অমিতা বর্দ্ধনঃ শিক্ষাদান মানুষের পরম সেবা। কারণ একজন শিক্ষক মানুষের অন্ধকার দূরীভূত করে ‘আলো দান’ করেন। শিক্ষা দানই শ্রেষ্ঠ দান। শিক্ষকদের বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর।
কিন্তু কালের প্রবাহে তা আজ অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। আর তাই কবি আবুল কালাম বলেছেন- ‘জীবন ও সময় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। জীবন শেখায় সময়কে ভালোভাবে ব্যবহার করতে আর সময় শেখায় জীবনের মূল্য দিতে। আর তাই আজকাল দেখা যাচ্ছে কিছু কিছু শিক্ষক পেশায় অবজ্ঞা করে ব্যবসায় মনোযোগ দিচ্ছেন প্রাধান্য দিচ্ছেন। একজন শিক্ষক যখন ক্লাস নিচ্ছেন, তখন তার মনোযোগ থাকে ব্যবসায়। কারণ টাকার মায়া সব কিছুর ঊর্ধ্বে। ফলে ক্লাসে শিক্ষাদান ব্যাহত হচ্ছে। তাই তো অনেক দুর্ঘটনাও ঘটছে, যা অনাকাক্সিক্ষত অনৈতিক। শিক্ষার্থীরা নৈতিক শিক্ষা পাচ্ছে না! কারণ কিছু শিক্ষক সময় বেঁধে ক্লাস নেন যেন কোনো রকমে সময় ব্যয় করা। ফলে কোচিং সেন্টার গজিয়েছে ব্যাঙের ছাতার মতো। কিছুদিন হলো সংবাদে ও পেপারে পড়েছি একজন শিক্ষক মৌখিক পরীক্ষার সময় ছাত্রের পায়ে গুলি করেছেন, অন্যদিকে কিছু ছাত্র শিক্ষকের বুকে গুলি-পিস্তল ধরেছে! যাহা অনাকাক্সিক্ষত ও উন্নত জাতি হিসেবে অত্যন্ত লজ্জাজনক। এই যখন ছাত্র-শিক্ষক অবস্থা, তখন আমার ছেলেবেলার জীবনের প্রিয় শিক্ষকদের অমূল্য অবদান উপস্থাপন করছি
আমার ছেলেবেলার প্রাইমারি শিক্ষা জীবন কেটেছে গ্রামে। মনে পড়ে শিক্ষকের নাম ছিল ‘অশ্বিনী সরকার’, খুব কড়া শাসন ছিল। আমাদের সময়ে পাঠ্যবই ছিল ‘বাল্য শিক্ষা’, সেখানে খুব কঠিন বানান ছিল মনে পড়ে ‘কুজ্ঝটিকা’ বানানটি ১০ বার লিখিয়েছিলেন। তখন কাগজ-কলম ছিল না, শ্লেট আর বাঁশের পেন্সিল ছিল বাঁশের কাটিকে কলম আকারে বানিয়ে দোয়াতের কালিতে চুবিয়ে লিখতে হতো। এমন আরো অনেক প্রাচীন পদ্ধতি ছিল, যা আজ অবিশ্বাস্য বলে মনে হবে। বাংলা বানান ও উচ্চারণ নিয়ে ছেলেবেলায় অনেক শাস্তি পেয়েছি। দেশের মানচিত্র আঁকতে ভুল হতো বলে বেত্রাঘাত পেয়েছি। হাত লাল হয়ে দাগ পড়ে যেত এসব দেখে মা কিছুই বলতেন না বরং কেন পড়া শিখিনি সে জন্য বকা ও শাসন করেছেন। কোনো রকম প্রশ্রয় দেননি। শিক্ষককে কোনোরকম গালমন্দ করেননি, পাছে আমি বেয়াদবি শিখে নেই। মায়ের শাসন ছিল খুব কড়া। আর এখন সামান্য কারণে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করে দেয়, জুতার মালাও পরিয়ে দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীর প্রথম ও প্রধান বিদ্যালয় হচ্ছে তার পরিবার। পারিবারিক শিক্ষা সুদূর ভবিষ্যৎ জীবনের চাবিকাঠি। তাই পারিবারিক শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমার বাবা ছিলেন একজন ডাক্তার ও গ্রামের স্কুলের প্রধান শিক্ষক। যেসব গরিব ছাত্রছাত্রী বই কিনতে অসমর্থ ছিল, তাদের বই কিনে দিতেন ও বেতন ফ্রি করে দিতেন। যাহা আজ অকল্পনীয় ও অভাবনীয় বরং আজ উল্টোটা ও লক্ষ্য করা যায়!
মা-বাবার পরই আমাদের জীবনে শিক্ষকের অবস্থান সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক আমাদের জীবনে চিরকাল স্মরণীয়। তাদের সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক। তাদের আত্মত্যাগের কারণে কিছু শিক্ষক চিরকাল আমাদের প্রিয়ভাজন ও স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে বেঁচে থাকবেন আজীবন। পিতা শরীর দিয়ে জন্ম দেন আর শিক্ষক জ্ঞান চক্ষু উন্মেলিত করে আলোকিত মানুষ গড়েন।
লেখক: কবি ও লেখক, সিলেট
শিক্ষাবার্তা ডট কম/এএইচএম/০২/০৪/২০২৪
Discover more from শিক্ষাবার্তা ডট কম
Subscribe to get the latest posts sent to your email.