্ষভাবে সর্বস্তরের জনগণের জন্য যে ভূমিকা রেখেছে তার উল্লেখযোগ্য অবদান পরিমাপ করা প্রয়োজন।
দলীয় ছাত্র রাজনীতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে যতটা এগিয়ে নিতে চেয়েছে তার চেয়ে বেশি পিছিয়েছে। তাই বলে ছাত্র রাজনীতি চলবে না, এমনটি নয় বরং গাঠনিক কাঠামোতে ছাত্র রাজনীতি বেগবান করা সময়ের দাবি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি এ ভূখ-ের ঐতিহ্য। ছাত্র রাজনীতিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখবার সুযোগ নেই কিন্তু ছাত্র রাজনীতির ঐতিহ্য সুখকর হলেও নব্য ইতিহাস রাষ্ট্র ক্ষমতাকেন্দ্রীক, আধিপত্যবাদ সহ টেন্ডারবাদ, অর্থবাদ, বহুমুখী নব বাদের আধিক্য বিদ্যমান। তাই বলে ছাত্র রাজনীতির মত এত গুরুত্বপূর্ণ দর্শনকে ছোট করে দেখার সুযোগ না দেওয়াই ভালো। কিন্তু গঠনমূলক আদর্শ দর্শনভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি জরুরী। যে রাজনীতি ছাত্রদের অধিকার, দেশমাতৃকার গঠন, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময় জাতিসত্তা উপহার দিতে পারবে। আনুষ্ঠানিক ছাত্র রাজনীতি সময়ের আহ্বান। শিক্ষা ব্যবস্থায় বিষয়ভিত্তিক শ্রেণিকরণ হচ্ছে, পেশাভিত্তিক গবেষণাধর্মী শিক্ষা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
শিক্ষায় বিজ্ঞান প্রযুক্তি, গবেষণায় চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণায় কৃষিশিক্ষা ক্রমবিকশিত। শিক্ষা ধারায় প্রতি ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ হচ্ছে স্ব স্ব স্বকীয়তায়। যেহেতু ছাত্র রাজনীতি জনপ্রিয়, জনজরুরী তাই সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ছাত্র রাজনীতি নয়, চলবে না সেখানে শিক্ষক রাজনীতি, বরং ছাত্র রাজনীতির জন্য পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় সময়ে দাবি। যেখানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বিষয়ক পাঠদান এবং গবেষণা চলবে, ব্যবহারিক ক্লাস চলবে। শিখবে মিছিল করার পদ্ধতি, শ্লোগান তৈরির কৌশল, কীভাবে পোস্টার লিখতে হয়, কোথায় কীভাবে লাগাবে সেই পোস্টার ইত্যাদি, যারা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান দ্বারা জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা রাখবে, দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে।
ছাত্র রাজনীতি বিষয়ক অনার্স-মাস্টার্স ও এম ফিল পি-এইচডি আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি দেয়া যাবে। চলমান শিক্ষা ধারায় বিক্ষিপ্ত ছাত্র রাজনীতি শিক্ষায় তেমন আশানুরূপ ফল নেই। একজন ছাত্র নিজের কোর্সের বিষয়ভিত্তিক পাঠের পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে নিজের লেখাপড়ার অধ্যায় পরিসমাপ্তিতে যথেষ্ট বিড়ম্বনায়, তাই আগামীর সফল রাষ্ট্র গঠন করতে পৃথক রাজনীতি বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বিশেষজ্ঞদের ঐক্যমত হওয়া প্রয়োজন। ব্যাচেলর অব রুলিং পার্টি (বি আর পি), ব্যাচেলর অব অপজিশন পার্টি (বি ও পি), ব্যাচেলর অব ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স (বি আই পি) ইত্যাদি নামে অনার্স ডিগ্রি হতে পারে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হানাহানি, রক্তপাতের সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে দ্রুতই আদর্শবান, দক্ষ, বিচক্ষণ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা বেগবান হবে।
লেখক: অধ্যক্ষ, আলাউদ্দিন আহমেদ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, কুষ্টিয়া।
মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/১৯/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.