এইমাত্র পাওয়া

৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতেও কমপক্ষে ৭০ হাজার পদ শূন্য থাকবে!

ঢাকাঃ এনটিআরসিএ-র নিবন্ধিত এক ঝাঁক অনার্স-মাস্টার্স করা তরুণ-তরুণী নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে ‘নিবন্ধন সনদ’ অর্জন করেছে। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে গঠিত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) যোগ্যতার সনদ প্রদান করা সত্ত্বেও শিক্ষক নিয়োগ ক্ষমতা ছিল ম্যানেজিং কমিটির হাতে। ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে, ২০১৫ সালে এনটিআরসিএ-কে নিয়োগ সুপারিশ অনুমতি দেয় মন্ত্রণালয়। স্বাভাবিকভাবে পরের দিন থেকে এনটিআরসিএ নিয়োগ দেবেন। হাইকোর্টের নির্দেশে উত্তীর্ণদের সম্মিলিত তালিকা প্রকাশ করা হয়। পদ্ধতিগত পরিবর্তন হলে মূল্যায়নের সবকিছুই ওলটপালট হয়ে যায়। তাই সম্মিলিত তালিকা করায় কোনো কোনো ব্যাচ লাভবান হয়, আবার কোনো কোনো ব্যাচের একেবারে বিনা কারণে সর্বনাশ হয়ে যায়। নম্বরভিত্তিক তালিকা করার কোনো পূর্ব ঘোষণা ছিল না, ফলে পূর্বে যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১-১২তমদের একই তালিতায় অন্তর্ভুক্ত করায় তাদের নব্বই ভাগেরই অবস্থান থাকে তালিকার পিছনের দিকে। স্বাভাবিকভাবেই সবার জন্য নিয়োগ সুপারিশের কোনো সুন্দর বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি প্রয়োগের মনমানসিকতা না থাকলে ১-১২তমরা নিয়োগ বঞ্চিত থেকে যাবে। হয়েছেও ঠিক তাই।

গণবিজ্ঞপ্তি নামক প্রহসনে বারবার পদ ফাঁকা থেকে যাচ্ছে আর তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম শিক্ষক সংকট। ১-১২তমদের নিয়োগ সুপারিশ থেকে দূরে রেখে শুধু ১৬তম ও ১৭তম ব্যাচে উত্তীর্ণদের নিয়ে নতুন করে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে এনটিআরসিএ। ১৬তম ব্যাচে উত্তীর্ণ সাড়ে ১৮ হাজারের বেশির ভাগ ইতিমধ্যে চতুর্থ সার্কেলে সুপারিশপ্রাপ্ত, ১৭তম ২৩ হাজার নতুন উত্তীর্ণ। তাহলে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে নিবন্ধিত নিয়োগ বঞ্চিত চাকরি প্রত্যাশী সর্বোচ্চ হবে ত্রিশ হাজার। অথচ শূন্য পদ লক্ষাধিক। এভাবেই প্রতি গণবিজ্ঞপ্তিতে বিশাল নিয়োগের সংবাদ প্রচার হয়। এনটিআরিসিএ-র অনিয়ম সামনে আসে, কেউ কেউ আইনি ব্যবস্থা নেন। নিয়োগ প্রক্রিয়া স্টে হয়ে যায়, সুধী সমাজ পরামর্শ দেন—ভুক্তভোগীর পদটি সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হোক। এভাবেই চলছে।

১২.০৬.২০১৮ তারিখের আগে যারা (১-১২তম) নিবন্ধন সনদ লাভ করেছে তাদের ক্ষেত্রে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৩৯০০/২০১৯ রায় অনুযায়ী বয়সসীমা শিথিলযোগ্য। তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি উল্লেখ করে এনটিআরসিএ আবেদন গ্রহণ করেন। এনটিআরসিএ-র করা রিভিউ খারিজ হয়েছে। সুতরাং আইনত ১-১২তমদের ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকার কথা না। এছাড়াও এমপিও নীতিমালা প্রবর্তন পরবর্তীদের জন্য আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলে তা পরবর্তীদের জন্য প্রযোজ্য হওয়াটাই স্বাভাবিক।

এনটিআরসিএ-র তথ্যমতে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে স্কুল-কলেজ মিলে প্রকৃত চাকরি প্রত্যাশীর সংখ্যা হিসেবে আবেদন পড়ে মাত্র ৮১ হাজার। শূন্য (এমপিওভুক্ত অপেক্ষমাণ) পদ সারা বাংলাদেশে লক্ষাধিক। সরকার শিক্ষক সংকট দূরীকরণে বছরে চারবার শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এনটিআরসিএ’র হাতে পর্যাপ্ত শিক্ষকও আছে, তবে কেন সনদ বাতিলের মতো হটকারি সিদ্ধান্ত? আইনি বাধ্যবাধকতা বা সংঘর্ষিক প্রার্থীদের ক্ষেত্রে আইনিভাবেই সমাধান করতে হবে।

তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ফাঁকা ৪০ হাজার পদ (ইনডেক্সধারীদের সুপারিশকৃত ২২ হাজারসহ) অথবা চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ফাঁকা থাকা সেই একই ৪০ হাজার পদ এখনো ফাঁকা। ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতেও কমপক্ষে ৭০ হাজার পদ শূন্য থাকবে। ১-১২তম ২০ থেকে ২২ হাজার নিয়োগ বঞ্চিতদের ভাগ্য ফেরানো এখন একটু সুনজরের অপেক্ষামাত্র। পদ শূন্য রেখে ১-১২তমদের নিয়োগ বঞ্চিত করে বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় গুণগত ও মানসম্মত শিক্ষায় ব্যাঘাত সৃষ্টি এবং কারিকুলাম বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

লেখকঃ আমির আসহাব

মতামত ও সাক্ষাৎকার কলামে প্রকাশিত নিবন্ধ লেখকের নিজস্ব। শিক্ষাবার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে মতামত ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক ও আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের;- শিক্ষাবার্তা কর্তৃপক্ষের নয়।”

শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০৬/০৪/২০২৪


Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম

Subscribe to get the latest posts sent to your email.